‘ছোটদের কাজকে এদেশে ছোট করেই দেখা হয়’

বাংলাদেশের যে অল্প ক’টি শিশুদের সিনেমা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেরই নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। তার সমসাময়িক তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদ যখন ছবি তৈরি করছেন কেবল বড়দের বিষয় নিয়েই, সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম মোরশেদুল ইসলাম। তার হাত ধরেই সূচিত হয়েছে দেশের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র আন্দোলন।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2017, 04:07 PM
Updated : 27 June 2017, 04:07 PM

দুইবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই নির্মাতার অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে তুলে ধরা হলো চলচ্চিত্র নিয়ে তার নিজস্ব ভাবনার কথা।

গ্লিটজ : আপনার দুই সমসাময়িক, তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেলের ছবি সবমহলে প্রশংশিত হলেও তারা কখনও শিশুদের জন্য ছবি বানাননি। যেক্ষেত্রে আপনি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এর পেছনের কারণ কী?

মোরশেদুল ইসলাম : আমার শুরুটাই হয়েছিল ছোটদের জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে। ছোটবেলায় আমি কচিকাঁচার মেলা করতাম। আমাদের পাড়ায় একটা কিশলয় কচিকাঁচার মেলা খুলেছিল। আমি বড় হয়েছি পুরান ঢাকাতে। তো সেইখানে আমি যুক্ত হয়েছিলাম। সেখান থেকে প্রতিবছর আমরা নাটক করতাম। ছোট ছোট নাটক- আমার নিজের লেখা, নিজের নির্দেশনার নাটক করতাম। একটা নাটক মঞ্চস্থ করেছিলাম, ‘আবার অরুণোদয়’। নাটকটি আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিলে মঞ্চস্থ করেছিলাম। বেশ প্রশংসাও পেয়েছিলাম।

ছোটবেলায় আমি নাটকে অভিনয়ও করতাম। স্কুলে ‘ছুটি’ নাটকে আমি ফটিক চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তো কচি-কাঁচার মেলা করার পর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে আমরা ছোটদের একটা নাটকের দল তৈরি করলাম- ঢাকা লিটল থিয়েটার। সেটাই ছিল ঢাকার একমাত্র ও প্রথম ছোটদের নিয়ে গড়া নাটকের দল, যারা বড়দের পাশাপাশি মহিলা সমিতিতেও নাটক মঞ্চস্থ করতো।

তখন মঞ্চ নাটকের অনেক দর্শক ছিল। আমরা সকাল এগারটার শো করতাম, প্রচুর দর্শক আসতো। প্রথম যে নাটকটি মঞ্চস্থ হল- রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’। সেটা আমি এবং নাজীমুল ইসলাম যৌথভাবে ডিরেকশন দিয়েছিলাম। নাটকটি অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল, প্রচুর শো হয়েছিল। এরপর আমরা আরেকটি নাটক করেছিলাম, ‘হীরক রাজার দেশে’, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা অবলম্বনে। আমিই নাট্যরূপ দিয়েছিলাম। সেটারও অনেক, প্রায় ৬০-৭০ টি শো হয়েছিল। ছোটদের একটা নাটকের এত শো  সেসময়ের তুলনায় সত্যিই বিরল ছিল। মনে আছে সত্যজিৎ রায় নিজেও হাতে লিখে একটা চিঠি দিয়েছিলেন, আমাদের অভিনন্দন জানিয়ে।

এভাবেই ছোটদের কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মানসিকতা  আমার তৈরি হয়েছিল আগে থেকেই। যখন ছবি বানাতে আসলাম, তখনও আমার মনে হয়েছিল ছোটদের জন্য কেন ছবি তৈরি হচ্ছে না? বিশেষ করে বাইরের ফেস্টিভালগুলোতে যখন যেতাম, সেখানে দেখতাম, ছোটদের সিনেমার জন্য আলাদা সেকশন থাকে। ছোটদের সেকশনে আমি ছবি দেখতে যেতাম। গিয়ে দেখতাম এত চমৎকার সব বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে; এবং বাচ্চারা কী আগ্রহ এবং আনন্দ নিয়ে ছবি দেখছে! আর আমাদের দেশের বাচ্চাদের জন্য কোনো ছবি নাই, যেগুলো তারা হলে গিয়ে দেখবে, তার নিজের ভাষার নিজের সংস্কৃতির ছবি।

সেখান থেকে আমার মধ্যে ভাবনা এলো যে আমি ছোটদের জন্য ছবি করবো। সেই ভাবনা থেকেই  ‘দীপু নাম্বার টু’র স্ক্রিপ্ট আমি তৈরি করতে শুরু করি। এবং তারপর থেকেই আমি সুযোগ পেলেই ছোটদের গল্প নিয়ে ছবি বানাতে চেষ্টা করেছি।

আমি আমার পরবর্তী যে ছবি নিয়ে কাজ করছি, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’- সেটাও শিশুদের ছবি। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের গল্প। এটি ‘দীপু নাম্বার টু’য়ের চেয়েও বেশি সাড়া ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।

গ্লিটজ: একাধিক চলচ্চিত্র সংগঠনের সঙ্গে আপনি যুক্ত। বাংলাদেশ চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা আপনি নিজেই। আপনি সেই সময়টাতে এই দেশের শিশুদের সুস্থ বিনোদনের কথা ভেবেছেন । এই ভাবনার সূত্রপাতটা কীভাবে?

মোরশেদুল ইসলাম : যখন ছোটদের জন্য ছবি তৈরি করতে শুরু করলাম, তখন তো একটা তাগিদ ছিল, সেটা তো বললামই। তো ছোটদের জন্য ছবি করতে গিয়ে যেটা আমি ফেইস করলাম, সেটা হলো, ছোটদের জন্য কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই এই দেশে। ছোটদের কাজকে আমরা সবসময় ছোট করেই দেখি। ছোটদের কাজও যে বড় হতে পারে এবং ছোটদের কাজেও যে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ সেটা আমরা বুঝি না।

তখন আমার মনে হলো, ছোটদের জন্য শুধু ছবি বানালে হবে না। ছোটদের জন্য একটা চলচ্চিত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আমাদের দেশের মানুষ বুঝতে পারে, ছোটদের ছবির প্রয়োজন আছে, ছোটদের ছবির পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন আছে। সেখান থেকেই ভাবনা আসলো ছোটদের নিয়ে একটা চলচ্চিত্র সংসদ গড়ে তুলতে হবে। সেখান থেকেই সিএফএস(চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি)-এর জন্ম।

আমার ভাবনা ছিল- ছোটদেরকে চলচ্চিত্র সংসদে ইনভল্ভ করতে পারলে যেটা হবে- ছোটরা ফিল্ম দেখবে, ফিল্ম বানাবে এবং আগামী দিনের ফিল্ম মেকারও আমরা এদের মধ্য থেকে খুঁজে পাব। পৃথিবীতে যে কত বিচিত্র বিষয় নিয়ে ছোটদের জন্য ছবি বানানো হয়- সেটা যদি ছোটরা দেখে, বড়রাও দেখে, তাহলে তারা বুঝতে পারবে পৃথিবী কোথায় আছে, আর আমরা কোথায় আছি!

আমি ভারতের দুটি ফেস্টিভালে ‘দীপু নাম্বার টু’ ও ‘দূরত্ব’ নিয়ে গিয়েছি। ওখানে হায়দ্রাবাদে একটা খুব চমৎকার ফেস্টিভাল হয়, চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার আয়োজনে। ভারতে কিন্তু এই সোসাইটি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি। সেখানে আমি দেখলাম বিরাট সিনেমা হলে ছবি দেখানো হচ্ছে, স্কুল থেকে সারি ধরে বাচ্চারা এসে ছবি দেখছে।

সিনেমার স্ক্রিনিং শেষে একটা বড় হলরুমে বাচ্চাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছে। সেখানে আমার কাছে একটা ছোট্ট বাচ্চা জানতে চাইলো, “আঙ্কেল তুমি এতো ভালো ছবি বানাও, তুমি আমাদের এখানে এসে ছবি বানাও না কেন?”

এগুলো দেখে আমার মনে হলো, আমরা কেন পারবো না? ২০০৬ সালে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরাও এরকম একটি চলচ্চিত্র সংসদ করবো। আমি আমার ওয়াইফের (মুনীরা মোরশেদ) সঙ্গে এটা শেয়ার করি। তখন চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির প্রক্রিয়াটা আমরা শুরু করি। 

আমরা ঠিক করি এর সঙ্গে তারাই যুক্ত হবেন, যারা আমাদের শিশুদের জন্যও আইডল। সেই ভাবনা থেকে মুহাম্মাদ জাফর ইকবালকে আমরা প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিই। তিনি সানন্দে রাজী হন। শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার হন আমাদের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।

২০০৮ সাল থেকে আমরা নিয়মিত ফেস্টিভাল করতে শুরু করলাম। ফেস্টিভালটা দশ বছর হয়ে গেল। আরেকটা বড় ব্যাপার, প্রথম দিকে আমি ছিলাম ফেস্টিভালের ডিরেক্টর। তারপর থেকে তো ছোটরাই তৈরি হয়ে গেল। ছোটরাই ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এখন কিন্তু অর্গানাইজার হিসেবেও ছোটরাই কাজ করছে। ছোটদের পাশাপাশি একটু ইয়াং যারা- কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে, তারাও কাজ করছে। আমার ছেলে মনন ছিল দুই বছর ফেস্টিভালের ডিরেক্টর। ছোটরাই আসলে ছোটদের ফেস্টিভাল পরিচালনা করছে।

এবং এই ফেস্টিভাল থেকেই কিন্তু আমি দেখছি, ভবিষ্যতে বেশকিছু ভালো ফিল্মমেকার আসবে। যেমন, রাজশাহীর তৌকীর নামের একটা ছেলে আছে। খুব ভালো ফিল্মমেকার। ভবিষ্যতে দেশের জন্য জন্য খুব ভালো ছবি তৈরি করতে পারবে।                                                                               

গ্লিটজ:  দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে শিক্ষিত-চলচ্চিত্র-দর্শক-শ্রেণি তৈরি করতে চেয়েছেন আপনারা। সেটা কী হয়েছে?

মোরশেদুল ইসলাম: এই চলচ্চিত্র আন্দেলনের পেছনের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে নাড়া দেওয়া, যে ছোটদের চলচ্চিত্রকে গুরুত্বের সাথে দেখ। এই ফেস্টিভালের মাধ্যমে আমরা সেটা করতে পেরেছি। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেস্টিভালে এসেছিলেন। সেখানে এসে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সরকারী অনুদানের তালিকায় প্রতিবছর একটি করে শিশুদের ছবি থাকবে। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছেন। প্রতিবছর এখন একটি করে শিশুদের ছবিকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ সেই অনুদান পেয়েছে।

গ্লিটজ:  ‘দুখাই’ আর ‘আগামী’ ছাড়া আপনার সব সিনেমাই বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্য নির্ভর। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের গল্পেই আপনি সিনেমা তৈরি করেছেন বেশি। ভবিষ্যতে বিশ্বের আর কোন সাহিত্যকর্মকে আপনি পর্দায় তুলে ধরতে চান?

মোরশেদুল ইসলাম: আমার প্রথম সিনেমা ‘আগামী’ এবং তার পরেও একটা সিনেমা বানিয়েছিলাম ‘সূচনা’ নামে। এই দুটো এবং ‘দুখাই’ আমার নিজের গল্প অবলম্বনে তৈরি। ‘দুখাই’ তৈরি হয়েছিল একটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। বাকি সবই সাহিত্য নির্ভর।

আসলে সাহিত্য নির্ভর হলে হয় কি- কাজটা এক অর্থে সহজ হয়ে যায়। আবার চ্যালেঞ্জিংও বটে। সহজ এই অর্থে  যে, সেই সাহিত্য নিয়েই আমি ছবি করবো, যেটা আমাকে টানে। সেরকম গল্প যখন আমি পাই, পড়ি- তখন আমার ভেতরে তাগিদ জাগে সেটা নিয়ে ছবি তৈরির। সাহিত্য নির্ভর ছবি করার এটা একটা আলাদা সুবিধা।

আর তাছাড়া ভালো সাহিত্য যেগুলো আছে, সেগুলোকে যদি আমরা সিনেমায় নিয়ে আসতে পারি, তাহলে দর্শকের জন্য সেটা একটা ভালো ব্যাপার। এই তাগিদ থেকেও আমি সাহিত্যনির্ভর ছবি করি। আর বাংলাদেশের সাহিত্যিক ছাড়া বাইরের কোনো সাহিত্যিকের কাজ যদি আমার কখনও খুব বেশি পছন্দ হয় তাহলে আমি সেটা নিয়ে সিনেমা করবো।

আমি কিন্তু আমার দেশের বাইরে সহজে খুব একটা যেতে চাই না। যেমন অনেকেই বাইরে থেকে কলাকুশলী নিয়ে আসে, সাউন্ডটা বাইরে থেকে করায়। আমি এটা করতে চাই না। পারতঃপক্ষে করবো না। যদি একেবারেই দেশে কোনো কাজ না করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমি বাইরে যেতে পারি। আর তা না হওয়া পর্যন্ত আমি দেশের আর্টিস্ট, দেশের টেকনিশিয়ানদের নিয়েই কাজ করতে চাই। একইভাবে দেশের সাহিত্যিকদের নিয়েই কাজ করতে চাই। 

গ্লিটজ: ‘দুখাই’-এর মতো নিজের গল্পে সিনেমা আবার বানাবেন কি?

মোরশেদুল ইসলাম : হ্যাঁ, আমি আরেকটি ছবির স্ক্রিপ্ট করছি, যেটা আমার নিজস্ব ভাবনার। এটা একেবারেই সমসাময়িক বিষয়বস্তু নিয়ে। এটাই হয়তো ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র পরে আমার পরবর্তী ছবি হবে। বাকিটা নাহয় ভবিষ্যতেই বলবো।

গ্লিটজ: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রসঙ্গ: এবারের পুরস্কারে ‘সেরা পরিচালক’-এর পুরস্কার পাওয়ার পরও আপনি ক্ষুব্ধ হয়ছেন সেরা অভিনেতা সহ আরও কিছু বিভাগের পুরস্কার নির্বাচন নিয়ে। বিশেষ করে শাকিব খানের পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে আপনি প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। আপনার কি মনে হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা দরকার?

মোরশেদুল ইসলাম : অবশ্যই। পদ্ধতিতে পরিস্কার পরিবর্তন আসা উচিৎ। আরেকটা পরিবর্তন আনা উচিৎ জুরি বোর্ডে। জুরি বোর্ডে ম্যাক্সিমাম সরকারি আমলারা থাকেন, কিছু কিছু সদস্যকে বাইরে থেকে আনা হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে যোগ্য ব্যক্তিকে আনা হয়। কিন্তু দুঃখজনক সত্যিটা হলো, জুরিবোর্ডের অনেক সদস্যই সিনেমা বোঝেন না। আরেকটা সমস্যা হয়, সেটা হলো, জুরিবোর্ডের কিছু কিছু সদস্য খুব ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেন। যেমন, কমার্শিয়াল ছবিকে একটা পুরস্কার দিতে হবে বা এরকম কিছু। অথবা কারো সাথে কারো হয়তো ঝগড়া বিবাদ আছে, তাকে সে কিছুতেই পুরস্কার দেবে না- এরকম কিছু। যেটা এবার ‘অনীল বাগচীর একদিন’-এর ক্ষেত্রে হয়েছে বলে আমি মনে করি।

