দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী ও চিত্রনায়িকা অঞ্জনা সুলতানা যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২৫ জুলাই ফেইসবুক লাইভে এসে কর্মী ও ভক্তদের এ খবর জানান।
অঞ্জনা বলেন “ আমি সকলের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক, আমাদের সবার প্রিয় অপু উকিল দিদির কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। সাংগঠনিক সম্পাদক নিঝুম, আমার ছোটবোন আমি তার কাছেও কৃতজ্ঞ। আর একজনের কথা না বললেই নয়, সে আমার একমাত্র আপন ছোটভাই সাজ্জাত মনি যার অনুপ্রেরণায় আমি রাজনীতিতে এসেছি।”
অঞ্জনা বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বড় হয়েছি। এবং স্বাধীনতার পরে যখন একটা ফাংশান হয়েছিলো, আমেরিকার পররাস্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার এসেছিলেন বাংলাদেশে। তখন আমার একটি নাচ ছিলো। ছোট্ট অঞ্জনা আমি। নাচের পর বঙ্গবন্ধু যখন আমাকে ডেকে নিয়ে আসলেন, তার কোলে বসালেন এবং দুটি হাত ধরে বললেন, লুক! মিস্টার কিসিঞ্জার, ডু ইউ লাইক হার ডান্স? তখন কিসিঞ্জার বললেন, ইয়েস! ভেরী নাইস। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, প্রাউড অব আওয়ার অঞ্জনা। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, যাও বাংলাদেশকে নাচে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করবা। অনেকদূর এগিয়ে যাও মা তুমি। এই কথা এখনও আমার কানে বাজে। বঙ্গবন্ধুর সেই ভরাট গলা। আমি এখনও ওনার আদর্শ বহন করে চলেছি।”
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে চান বড় পর্দায় একসময়কার এই নায়িকা। দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে তিনি এ ব্যাপারে একাধিকবার কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফেইসবুক লাইভে নিজের বক্তব্যে সে ইচ্ছাকে ইঙ্গিত করে চাঁদপুরের এ কন্যা আরও বলেন, “আর যার আদর্শে চলছি, তিনি আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আরেকজন মাননীয় মন্ত্রী (সাবেক) দীপু মনি। আর চাঁদপুরের সকল জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তারা যে ভালোবাসা আমাকে দিয়েছেন চাঁদপুরের মেয়ে হিসেবে। আপনাদের ভালোবাসায় কিন্তু আমি অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার আশা করছি। আমি অনেকদিন ধরে চিন্তা করছিলাম রাজনীতিতে আসবো।”
তিনি ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে সিনেমায় অভিনয় করছেন। দীর্ঘদিন ধরে পর্দায় সক্রিয় না হলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিয়মিতই যাতায়াত তার। সর্বশেষ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচিত হন। এছাড়া, দলীয় অনুষ্ঠানে তাকে নিয়মিত দেখা যায়। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন তিনি।
সংস্কৃতিমনা পারিবারিক আবহে ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন। নৃত্যে ছিল বিশেষ দুর্বলতা। বাবা-মা তাকে ভারতে পাঠান নৃত্য শেখাতে। সেখানে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওস্তাদজি বাবুরাজ হীরালালের অধীনে বেশ ভালোভাবেই কত্থক নৃত্য আয়ত্ব করে দেশে ফেরেন। ‘পরিণীতা’ (১৯৮৬)‘গাংচিল’ (১৯৮২) ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান অঞ্জনা। জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি দু’বার বাচসাস, নৃত্যে দু’বার শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
ঢাকাই ছবির নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। এর মধ্যে ‘অশিক্ষিত’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘আশার আলো’, ‘জিঞ্জির’, ‘আনারকলি’, ‘বিধাতা’, ‘বৌরানী’, ‘সোনার হরিণ’, ‘মানা’, ‘রামরহিমজন’, ‘সানাই’, ‘সোহাগ’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ও ‘অভিযান’ উল্লেখযোগ্য।