‘নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করছি, রোকেয়া প্রাচীর জন্য নয়’

আলাপচারিতায় অভিনয় থেকে দূরে সরে যাওয়া নতুন এক রোকেয়া প্রাচীর সন্ধানে গ্লিটজ।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 01:30 PM
Updated : 25 July 2017, 02:03 PM

অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আমন্ত্রিত হয়েছেন বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্রের আসর কান উৎসবে। গণমানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অংগসংগঠন  মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবেও শোনা যাচ্ছে তার নাম। নতুন এক রোকেয়া প্রাচীর সন্ধানে গ্লিটজ।

গ্লিটজ: অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর রাজনৈতিক পরিচয় ও কর্মতৎপরতা সবাই জানতে পারছে ধীরে ধীরে। এর শুরুটা কখন?

রোকেয়া প্রাচী:
আমি বড় হয়েছি পল্লবীতে। দাদার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে। আমাদের বাড়িতে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা, আমার চাচা। বলা যায় যে, আমাদের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি হিসেবেই পরিচিত ছিল। তিনজন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে আমার বাবা বেঁচে নেই। দু’জন চাচা বেঁচে আছেন। ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু  মারা যান সেসময় আমার বাবা শ্রমিক লীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কাজেই, আমাদের বাড়িতে সবসময়ই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলতো। রাজনৈতিক আবহেই আমি বড় হয়েছি। সেই সময় আমাদের বাড়িতে ইলেকশনের যে মিটিংগুলো হতো, আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণার কাজগুলো কিন্তু আমাদের বাড়িতেই হতো। আমার মনে আছে, তখন ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করতেন মিরপুরে-এখন যেখানে ইলিয়াস মোল্লা এমপি আছেন। সেখানে তার বিপরীতে দাঁড়াতেন এসএ খালেক। ওই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের জায়গা ছিলো আমাদের বাড়ির গ্যারেজ। এইসব দেখে বেড়ে ওঠা আমার। সেই বেড়ে ওঠার কিন্তু অন্তর্গত একটা প্রভাব থাকে।

গ্লিটজ: বলতে চাইছেন শৈশবের সেই রাজনৈতিক আবহই আপনাকে মানুষের কথা ভাবিয়েছে?

রোকেয়া প্রাচী: হ্যাঁ, হয়তো সে কারণেই আমি অভিনয় জীবনের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডগুলো করেছি- আমার শ্রমজীবি মানুষের সাথে কাজ করা, অ্যাসাইলামে বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা, মহিলাদের নিয়ে কাজ করা। তা না হলে আমি যদি হিসেব মেলাই, যদি শুধুই একজন সেলিব্রেটি হই, আমি কেন এই অঙ্গনে কাজ করেছি? আমিতো একটা এনজিও দিতে পারতাম, বা অন্য একটা কাজ করতে পারতাম। সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আমি যাইনি। আমি মোহাম্মদপুর বস্তিতে কাজ করেছি, কুড়িল বস্তিতে কাজ করেছি, শ্রমজীবি মানুষদের নিয়ে কাজ করেছি, হিজড়াদের নিয়ে কাজ করেছি, হরিজন সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করেছি। এখন আমি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচারের দাবিতে কাজ করছি। এই বিচারের দাবিতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে আমি কাজ করেছি, এরশাদ বিরোধী মুভমেন্টে কাজ করেছি, গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সমস্ত বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। তখন আমার বয়স কম ছিলো কিন্তু কাজ করেছি। এই কাজগুলো আসলে কেন করা? ওই আবহটা যখন থাকে একজন শিশুর মাথায়, সেটাইতো তাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে দেয়। অভিনয়জীবনে আমার ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আমি সবসময় সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজগুলোর সাথে জড়িত থেকেছি। এভাবেইতো আমার আসা। কোনোকিছুইতো রাতারাতি হয়ে যায়নি।

গ্লিটজ: অভিনেত্রী হিসেবেও যদি আপনার সেরা কাজগুলো বিবেচনা করি আমরা, সেখানেও কিন্তু দেখতে পাই খুব সামাজিক দায়বদ্ধ চরিত্রেই কাজ করেছেন..

রোকেয়া প্রাচী: অভিনেত্রী হিসেবে আমি সবসময় চেয়েছি, এমন জায়গায় নিজেকে তৈরি করা যা আসলে একজন অভিনেত্রীকে একটা অবস্থান তৈরি করে দেয়। আমি সবকাজ কখনোই করিনি। সব নাটকে অভিনয় করিনি, সব সিনেমায় আমি অভিনয় করিনি। চেষ্টা করেছি সেই চরিত্রগুলোই করার, যেগুলো আসলে মানুষের কথা বলে, জীবনের কথা বলে, রাজনীতির কথা বলে। একটা ধারার মধ্যদিয়ে আসলে আমার অভিনেত্রী ক্যারিয়ারটা তৈরি হওয়া। সেই জায়গাগুলো মিলিয়ে আসলে দেখা গেছে যে, অভিনেত্রী হিসেবেও কিন্তু আমি রাজনৈতিক সচেতন অবস্থান নিয়েই কাজ করেছি। এইসবকিছু মিলিয়ে আজকে এতবছর পর মনে হয়েছে, আমার বয়সের চেয়ে আমার কাজের বয়স অনেক বেশি। তিরিশ বছর হয়ে গেছে আমার কাজের-সেদিন হিসেবে করলাম।

গ্লিটজ: তবু যদি জানতে চাই, সংস্কৃতিকর্মী পরিচয়ের বাইরে প্রত্যক্ষ্যভাবে কবে থেকে রাজনীতে সক্রিয় হলেন আপনি?

রোকেয়া প্রাচী:
আমিতো আওয়ামী লীগ পরিবার থেকেই বেড়ে উঠেছি। আমার বাড়িতে যখন মিছিল মিটিং হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আহত হয়ে বাসায় আসছে, আমরা তাদের সেবা করছি, খাওয়াচ্ছি, যখন নির্বাচন হচ্ছে তখন আমার বাড়ির লোকজনই এজেন্ট হিসেবে থাকছে সেখানে। আমি কি তাহলে আওয়ামী লীগার নই? আমার বাবা মারাই গেছেন বিএনপির কর্মীদের হাতে আঘাত পেয়ে। এই যে প্রেক্ষাপটগুলো, সেই শিশুটিতো আসলে সদস্য হয়ে আওয়ামী লীগ শেখেনি। আমাদের এখানে যে আওয়ামী লীগের নেতাদের সন্তানেরা আছে তারাতো সদস্য হয়ে বেড়ে উঠছে না। বেড়ে ওঠাটাই আওয়ামীলীগার হয়ে। আমারও ওভাবেই শুরু। এরকম করেতো আর হয় না যে আমি আজকে একটা টিকিট কিনলাম কালকেই আওয়ামীলীগার হয়ে গেলাম। ব্যাপারটা আসলে এত সোজাও না। গণজাগরণমঞ্চের সময় আসলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে যে আন্দোলনটা ঘনিভূত হয়ে ওঠে তখন আসলে বলা যায় যে, আমি অনেকবেশি ফ্রন্টলাইনে এসে কাজ করেছি। যদি বলা হয় অভিনেত্রী চরিত্রের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ভূমিকা পালন আসলে সেই সময়েই। তবে এটা কোনো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, জাহানারা ইমামের আন্দোলন বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয়তার ধারাবাহিকতা থেকেই এখানে আসা। এটা আমার পথ চলার ইতিহাস।

গ্লিটজ: তো, একদিকে অভিনয় অন্যদিকে সামাজিক-রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে গিয়ে কখনো বাধাগ্রস্ত হয়েছেন ?

রোকেয়া প্রাচী: ২০০১ এর নির্বাচনের আগে, আমি কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই শিল্পকলা একাডেমিতে অ্যাসিন্টেন্ট ডিরেক্টর পদে চাকরিতে যুক্ত হই। সেই সময় আমি যখন জয়েন করি আমি কিন্তু তখন আওয়ামীলীগারই। হয়তো মিছিল মিটিং করিনি। পরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া আসলেন। আমি চাকরি করতে পারলাম না। যেহেতু আমি আওয়ামীলীগার, সেহেতু আমাকে চাকরি থেকে রিজাইন করতে বাধ্য করা হয়। সেজন্যই বলি, আমি আওয়ামীলীগার কিনা সে প্রমান তো আমি আসলে আজকে দিতে পারবো না।

গ্লিটজ: আমিও আসলে সেটা জানতে চাইছি না..

রোকেয়া প্রাচী: আমি বলছি যে, আমাদের শিল্পীদের অনেকেই আছেন যারা, আওয়ামী লীগে অনেক বেশি কাজ করেন। কিন্তু হয়তো সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। আমাকে কিন্তু চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো। আমি আওয়ামী লীগের কর্মী তাই এমন সিচুয়েশন তৈরি করা হয়েছিলো পদে পদে, যাতে আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম, মান সম্মান রক্ষার্থে। তাছাড়া, ২০১২ সালের পর থেকে আমি এত হুমকি পেয়েছি যে এখন আর আমি এসব গায়ে মাখিনা। আমি ভয় পাই না। আমার কোনো আশঙ্কা নেই। একদিনতো মারা যাবোই। আমি যদি দেশের কাজ করতে গিয়ে মারা যাই, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। এখনও আমার ফোনে কয়েকটা এসএমএস আছে যাতে আমাকে হুমকি পাঠানো হয়েছে।

গ্লিটজ: শিল্পীদের সরাসরি রাজনৈতিক ছাতার নিচে কাজ করার দিকটিকে অনেকেই সহজভাবে নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে কি বলবেন?

রোকেয়া প্রাচী:
আমি এটা খুব পজেটিভলি দেখি। সারা পৃথিবীতেই এটা প্রচলিত আছে। শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা রাজনীতিকে ভালোবাসেন, দেশের জন্য কাজ করেন কিন্তু ওইভাবে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেকে সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত রাখার। তো, কাজ করতে করতে মনে হয়েছে এবার আসলে একটু দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। কেননা রোকেয়া প্রাচী ইনডিভিজুয়ালি যতোটা না কাজ করতে পারে তার চেয়ে রাজনৈতিক ছাতার নিচে অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি যেহেতু কাজ করছিই, এবং দলের আদর্শেও বিশ্বাসী সেহেতু এতে আমি দোষের কিছু দেখি না।

গ্লিটজ: মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদ পেলেন। এখন আপনার পরিকল্পনা কি?

রোকেয়া প্রাচী: আমার আসলে পরিকল্পনা আলাদা করে কিছু নেই। খুবই সাদামাটা বিষয়, আমি আগেও কাজ করেছি। এখন আরও বেশি কাজ করতে চাই দেশের জন্য, আমার এলাকার জন্য, মানুষের জন্য। যে সুযোগটা ঘটেছে আমি তা সঙ্গে নিয়ে আরও বেশি দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করবো। দেশের পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই থাকুক, আমার ওপর যে দায়িত্ব, আমি তা পালন করে যাবো। আমার আদর্শের কোনো হেরফের হবে না। আমি চেষ্টা করবো সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের এক করে সেই আদর্শ বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে। সংস্কৃতিকর্মীরা যদি এক হয়ে কাজ করতে পারেন মিলেমিশে তাহলে এর চেয়ে বড় বিপ্লব কিছু হতে পারে না। সরকার অনেক সংস্কৃতিবান্ধব।

গ্লিটজ: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলেছিলেন নেত্রীর নির্দেশে এলাকায় কাজ করছেন। এর পেছনে আপনার নির্বাচনী কোনো উদ্দেশ্য আছে কি?

রোকেয়া প্রাচী: নেত্রী আমাদের সকলকে বলেছেন যার যার এলাকায় গিয়ে কাজ করতে। তৃণমূলকে প্রস্তুত করতে। এটা সংস্কৃতিকর্মীদের দায়িত্ব, রাজনৈতিক কর্মীদের দায়িত্ব। আমি একজন রাজনীতি সচেতন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কাজ করি। এবার আমার মনে হয়েছে আমি আমার এলাকায় ফোকাস করবো। আমি কিন্তু আমার এলাকায় কোনো পলিটিক্যাল শো ডাউন করিনি। আমি আমার এলাকায় যতো স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা আছে সেখানকার বাচ্চাদেরকে আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের জাতীয় সংগীতকে শুদ্ধ করে শেখানো, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসকে কী করে না বলতে হয়, মাদককে কী করে না বলতে হয় এরকম একটি কার্যক্রম শুরু করেছি। এ কার্যক্রমটা কিন্তু অন্যান্য জেলাতেও শুরু হয়েছে। এর নাম ‘স্বপ্ন সাজাই’-স্লোগান হচ্ছে সত্য বলি, মিলেমিশে দেশের জন্য কাজ করি। এ কাজটি আমি শুধু আমার এলাকায় নয়, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে করবো। এর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া পাওয়া বা উদ্দেশ্য জড়িত নেই।

গ্লিটজ: আগামীতে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন..

