‘যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় প্রভাব রাখার সুযোগ নেই’

যৌথ প্রযোজনার সিনেমার মুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালা ও সেন্সর বোর্ডের বাইরে সরকারের পক্ষ থেকে প্রভাব বিস্তারের কোনো ‘সুযোগ নেই’ বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2017, 09:59 AM
Updated : 29 June 2017, 09:59 AM

যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে নানা অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, “যৌথ প্রযোজনার সিনেমা মুক্তির সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় কোথায়ও সরকারে পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা বা আইনের বাইরে পা ফেলার সুযোগ নেই।”

সেন্সর সনদপ্রাপ্ত যে কোনো চলচ্চিত্রের মতোই যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তির বিষয়টি চলচ্চিত্রটির নির্মাতা/প্রযোজক, পরিবেশক, প্রদর্শকদের ‘নিজস্ব বিষয়’ বলে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র দুটি ‘নবাব’ এবং ‘বস-২’ এর বিষয়ে যৌথ প্রযোজনার নীতি যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে।”

চিত্রনাট্য কলাকুশলীর সংখ্যাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব ‘যৌথ প্রযোজনা চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রিভিউ কমিটি’ সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদন দেওয়ার পরই কেবল যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করা যায়।

চলচ্চিত্র তৈরির পর তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রিভিউ কমিটি ছাড়পত্র না দিলে নির্মাতা/প্রযোজক সনদের জন্য সেন্সর বোর্ডে জমা দিতে পারেন না।

সেন্সর বোর্ড অন্যান্য চলচ্চিত্রের মতোই সেন্সর আইন অনুযায়ী চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে পরামর্শ দেয়। সেই অনুযায়ী কাটা-ছেঁড়ার পর আবার সেন্সর বোর্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সনদ দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বস-২’র বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রদত্ত লিখিত অভিযোগটিও বিধি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সাথে সাথেই ‘যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রিভিউ কমিটি’র কাছে পাঠায়। প্রিভিউ কমিটি অভিযোগটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সর্বসম্মতিক্রমে অনাপত্তি ছাড়পত্র দেয়।

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত সিনেমা ‘নবাব’ ও ‘বস-টু’ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নীতিমালা মানছে না বলে অভিযোগ আনে চলচ্চিত্রাঙ্গনের পরিচালক-শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে গড়া ১৬টি সংগঠন।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ, চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে যৌথ প্রযোজনার ভারতীয় সিনেমা আমদানির তথা প্রতারণায় অভিযোগ এনে তাদের এফডিসিতে অবাঞ্চিতও ঘোষণা করে তারা।

১৬টি সংগঠনের পক্ষে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার অভিযোগ করেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ‘ইন্ধনে’ আব্দুল আজিজ, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদরা যৌথ প্রযোজনার সিনেমার নামে প্রতারণা করছেন। তারা ভারতীয় সিনেমা আমদানি করে দেশীয় সিনেমার বাজার নষ্ট করছেন ও দেশের শিল্পীদের পথে বসাচ্ছেন।

২০১৪ সালে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ নামে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরই যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ভঙ্গ নিয়ে সরব হয়ে উঠে চলচ্চিত্রাঙ্গনের ১৬টি সংগঠন। এতে রয়েছে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, এডিটরস গিল্ড, চলচ্চিত্র গ্রাহক সমিতি, আলোকসজ্জা, ক্যামেরাম্যান, মেকআপ আর্টিস্ট সমিতি, সহকারী উৎপাদন ব্যবস্থাপক সমিতিগুলো।

পরে জাজ মাল্টিমিডিয়া যৌথ প্রযোজনার ‘অগ্নি-২’ সিনেমাটি মুক্তি দিলে অভিযোগ উঠে, সিনেমাগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের অনুপাত সমান নয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে উঠে আসে, যৌথ প্রযোজনার সিনেমার নীতিমালা নিয়ে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত কেউ ওয়াকিবহাল নন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এফডিসির কর্তারাও নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের পক্ষে নন।

তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আবারও ফুঁসে উঠেছে চলচ্চিত্রাঙ্গন। ১৬টি সংগঠন বলছে, ঈদুল ফিতরের পর এ বিষয়ে সুরাহা না হলে তারা এফডিসিতে টানা ধর্মঘট ডাকবেন।

জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এফডিসির সমিতিগুলো এই টানাপড়েনের মধ্যে বারবার উচ্চারিত হয়েছে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নামটি।  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদকরা বারবার তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চেয়েও তা সম্ভব হয়নি।

তথ্য মন্ত্রণালয় ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা বা হীন উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য প্রদান বা গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে।