যৌথপ্রযোজনাকে সবসময় আমরা স্বাগত জানাই:ফারুক

চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের আন্দোলনের মুখে যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ আপাতত স্থগিত করেছে সরকার। নতুন নীতিমালা হওয়ার আগ পর্যন্ত যৌথপ্রযোজনার সিনেমা  নির্মাণ করা যাবে না বলে জানিয়েছে তথ্যমন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে গ্লিটজের মুখোমুখি হয়েছেন চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতা চিত্রনায়ক ফারুক।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2017, 12:26 PM
Updated : 12 July 2017, 12:26 PM

গ্লিটজ: যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত কী দেখছেন?

ফারুক: যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্র স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। আপাতত ছবি নির্মাণ স্থগিত করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা করা হবে। নতুন প্রিভিউ কমিটি গঠন করা হবে। এরপর থেকে যৌথপ্রযোজনার সিনেমা বানাতে গেলে প্রিভিউ কমিটিতে স্ক্রিপ্টটা দেখিয়ে নিতে হবে। অনেকে ভাবছে আমরা যৌথপ্রযোজনার বিপক্ষে। আসলে আমরা অন্যায়ের বিপক্ষে। যৌথপ্রযোজনাকে সবসময় আমরা স্বাগত জানাই। যৌথপ্রযোজনা করলে আমরা অবশ্যই উন্নতি করতে পারব। কারণ কলকাতা ও আমাদের ভাষা এক। কিন্তু দুই দেশের জাতির পিতা আলাদা, তাদের আমাদের পুলিশের ড্রেসও আলাদা। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে গল্পের কাঠামোটা রাখতে পারলে ভালো।

গ্লিটজ: যৌথপ্রযোজনার নতুন নীতিমালা হচ্ছে । নীতিমালা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন?

ফারুক: যৌথ প্রযোজনার কিছু বিষয় খুব সিরিয়াসলি দেখতে হবে। যেমন-ফিফটি ফিফটি। আবার হাতের সব আঙুল সমান না। এটাও কিন্তু আমি মানি। কিন্তু পাঁচ আঙুলের দোহাই দিয়ে আঠারো আঙুলের কাজ করবেন এটা কিন্তু হবে না।

গ্লিটজ: জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রশ্ন তুলেছে, হিরোও কী দুই দেশ থেকেই দুইটা নিতে হবে? তাহলে তো বাজেট বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

ফারুক: হিরো তো দুই দেশ থেকে নিতে হবে না। এক দেশ থেকে হিরো নাও। আরেক দেশ থেকে হিরোইন। এক দেশ থেকে গল্পের প্রয়োজনে যদি হিরো-হিরোইন-দু’জনকেই নিতে হয় তাতেও  আপত্তি নেই। তাহলে বাকি আর্টিস্টগুলো অন্যদেশ থেকে নাও। কিন্তু সিনেমা নিয়ে লুকোচুরি করা যাবে না। ভিনদেশি পুলিশের ড্রেস পরে বাংলাদেশের কথা বললে এটা কেমন দেখায়? মনে হয় না দেশকে বিক্রি করে দেয়া? এমনটা নিয়মিত চলতে থাকলে আমরা যাবো কোথায়? আমাদের ফিল্ম যাবে কোথায়?

গ্লিটজ: দুই দেশ থেকে দুই ডিরেক্টর নিতে গিয়ে বেশিরভাগ প্রযোজকের নামই ডিরেক্টর হিসেবে দেখা যায় পোস্টারে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

ফারুক: দুইজন পেশাদার পরিচালক থাকবেন। বাংলাদেশের পার্টে আমাদের ডিরেক্টর অ্যাকশন বললেন। উনিই কাট বলবেন। ভারতে সেখানকার ডিরেক্টর সবকিছুর দেখভাল করবেন। কিন্তু দু’জনের কাজে সমন্বয় থাকতে হবে। কিন্তু দেশে ডিরেক্টর হিসেবে প্রযোজকের নাম যায় এটা আমি দেখেছি। তুমি ডিরেক্টর হতে চাইলে আগে ঢাকার ছবি বানিয়ে দেখাও। তারপর যৌথপ্রযোজনার সিনেমায় ডিরেকশন দাও।

গ্লিটজ: চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের সঙ্গে জাজ মাল্টিমিডিয়ার সমঝোতার সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন?

ফারুক: আমার দরোজা জাজের জন্য সব সময়ই খোলা। তারা যখনই আমার কাছে আসবে আমি তাদের আইডিয়া দেব। তোমরাও আমাদের ভাই। তোমরা ভুল করো না। কোটি কোটি টাকা ফেলে দিবে, এটা হতে পারে না। বাজে সময়টা ভুলে এখন ভালো ছবি বানাও। কেন যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র বানাবে না? বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা প্রতিযোগিতা হোক। কথা বললাম সঠিক কিন্তু ছবিতে তা নেই-এরকম করলে তো হবে না।

গ্লিটজ: জাজের হাতে যৌথ প্রযোজনার কিছু চলচ্চিত্র আছে। সেই ছবিগুলোর ভবিষ্যত কী?

ফারুক: আমি বলতে পারতাম, রানিং ছবিগুলো বন্ধ করো। কিন্তু করিনি। কারণ ক্ষতি হলে আমাদের লোকেরই হবে। তাই দুইটা যৌথ প্রযোজনার সিনেমা চলেছে। কিন্তু এখন নতুন প্রিভিউ কমিটি হবে। তারা যদি মনে করে ছবিগুলো রিলিজ করার মতো। সিস্টেম অনুযায়ী আসতে হবে। সেন্সরবোর্ড ছাড়পত্র দিলেই ছবিগুলো মুক্তি পাবে। একটি ছবি দুইশোর বেশি হল বুক করে এককভাবে ব্যবসা করা যাবে না। সবাইকে সুযোগ দিতে হবে।

গ্লিটজ: বর্তমান প্রিভিউ কমিটি নিয়ে আপনাদের অভিযোগ কী ছিল?

ফারুক: প্রিভিউ কমিটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। যথাযথভাবে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে কাজ করতে পারেনি। আর সেন্সরবোর্ডেও অনেক সমস্যা আছে।

গ্লিটজ: কী ধরনের সমস্যা?

ফারুক: সেন্সরবোর্ডের সদস্য সবাই হতে পারে না। কিন্তু এখনকার সেন্সরবোর্ডে ‘সবাই’ সদস্য হয়ে যাচ্ছেন। প্রথমত, সাংবাদিকের কথাই যদি বলি। একজন সাংবাদিক সেন্সরবোর্ডের পদ সবসময়ের জন্য নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর পর পরিবর্তন আনা দরকার। কারণ একজনের চোখে তো দশ সিনেমা ভালো না লাগতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, সিনেমা হলের মালিক যদি সেন্সরবোর্ডর সদস্য হন তাহলে আমাদের সিনেমার গোমরটা উনি জেনে গেলেন। এটা সিনেমার জন্য ক্ষতিকর। উনারা সেন্সরবোর্ডে থাকতে পারবেন না। যে সমস্ত লোক বেইমানি করেছে, ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছে তাদেরকে রাখা যাবে না।

গ্লিটজ: চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকারি কোনো উদ্যোগ আছে কি?

ফারুক: আমরা সরকারের কাছে অনুদান চেয়েছি। তারা সম্মতি জানিয়েছে। ২৫ টি মেশিন দেবে। ৬০টি উপজেলায় নতুন সিনেমা হল বানানোর জন্য টাকা পয়সা বরাদ্দ করে ফেলেছে। নতুন সিনেমা হল হচ্ছে। সরকার এই বিষয়ে সিরিয়াস। চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হবে।

গ্লিটজ: সম্প্রতি চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের মিশা, রিয়াজ ও খসরুকে বয়কট করেছেন প্রদর্শক সমিতি। সভাপতি নওশাদ আপনাকে নিয়েও অভিযোগ করেছেন তাকে হেনস্তা করার ঘটনাটিকে আপনি নাটক বলেছেন?

ফারুক: আমি তো তার ব্যাপারে কোনো উচ্চারণই করিনি। তবে আমি যখন ঘটনাটা দেখিনি তখন এটাকে নাটকই মনে হবে। যখন আমার লোকজনের উপর দোষ দেবেন। তখন আমি কী বলবো, আমার লোকজন আপনাকে হেনস্তা করেছে? তখন তো নাটকই বলবো। আমি অনেক কথা বলতে পারি। কিন্তু বললাম না। দেশে এতো সিনেমা হল আছে সেখানে একটা মধুমিতা হল কী করবে? নওশাদ ভুলে গেছে  আমি কে? আমি বলতে চাই না। ব্যক্তিগতভাবে সে আমাকে শ্রদ্ধা করে। আমি অন্যায় বলি না,  অন্যায় চাই না। আমি ওদের বলেছি, আসেন বসি। নিজের বাড়িতে অনেক কিছুই হয়। চলচ্চিত্র পরিবারের বড় অংশে অধিকার আছে হল মালিকদের। হলগুলো সুন্দর হোক, ই-টিকিট হোক। কিন্তু তারা বসেনি।