রোকেয়া প্রাচী: অবশ্যই সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী। আরও বেশি কাজ করতে চাই, আরও বেশি উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে চাই। সে স্বপ্ন নিয়ে আমি সংসদ নির্বাচন করতে চাই। এ কথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। আমি দায়িত্ব নিয়েই কাজটা করতে চাই। কিন্তু সংসদ নির্বাচন তো ডেসপারেট কোনো লোভ লালসার জায়গা নয়। এটা হচ্ছে আমার আকাঙ্খার জায়গা। যদি আমাকে নেত্রী মনে করেন, আমি কাজের জন্য যোগ্য, যদি আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়, আমি আমৃত্যু তা পালন করবো সততার সাথে। যদি মনে করেন, আমি যোগ্য নই, তাতে আমার কোনো অসুবিধা নেই। এই যে আমি এলাকায় কাজ করছি, মাঠ প্রস্তুত করছি। আমার মাঠে যদি অন্য কাউকে নমিনেশন দেয়া হয়, আমি তার জন্যই কাজ করবো। আমি এখন নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করছি। রোকেয়া প্রাচীর জন্য নয়।

গ্লিটজ: আপনিতো অভিনয়ে, নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। বছর দেড়েক হলো সেসব থেমে আছে। সেগুলো নিয়ে কি ভাবছেন?

রোকেয়া প্রাচী:
আমার হাতে যে কাজগুলো ছিলো, সেসব কাজগুলো ডেট পেছাতে পেছাতে পরে আর করা হয়নি। হাতে দু’তিনটা ফিল্মের কাজ আছে। সেগুলো আমি করতে পারবো কিনা জানি না। কিছু কিছু কাজ কখনো কখনো ছেড়ে দিতে হয়। ব্যক্তি রোকেয়া প্রাচী হয়তো আরও তিনটা ফিল্মে কাজ করলে তিনটা পুরস্কার পাবে, ক্যারিয়ারে আরেকটু প্লাস হবে। কিন্তু ব্যক্তি রোকেয়া প্রাচী যদি ছবি না করে দেশের জন্য কাজ করে তাহলে হয়তো সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে আমি হয়তো আরও একশটা রোকেয়া প্রাচী তৈরি করতে পারবো যারা সমাজের জন্য কাজ করবে, দেশের জন্য কাজ করবে। আমি যখন স্কুলে যাই বাচ্চারা যখন জিগ্যেস করে-আবার কবে আসবেন? যখন এলাকা থেকে ফিরি তখন এলাকার মানুষ হাত ধরে জিগ্যেস করে, কবে আসবেন? তখন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর চেয়েও কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমি যখন বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করি, সেটা আমার জন্য এখন অনেক আনন্দের। যখন ভাবি দশবছর পরও তাদের মাথায় কথাগুলো থাকবে এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। ফলে খুব বেশি  অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া আর হবে না। আমি মানুষটাই এমন, যখন যেটা করি সেটা হান্ড্রেড পারসেন্ট করি। একটা দুটো ফিল্ম হয়তো করবো, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর একটা ফিল্মের ব্যাপারে আলাপ করা আছে। ওটা করবো। আরেকটা আছে শর্টফিল্ম। ওটা একটু স্যোসাল ওয়ার্ক বেজড। এরকম কাজ হয়তো করবো মাঝে মাঝে টুকটাক।

গ্লিটজ: তাহলে নতুন রোকেয়া প্রাচীকে দেখতে যাচ্ছে মানুষ?

রোকেয়া প্রাচী: আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার স্বপ্ন যে খুব বড় তা নয়। পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চাই। সে কাজ করবার পেছনের যে আদর্শ তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের যে কথা আমরা বলি, তা সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে পৌঁছে দেয়া। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে এ স্বপ্নটাই আমি দেখতে চাই। সেটা এখন একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে নেত্রী আমাদের যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা যদি দেশের কথা ভাবি, নিজের কথা না ভেবে, তাহলেই আমি মনে করি যে সতেরো কোটি মানুষের জন্য কাজ করা হবে। ওই যে বললাম, অভিনয় ছেড়ে দিচ্ছি, কাজটা করতে চাই, নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে চাই-এটাই এখন স্বপ্ন।