‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি, অবাঞ্ছিত শাকিব

তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেন চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা। পাশাপাশি শাকিব খান ও প্রযোজক আবদুল আজিজসহ ঐক্যজোটের নীতিবিরুদ্ধ ব্যক্তিদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এফডিসি থেকে। শুক্রবার জোটের এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2017, 03:34 PM
Updated : 23 June 2017, 03:53 PM

যৌথপ্রযোজনার প্রিভিউ কমিটির আপত্তি ও এফডিসি ভিত্তিক চলচ্চিত্রের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখেও সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত যৌথপ্রযোজনার দুই ছবি ‘নবাব’ ও ‘বস টু’। আসন্ন ঈদে মুক্তির লক্ষ্যে চলছে চলচ্চিত্র দুটির প্রচার প্রচারণা। এমন অবস্থায় শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসে চলচ্চিত্র ঐক্যজোট। বৈঠকে নেতারা তথ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। পাশাপাশি শাকিব খান ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজক আবদুল আজিজসহ ‘যৌথ প্রতারণা’র পক্ষের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের ঐক্যজোটের সংগঠনগুলো থেকে অব্যাহতি ও এফডিসিতে তাদের অবাঞ্ছিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান জোটের মুখপাত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, “বাংলা চলচ্চিত্রের আজ দু:সময়। এমন পরিস্থিতিতে একটি গোষ্ঠী দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংসের নীল নকশা বাস্তবায়নে সরাসরি তৎপর। এরই প্রতিবাদে চলচ্চিত্র শিল্পের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, রীতি নীতি অনুযায়ী রাস্তায় নামতে বাধ্য হই। সর্বশেষ তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি এবং তথ্যসচিব মহোদয় আলোচিত দুই যৌথ প্রতারণার ছবির বিষয়ে কি কি অসঙ্গতি রয়েছে এবং কি কি নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে তা জানতে চাইলে আমরা লিখিতভাবে তা জানিয়ে দেই। মূলত সবই ছিলো মন্ত্রী কর্তৃক সময়ক্ষেপনের প্রক্রিয়ামাত্র। এমন অবস্থায় গত ২১ তারিখ আমাদের জানা মতে, মন্ত্রী কর্তৃক রাস্ট্রের সকল নিয়ম নীতি অমান্য করে ভারতীয় দুটি ছবির সেন্সর সম্পন্ন হয়। (ভারতীয় বলছি এ কারণেই যে, চলচ্চিত্র দুটি ওখানে স্থানীয় হিসেবেই নির্মিত হয়েছে) যা ছিলো অত্যন্ত বিস্ময়কর।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা যৌথপ্রযোজনার পক্ষের শক্তি। একটি ছবি যথাযথভাবে নিয়ম মেনে নির্মিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব ছিলো তথ্যমন্ত্রীর। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য জাতির একজন পতাকাবাহী প্রজাতন্ত্রের একজন পতাকাবাহী নির্বাহী সদস্য তথা একজন মন্ত্রী সংবিধানের সকল নিয়ম ভঙ্গ করে,  সমস্ত আইন ও দেশীয় নীতি ভঙ্গকারী একটি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ভীনদেশি পৃষ্ঠপোষকের পক্ষে স্বৈরাচারী কায়দায় সমস্ত মুল্যবোধকে পদদলিত করে ভারতের দুটি ছবি আমাদের দেশে মুক্তির পথ সুগম করেছে। যা সরাসরি অসৎ উদ্দেশপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, এমন দুর্নীতিগ্রস্ত তথ্যমন্ত্রী মন্ত্রীসভার সদস্য বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। সুতরাং চলচ্চিত্র শিল্পের সকল সংগঠন হাসানুল হক ইনুর সকল সভা-সমাবেশ বর্জন ও সকল আদেশ-নির্দেশ বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সাথে হাসানুল হক ইনুকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এটা ৭৫সাল নয়, ২০১৭ সাল।”

গুলজার তার বক্তব্যে মন্ত্রীকে দোষারোপ করে আরও বলেন, “এর আগেও এই তথ্যমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে দেশে ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের পথ সুগম করা হয়েছে। আমরা অনেক বিচার বিশ্লেষণ করে দেখেছি এই হাসানুল হক ইনু আমাদের চলচ্চিত্রের সহায়ক শক্তি নয়। আমাদের চলচ্চিত্রের ধ্বংসের শক্তি। যাতে এখানে অন্যদের বাজার তৈরি হয়, এখানে অন্যরা অবাধে যাতায়াত করতে পারে তার পথ সুগম করছেন তিনি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাবো এরকম একজন মন্ত্রীকে যেন এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করি। তার বহিষ্কার দাবি করি।”

পকিস্তানীদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যে হুমকির মুখে পড়তে চেয়েছিলো তার প্রেক্ষিতে ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধু এফডিসি অ্যাক্ট ঘোষণা করেন। গুলজার বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান দুর্দশাকে ১৯৫৭ সালের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এখনও সেই দোসররা বাংলা চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেন।

গুলজার জানান, আজ শুক্রবার থেকে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী শাকিব খান, প্রযোজক আবদুল আজিজসহ যারা যারা আছেন প্রত্যেককে এফডিসিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ঐক্যজোটের যে সব সংগঠনের বিভিন্ন পদে তারা রয়েছেন সেসব পদও বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি।