বেশ কিছুদিন ধরেই একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির আঁতুর ঘর এফডিসি। সাম্প্রতিক বেশকিছু ইস্যুতে এখন তুমুল বিতর্কের মুখে পুরো ইন্ডাস্ট্রি। বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তের কারণে ইন্ডাস্ট্রির নেতিবাচক দিকগুলোই প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ ২০ মে সমিতির মহাসচিব কর্তৃক নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে কটুক্তি করার ঘটনায় সমিতি কক্ষে হট্টগোল, হাতাহাতি ও একজন পরিচালককে এফডিসি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মুখে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পরিচালক সমিতি।
মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে নায়করাজকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিন পৃষ্ঠার একটি কর্মসূচি পাঠ করে শোনান তিনি। যেখানে উঠে আসে বর্তমান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ক্ষমতায় যাওয়ার পরবর্তী সফল কর্মসূচিগুলোর কথা। এমনকি নিকট ভবিষ্যতে যেসব কর্মসূচিগুলো তারা হাতে নেবেন সেগুলোও উঠে আসে সংবাদ সম্মেলনে।
মানসম্মত সিনেমার বদলে গল্প নকলের অভিযোগ ঢাকাই চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। এটি বারবার কেন ঘটছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গুলজার আহমেদ বলেন, “আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এখন ভালো প্রযোজক নেই। যারা প্রফেশনাল প্রযোজক ছিলেন তারা এখন নতুন ছবি প্রডিউস করছেন না। একের পর এক প্রদর্শক ও সিনেমা মালিকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে এই ইন্ডাস্ট্রি থেকেই বিদায় নিয়েছেন তারা। ন্যায্য পাওনা প্রযোজকের হাতে আসে না। আমার নিজের একটা ছবির টাকা বলাকা সিনেমা হল থেকে মেরে দেয়া হলো। এখন বলাকার মতো সিনেমা হল থেকেও যদি এমন আচরণ পান একজন প্রডিউসার তাহলে তার কিভাবে টেকা সম্ভব ইন্ডাস্ট্রিতে?”
তিনি আরও বলেন, “অনন্ত জলিলের মতো মানুষওতো টিকতে পারলেন না। এখন যারা সিনেমা প্রডিউস করতে আসছে, তারা একেবারে নতুন। ওয়ান-টাইম। দুয়েকটা ছবি করার পর আর সিনেমা প্রডিউস করছেন না। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন, ‘মেন্টাল’ নির্মাতা নিজের ফ্ল্যাট বাসা বাড়ি বিক্রি করে সিনেমাটা করলো। এখন শুনি সব হারিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।”
“ভালো সিনেমার জন্য ভালো এবং প্রফেশনাল প্রডিউসার লাগবে। আমরা পরিচালক সমিতি সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে সরকার, আগের প্রডিউসার সবার সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।
ভালো কাজ করলেও সংবাদে শুধু পরিচালক সমিতির খারাপ দিকগুলোই উঠে আসে- এমন মন্তব্য করে পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপতি গুলজার আহমেদ সংবাদকর্মীদের চলচ্চিত্রের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করে সংবাদে তুলে ধরারও আহ্বান জানান। ভালো সংবাদ প্রচারের ফলেই চলচ্চিত্রে চলমান বর্তমান সংকট থেকে উত্তোলন কিছুটা হলেও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৫ মে মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্রশিল্পী এবং ‘ওরা ১১জন’ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এটির আয়োজক বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।