বহু পুরস্কার পেয়েছি, কিন্তু এটার অনুভূতি অন্যরকম: ফেরদৌসী রহমান

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫’-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। পুরস্কার পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত তিনি। তবে অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারটি নিতে পারেননি তিনি। 

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 02:25 PM
Updated : 25 July 2017, 02:52 PM

অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন গান করে। গানই তার জ্ঞান, গানই ধ্যান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রাপ্তির ঝুলিটাও বেশ সমৃদ্ধ। কোটি দর্শকের ভালোবাসার সঙ্গে ঘরভর্তি আছে পুরস্কারও। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা পেলেন এবার। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫’-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে তাকে। গতকাল (২৪ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জমকালো আয়োজনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু হলভর্তি মানুষের ভিড়েও খুঁজে পাওয়া গেল না ফেরদৌসী রহমানকে। তার পক্ষ থেকে পুরস্কার হাতে নেন পুত্রবধূ সৈয়দা সাদিয়া আমির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ফেরদৌসী রহমান। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নিচ্ছিলেন প্রস্তুতি। কিন্তু শরীর সায় দেয়নি। তিনি যেমনটা বললেন, “তিনমাস ধরে আমি অসুস্থ। আপাতত সামান্য হাঁটতে পারলেও অসম্ভব দুর্বল লাগছে। শেষ মুহূর্ত অবধি অপেক্ষায় ছিলাম। একটু বসে থাকার শক্তি পেলেই অনুষ্ঠানে যেতাম। কিন্তু কিছুতেই যেতে পারলাম না। ভীষণ খারাপ লাগছিল।”

কবে থেকে অসুস্থ হলেন? বললেন, “পহেলা বৈশাখের দিন দুয়েক আগে। বেশ ঝড়-ঝাপ্টা চলছিল কয়েক দিন। বৃষ্টিও ছিল। বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে গিয়ে গর্তে পা পড়ে। পা ভেঙে অনেকদিন বিছানায় পড়ে ছিলাম। তারপর আরো নানা রোগ বাঁধছে। চট করে সারবে না। একটু সময় লাগবে।”

জীবনের সেরা পুরস্কারটা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিতে না পারলেও ‘মুহূর্ত’টা কিছুতেই মিস করেননি। টিভিতে বসেই উপভোগ করেছেন জীবনের সেরা মুহূর্তটা। কেমন লাগছিল তখন? “ভালো লাগছে। তবে এই পুরস্কারের একটা বিশেষত্ব আছে। কারণ সিনেমার গানে অবদানের জন্য এই পুরস্কারটা দেয়া হয়েছে। এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের। আগে বহু পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু এটার অনুভূতি অন্যরকম।”

এই অর্জন তার কাজের দায়বদ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে বললেন, “আমার ক্যারিয়ার তো শেষপ্রান্তে। সে হিসেবে হয়তো আগের মতো কাজ করতে পারবো না। কিন্তু এখন যারা কাজ করছে তাদের সাজেশন দিতে পারি। সংগীত পরিচালকদের উৎসাহিত করতে পারি। যতদিন শ্বাস নিবো ততদিন গানের সঙ্গেই থাকব।”

আদৌ কবে সুস্থ হবেন সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। চলছে ইঞ্জেকশন আর নিয়মিত ওষুধ সেবন। তবে আশা করছেন সুস্থ হয়ে আবারো ফিরবেন কাজে। বিটিভিতে তার দর্শকনন্দিত অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’র রেকর্ডিং বন্ধ ছিল শেষ তিনমাস। অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং শুরু করবেন। পাশাপাশি আত্মজীবনী লেখার কাজেও হাত দিয়েছিলেন বেশ আগে। সেই কাজটাও শেষ করতে চান।

১৯৪১ সালের ২৮ জুন কুচবিহারের পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নেন এই গুণী শিল্পী। পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদের কন্যা তিনি।  বাবার কাছেই তার সংগীতের হাতেখড়ি । ১৯৪৭ সালে মাত্র ৬ বছর বয়সে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে তার কন্ঠে গাওয়া গান প্রচার হয়। ১৯৬৪ সালে ঢাকা টেলিভিশন চালুর প্রথম দিনে গান পরিবেশন করে তিনি। বাংলা গান ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে। ভারত, মিয়ানমার, ইরাক, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুগোস্লাভিয়া, যুক্তরাজ্যসহ আরো অনেক দেশেই শো করেছেন।

১৯৭৭ সালে সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, চুরুলিয়া নজরুল স্বর্ণপদকসহ আরো অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।