আমি সরাসরি বলেওছি যে নায়ক আলমগীরের সঙ্গে গতবার একটা ঝগড়া হয়েছিল, সে হয়তো এমনভাবে নাম্বার দিয়েছে যে, পুরস্কারে নাম আসেনি। ‘অনীল বাগচীর একদিন’কে আসলে জুরিবোর্ড শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার দেয়নি, দিয়েছিল ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’কে। কিন্তু পরবর্তীকালে মন্ত্রীসভার একটা কমিটি আছে, সেখানে এই তালিকা অনুমোদনের জন্য যায়। তখন মন্ত্রীসভার কমিটি এই প্রশ্নটা তুলেছে যে, কেন ‘অনীল বাগচীর একদিন’ এই পুরস্কারটা পায়নি? কারণ তাদের অনেকেরই আগে থেকে এই ছবিটা দেখা ছিল। তখন তারা দুটো ছবিই আবার দেখেছে এবং ‘অনীল বাগচীর একদিন’কে ইনক্লুড করেছে। আগের সিনেমাটিকে তো আর বাদ দেওয়া যায়না, তাই যৌথভাবে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

এটা কেন হলো? ওই যে নায়ক আলমগীরের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল- সেটার ভিক্টিমাইজ করেছে। এই ব্যপারগুলো ঘটে।

সেজন্য আমার প্রস্তাব হচ্ছে, জুরিবোর্ডে ইয়াং ডিরেক্টরদেরকে আনা। ইয়াং ডিরেক্টরদের মধ্যে অনেকেই এখন খুব ভালো কাজ করছে। পুরানোদেরকে এখন আর দরকার নেই। চলচ্চিত্র তো অনেক এগিয়ে গেছে, চলচ্চিত্রের ভাষা এখন অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছে, সেটার সঙ্গে তারা অপরিচিত, দুঃখজনকভাবে। এটা তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি।

যেমন গতবার যেটা হয়েছিল, আমিই জুরিবোর্ডে ছিলাম। একটা ছবি নিয়ে বাকিদের সঙ্গে আমার মতের মিল হয়নি। একটু অফট্র্যাক হলেই সেখানে সমস্যা। তারা ছবির মধ্যে শুধু গল্প খোঁজেন, ড্রামা খোঁজেন। আমি তখন সরাসরিই প্রতিবাদ করেছিলাম, বলেছিলাম, আপনারা ছবি বোঝেন না। সেটা নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হয়েছিল।

জুরিবোর্ডের কাজের প্রক্রিয়া হলো ছবি দেখে দশের মধ্যে নাম্বার দেওয়া। একেকজন একেকভাবে নাম্বার দেন। একই ছবিকে কেউ হয়তো কম দেন, কেউ বেশি দেন। তবে কেউ কারো নাম্বার জানতে পারেন না। পরে যখন সেন্সর বোর্ডে নাম্বার টাঙিয়ে দেওয়া হয়, নাম্বারে গরমিল থাকলে সেটা নিয়ে ডিবেট হয়। গতবার এরকম একটা ডিবেটের মাধ্যমেই আমরা বিজয়ী নির্ধারন করেছিলাম।

এবার হয়তো সেটা হয়নি। হয়নি বলেই এরকম বিতর্কিত হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তবে প্রতিবছর এরকম বিতর্কিত হোক জাতীয় পর্যায়ের একটা পুরস্কার- সেটা তো আর মানা যায় না। তাই এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন আসা উচিৎ।