অভিনেতা অনুপম খেরের টিভি অনুষ্ঠান ‘দ্য অনুপম খের শো-কুছ ভি হো সাকতা হ্যায়’র এক পর্বের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসে জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছিলেন তিনি। সেখানেই জানান, ক্লাস নাইনে থাকার সময় ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-এ অভিনয় করে এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ জন্মে তার।
“আমি ছিলাম ভীষণ লাজুক। পড়াশোনাতেও ছিলাম খুবই খারাপ। স্কুলে একেবারে পেছনের দিকের ছাত্র ছিলাম আমি। ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্স- এসব কিছুই আমার মাথায় ঢুকতো না। আমার এক ভাই অনেক বড় বিদ্বান, আরেক ভাই বড় খেলোয়াড়; কিন্তু আমি কোনোদিকেই ভালো ছিলাম না। আর তাই আত্মবিশ্বাসটাও ছিল শূন্যের কোঠায়,” কৈশরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন নাসিরুদ্দিন শাহ ।
তিনি বলতে থাকেন, “কিন্তু আমিও যে আসলে কিছু করতে পারি, সেটা আমি বুঝতে পারলাম ক্লাস নাইনে শেক্সপিয়ারের নাটক ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-এ অভিনয় করতে গিয়ে। আর সঙ্গে সঙ্গেই আমি থিয়েটারের প্রেমে পড়ে গেলাম! এজন্যই বলি, আমি থিয়েটারের কাছে খুব ঋণী।”
জীবনের প্রথম নাটক, অথচ পরিবারের কাউকে নাকি বলেননি নাসিরুদ্দিন শাহ ।
“বাড়িতে কাউকে কিচ্ছু বলিনি। পাছে, আমার অভিনয়টাই বন্ধ করে দেয়! এমনিতেই লেখাপড়া পারিনা, তার উপর থিয়েটার! আমার বাবা কোনোদিন আমার অভিনীত কোনো নাটক দেখেননি! এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার কিছুটা দুঃখ রয়েছে,” বলেন তিনি।
তবে নাসিরুদ্দিন শাহ’র প্রথম সিনেমা ‘নিশান্থ’ দেখেছিলেন তার বাবা।
ঐদিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, “আমার একটা সিনেমাই দেখেছেন তিনি, ‘নিশান্থ’। সিনেমা শেষে বলেছিলেন, ‘খুশি হয়েছি, ছবি করতে নেমে তুমি নাম পাল্টাওনি!”
“আমি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছি তখন মাত্র। একজন আমাকে খোঁজ দিল দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’র। সেখানে নাকি ছেলে-ছোকরাদের অভিনয় শেখানো হয়। আবার ২০০ রুপির মাসিক ভাতাও আছে! অভিনয় করে পয়সা উপার্জন! আমি ভাবলাম, এ তো স্বর্গের সন্ধান পেয়ে গেলাম,” বলেন তিনি।
এখানেই তার পরিচয় ঘটে প্রয়াত অভিনেতা ও খুব কাছের বন্ধু ওম পুরির সঙ্গে।
তিনি বলেন, “এনএসডিতে এসে ওমের সঙ্গে দেখা হলো। পাটিয়ালার নিতান্ত সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলে। কিন্তু ওখানে কাটানো তিন বছরের শেষে একেবারেই নিজেকে বদলে ফেললো সে! পড়াশোনা শেষে তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস- সবকিছুতেই বিরাট এক পরবর্তন দেখেছিলাম আমি।”
১৯৪৯ সালে ভারতের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া নাসিরুদ্দিন শাহ ভারতের বিকল্প ও বাণিজ্যিক- দুই ধারার সিনেমাতেই নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। সিনেমার পাশাপাশি মঞ্চ নাটকেও দারুণ সক্রিয় এই তারকা ভূষিত হয়েছেন ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব পদ্মবিভূষণে। তিনবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই অভিনেতার স্ত্রী রত্না পাঠক শাহ, দুই পুত্র ইমাদ ও ভিভানে এবং কন্যা হেবা শাহও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত।