বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন বলে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ জানান।
পেশায় স্থপতি কাজী আরিফের বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তার স্ত্রী প্রজ্ঞা লাবণীও একজন আবৃত্তি শিল্পী। দুই মেয়ে রয়েছে তাদের।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কাজী আরিফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
কাজী আরিফের সঙ্গে থাকা মেয়ে আনুশকা শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি ক্লিনিক্যালি ডেড। আগামীকাল সকালে তার লাইফ সাপোর্ট খোলা হবে।”
শনিবার এই আবৃত্তি শিল্পীর মৃত্যুর খবরে অনেক নিউ ইয়র্ক প্রবাসী হাসপাতালে ভিড় করেন। তার লাশ দেশে পাঠানোর তৎপরতা চলছে বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উত্তর আমেরিকা শাখার সভাপতি মিথুন আহমেদ জানিয়েছেন।
কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ী সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এসব কিছুরই হাতেখড়ি হয় সেখানে। আবৃত্তির পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি, সক্রিয় ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে।
কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাজী আরিফ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন তিনি।
১৯৭১ সালে ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কাজী আরিফ। এরপর যুদ্ধ শেষে বুয়েটে লেখাপড়া শুরু করেন আর সাথে সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকে তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি।
বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্পের অন্যতম রূপকার কাজী আরিফ। তিনি মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
কাজী আরিফের আবৃত্তির শুরু বুয়েটে পড়ার সময়। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম বিটিভি ও বেতারে আবৃত্তি করলেও তার প্রথম অ্যালবাম ‘পত্রপুট’ বের হয় ১৯৮০ সালে। মোট ১৭টি কবিতার অ্যালবাম বেরিয়েছে তার।
বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশনে নিয়মিত আবৃত্তি করতেন কাজী আরিফ। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি স্টেটে, থাইল্যান্ডে তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে। কলকাতায় বিভিন্ন আসরে আবৃত্তি করেছেন তিনি।
আবৃত্তির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুরস্কারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের থেকে ফোবানা পুরস্কার এবং কলকাতা থেকে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন কাজী আরিফ।