শনিবার সকাল ১০টায় পুরান ঢাকার আরমানিটোলা জামে মসজিদসংলগ্ন মাঠে প্রথম জানাজার পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।
গার্ড অব অনার দেওয়ার পর এই শিল্পীর মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানান শিল্পীর ঘনিষ্ঠজন এরশাদুল হক টিংকু।
শিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে গীতিকার আসিফ ইকবাল পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার সকালে বারডেমের হিমঘর থেকে লাকী আখান্দ-এর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার আরমানিটোলার বাসায়। তারপর সকাল ১০টায় আরমানিটোলা জামে মসজিদের মাঠে তার প্রথম জানাজা হবে।
এরপর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে শিল্পীর মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিল্পীর মরদেহ রাখা হবে।
বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করার বিষয়টি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও মেয়র আনিসুল হক পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন বলে জানান এরশাদুল হক টিংকু।
এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. রুবায়েত রহমান বলেছিলেন, জীবিত অবস্থায়ও রাষ্ট্রের কাছে কোনো কিছু দাবি করেননি লাকী আখান্দ। ফলে এখনও তার পরিবার রাষ্ট্রের কাছে এই বিষয়ে কোনো দাবি করছেন না। তবুও যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাতেও তাদের আপত্তি থাকবে না।
বছর দেড়েক আগে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা শিল্পী লাকী আখন্দ সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা আড়াই মাস থাকার পর গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর আরমানিটোলার বাসায় ফেরেন।
শুক্রবার দুপুর নাগাদ ফের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়; সন্ধ্যার আগে তাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯৮৭ সালে ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দ-এর মৃত্যুর পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়েছিলেন ৬১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা এই গুণী শিল্পী। মাঝখানে প্রায় এক দশক নীরব থেকে ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দুটি নিয়ে আবারও শ্রোতাদের মাঝে ফিরে আসেন লাকী আখান্দ।
লাকী আখান্দ-এর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। শৈশব পেরোতেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান রেকর্ড লেভেল প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছন্দ-লয়ের টানে তিনি ভেসে চললেন সুরদরিয়ায়।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই শিল্পীর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “লাকী আখান্দ হলেন সুরের বরপুত্র।” ওই অনুষ্ঠানে তাকে আজীবন সম্মাননা জানায় সি-সিরিজ।
কুমার বিশ্বজিৎ এর কণ্ঠে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘কী করে বললে তুমি’, হাসানের ‘হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা’- এর মতো অনেক জনপ্রিয় গানের সুরারোপ করেন তিনি।
‘লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া’ ব্যান্ডতারকা জেমসের গাওয়া জনপ্রিয় এই গানের সুরসংযোজনা ও সঙ্গীতপরিচালনা করেছেন লাকী আখান্দ।
‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায়রে’, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝর্ণা, ‘হঠাৎ করে বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য গানে সুরারোপ ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন তিনি।