‘দ্য মমি’ : ক্লিশে জর্জরিত এক জগাখিচুড়ি

স্টার সিনেপ্লেক্সে ছিল ইফতার মাহফিলের দাওয়াত। সেইসঙ্গে বাড়তি পাওনা টম ক্রুজের ‘দ্য মমি’ দেখার সুযোগ। কিন্তু ক্রুজের তারকাখ্যাতির জোরেই হোক, বা হোক সেই পুরানো দিনের ‘মমি’ উন্মাদনা- ধারণক্ষমতার দেড়গুণ লোক এসে হাজির হলের সামনে!

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 03:14 PM
Updated : 12 June 2017, 04:00 PM

যে সিনেমা নিয়ে এত উন্মাদনা, সেই সিনেমার প্রতি আশার পারদটা একটু চড়া-ই থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে সেইসঙ্গে মনে ছিল আশাভঙ্গের ভয়ও। দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আশা নয়, সত্যি হলো আশঙ্কাটাই!

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে প্রাচীন মিশরের হাজার বছরের পুরানো মমির আধুনিক বিশ্বে জীবন্ত হয়ে ওঠার ঘটনা নিয়ে যখন ছবি তৈরি হয়েছিল, তখন সেই গল্পের ভাবনা ছিল টাটকা; এমনকী ক্ষেত্রবিশেষে অভিনবও বলা যায় একে। কিন্তু সেই একই গল্পকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ২০১৭ তে বললে বাসি তো লাগবেই, সেইসঙ্গে মনে হবে বাহুল্যও।

‘দ্য মমি’র রিবুট বানিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল স্টুডিওজ যে ভুল করেছে, তা খানিকটা হলেও কাটিয়ে ওঠার আশা ছিল টম ক্রুজ, রাসেল ক্রোদের মত তারকাদের উপস্থিতি দিয়ে। কিন্তু হতাশা গ্রাস করলো এখানেও। টম ক্রুজের চরিত্রটির কিছুমাত্রায় বিকাশ ঘটতে দেখা গেলেও রাসেল ক্রো’র ‘ডক্টর জেকিল’ বা ‘মিস্টার হাইড’ সম্পর্কে জানা গেল না তেমন কিছুই। উপরন্তু মিশরীয় মমির গল্পের ভেতরে ব্রিটিশ এই ক্লাসিক রূপকথার চরিত্র কীভাবে ঢুকে গেল- তা ভাবতে গিয়ে মাথা চুলকানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই!

স্টিভেন সমার্স-এর ‘মমি ট্রিলজি’র অন্যতম আকর্ষণই ছিল এর  শয়তান ভিলেনগুলো। ছবির নায়ক ব্রেন্ডন ফ্রেইজার এবং র‌্যাচেল ওয়াইজের অনন্য রসায়নও ছিল এই ছবির প্রাণ। সেইসঙ্গে পার্শ্ব চরিত্রগুলোর কৌতুক ছবিগুলোতে কিছুটা হলেও যোগ করেছিল দারুণ এক ভিন্ন মাত্রা। ফলে মূল ‘মমি ট্রিলজি’র গল্পগুলো যতোই আজগুবি হোক না কেন, দর্শককে বিনোদিত করেছে পুরোমাত্রায়। সিনেমাগুলো আর যাইহোক বিরক্তিকর ছিল না কোনোভাবেই।

কিন্তু ‘দ্য মমি’ রিবুট, এর আশ্চর্য ব্যতিক্রম! ভিলেন চরিত্র, প্রিন্সেস আহমেনাটের অভিনেত্রী সোফিয়া বাউটেলাকে ভয়ালদর্শন লেগেছে বটে, কিন্তু ‘মমি’র খলচরিত্রে কৌতুক, শয়তানি আর কূটবুদ্ধির যে মিশেল দেখা যায়- তা আর দেখা গেল কোথায়? আর টম ক্রুজের চরিত্র নিক মর্টন যে চরিত্রের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেই জেনি হ্যালসি’র অভিনেত্রী অ্যানাবেল ওয়ালিস তো ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ! ব্রেন্ডন ফ্রেইজারের সঙ্গে আগের ‘মমি’ সিনেমাগুলোতে যেমন পাল্লা দিয়ে শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন র‌্যাচেল ওয়াইজ, সেরকম কিছু তো দেখা গেলই না অ্যানাবেলের ক্ষেত্রে, বরং তাকে বাঁচাতে গিয়ে টম ক্রুজ বারবার পড়ে যাচ্ছিলেন শত্রুর ফাঁদে!

মূল ‘মমি ট্রিলজি’র সঙ্গে এই রিবুটের আরেকটি বড় পার্থক্য ছিল এতে দেখানো সময়কালের। নব্বইয়ের দশকের ছবি হলেও ১৯৯৯ সালের ‘দ্য মমি’র গল্পের সময়কাল ছিল উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। কিন্তু এবারের সিনেমাটির গল্প ২০০০ পরবর্তী সময় নিয়েই, যখন ইরাকে চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা-আগ্রাসন। আর তাই গল্পটির পটভূমি ইরাক-কেন্দ্রিক হলেও সিনেমাটি বেশ জমতো; উঠে আসতে পারতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পশ্চিমা আগ্রাসনের বর্তমান চিত্রটিও।

কিন্তু সেসবের ধারেকাছে না গিয়ে মিশরে পুঁতে ফেলা মমি (যার খোঁজ মিললো ইরাকে) পাচার হয়ে গেল লন্ডনে! আর তাই লন্ডন ব্রিজের উপর দিয়ে যখন মমির মুখের আকৃতির বালুঝড় দেখা গেল, আর মিশরীয় এক প্রাচীন রাজকন্যার আজ্ঞাবহ  হয়ে গেল ইংল্যান্ডের প্রাচীন ক্রুসেডারকূল- তখন এই জগাখিচুড়ি হজম করা কঠিন তো বটেই!

ঈদের ছুটিতে হলিউডি ছবি দেখে মন ভরানোর পরিকল্পনা যদি থেকেই থাকে, তালে ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ কিংবা ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান ফাইভ’ দেখুন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ফ্লপ হলিউডি প্রজেক্ট ‘বেওয়াচ’ও দেখতে পারেন সাহস করে।