গানগুলো যে গাইতে পারে, তাকে দিও: লাকী আখান্দ

সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লাকী আখান্দের জন্মদিন আজ। ১৯৫৬ সালের এইদিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পর তার প্রথম জন্মদিন পালিত হচ্ছে অনাড়ম্বরভাবে।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 01:23 PM
Updated : 7 June 2017, 01:46 PM

পাশ্চাত্যের অনুকরণ নয়, দেশীয় সুরের সঙ্গে পশ্চিমা ধারার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে মনে রাখার মতো মেলোডি গান তৈরি করে বাঙালির হৃদয়ে চিরন্তন জায়গা করে নেন লাকী আখান্দ। ক্ষণজন্মা এই শিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা কিছুদিন আগেই ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে হেরে চির বিদায় নেন।  বেঁচে থাকলে ৭ জুন তাকে ঘিরে রচনা হতো তার ৬১ তম জন্মোৎসব ।

লাকী আখান্দের স্ত্রী মরিয়ম আখান্দ জানিয়েছেন, “পারিবারিকভাবে আজ কবর জিয়ারত ও সন্ধ্যার পর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।”

কিংবদন্তি এ শিল্পীর জন্মতারিখ নিয়ে অনলাইনে নানা বিভ্রান্তি থাকলেও তিনি নিশ্চিত করেন ৭ জুনই তার প্রকৃত জন্মতারিখ।

মৃত্যুর প্রায় দু’মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও তাকে নিয়ে আয়োজিত হয়নি কোনো স্মরণসভা। জন্মদিনও পালিত হচ্ছে নিভৃতেই।

জীবনসঙ্গী মরিয়ম আখান্দ বললেন, “বেঁচে থাকলে তো অনেক কিছুই করা যায়, মরে গেলে তো আর তা হয় না। তার স্মরণসভাটি আয়োজনের কথা রয়েছে। আয়োজকদের মারফত যতদূর জানি ঈদের পর একটি তারিখ বেছে নেয়া হবে স্মরণসভার জন্য ।”

এ প্রসঙ্গে কথা হয়, লাকী আখান্দের ঘনিষ্ঠজন ও স্মরণসভার অন্যতম আয়োজক এরশাদুল হক টিংকুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “মাঝে রোজা পড়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ঈদের পরপরই লাকীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বামবাসহ একটি সমন্বিত আয়োজনের মাধ্যমে তার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে লাকী আখান্দের ঘনিষ্ঠ প্রায় সকলেই উপস্থিত থাকবে আশা করছি।”

লাকীর মৃত্যুর শোক এখনও ভুলতে পারেননি তার শ্রোতারা। লাকী আখান্দ নেই এ শূন্যতা যিনি সবচেয়ে উপলব্ধি করছেন তিনি তার স্ত্রী মরিয়ম আখান্দ। জন্মদিনে তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, “লাকীর গানগুলো সবাই গাইতে পারে না ঠিকভাবে। দেখেছি নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার গানগুলো ভুলভাবে গাইছে। এমনটা যেন না হয় এ আবেদন রইলো। যারা গাইতে পারে তাদেরকে দিয়েই গাওয়ানো হোক, নইলে না।”

মৃত্যুর আগে চারশ’রও বেশি অপ্রকাশিত গান রেখে গেছেন লাকী। মৃত্যুর পরপর গ্লিটজকে এমন তথ্য জানিয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠজন গীতিকার আসিফ ইকবাল। গানগুলো প্রকাশের দায়িত্বও তিনি দিয়ে গেছেন পরিবারের হাতেই। মরিয়ম আখান্দ বললেন, “লাকীর গানতো সবাই গাইতে পারে না। যারা ভালোভাবে গাইতে পারে তাদেরকে দিয়েই গানগুলো গাওয়ানোর পরিকল্পনা আছে। ঈদের পর এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো বলে আশা করি।”   

লাকী আখান্দ মৃত্যুর আগে বারবার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন,“গানগুলো যে গাইতে পারে, তাকে দিও। যে গাইতে পারে না তাকে দিয়ে গানগুলো নষ্ট করো না।” এমনটাই জানালেন তার স্ত্রী।

লাকী আখান্দ, আধুনিক বাংলা সংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন।আজন্ম সংগীতের সারথী এই শিল্পী শৈশব পেরোতেই সুযোগ পেয়ে যান এইচএমভিতে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছন্দ-লয়ের টানে তিনি ভেসে চললেন সুরদরিয়ায়।

কুমার বিশ্বজিৎ এর কণ্ঠে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘কী করে বললে তুমি’, হাসানের ‘হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা’- এর মতো অনেক জনপ্রিয় গানের সুরারোপ করেন তিনি।

‘লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া’ ব্যান্ডতারকা জেমসের গাওয়া জনপ্রিয় এই গানের সুরসংযোজনা ও সংগীতপরিচালনা করেছেন লাকী আখান্দ। ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায়রে’, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝর্ণা’, ‘হঠাৎ করে বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য গানে সুরারোপ ও সংগীতায়োজন করেছেন তিনি। তার নিজের সুর করা গানের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি।