নির্বাক যুগের রাজা চার্লি চ্যাপলিন

মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে চার দশকেরও বেশি সময়। বেঁচে থাকলে এখন কাটতেন ১২৮ তম জন্মদিনের কেক! নির্বাক যুগের রাজা, কমেডি কিংবদন্তি চার্লি চ্যাপলিন না থাকলেও রয়ে গেছে তার অমর কীর্তিগুলো।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2017, 02:53 PM
Updated : 19 April 2017, 02:54 AM

চ্যাপলিন জন্মেছিলেন, এমন এক পরিবারে, যার কর্তা ছিলেন একজন পাঁড় মাতাল, আর মা ছিলেন মানসিক রোগী। চ্যাপলিনের বাবা পরিবার ছেড়ে নিরুদ্দেশ হলে তার মায়ের মানসিক ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মাত্র সাত বছর বয়সেই চ্যাপলিনকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় কারখানার কাজে।

হয়তো বাকি জীবন কেটে যেত কারখানার আঁধারেই, কিন্তু তারকালোকের স্বপ্ন বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকতো ছোট্ট চ্যাপলিনকে। সেই স্বপ্নের ভেলাতে ভর করেই তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।

বেঁচে থাকতে চ্যাপলিন একটা কথা প্রায়ই বলতেন। তা হলো- “আমরা ভাবি বড্ড বেশি, অথচ’ অনুভব করি খুব কম।” চ্যাপলিন-এর তৈরি সিনেমাগুলো যেন তৈরিই হয়েছিল ওই ‘বড্ড বেশি ভাবা’র যাঁতাকল থেকে মানুষকে মুক্ত করে রম্যের দুনিয়ায় একটুখানি হাঁফ ছেড়ে বাঁচার অবকাশ দিতেই।

তার জন্মদিনে তার বিখ্যাত তিনটি সিনেমার কথা:

দ্য লিটল ট্র্যাম্প

চ্যাপলিন-এর ঐতিহাসিক ‘ট্র্যাম্প’ বা ভবঘুরে চরিত্রটির জন্ম হয়েছিল একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। তবে দর্শকের এতোই পছন্দ এই চরিত্রটি যে শেষে একে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্তই নিয়ে বসেন তিনি। আর সেই ভাবনা থেকেই তৈরি হয় ‘দ্য লিটল ট্র্যাম্প’, যার ধারাবাহিকতায় তৈরি হয় ‘সিটি লাইটস’, ‘মডার্ন টাইমস’-এর মতো জনপ্রিয় সব সিনেমা।

সিটি লাইটস

নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে চ্যাপলিন তৈরি করেছিলেন এই সিনেমাটি, যেটি এখনও পর্যন্ত তার আইকনিক সিনেমাগুলির একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। চ্যাপলিন যেসময় সিনেমাটি তৈরি করছিলেন, তখন ধীরে ধীরে নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ থেকে সবাক চলচ্চিত্রের যুগে প্রবেশ করছে হলিউড। নির্মাতারা তখন সিনেমায় শব্দ এবং সংলাপ ব্যাবহারে খুবই আগ্রহী, কারণ দর্শকদের মধ্যে এটা দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু চ্যাপলিন হাঁটলেন উল্টো পথে; বললেন তার স্ল্যাপস্টিক কমেডির আবেদনটাই নষ্ট হয়ে যাবে যদি সংলাপে ব্যবহার তিনি সিনেমায় করেন।

চ্যাপলিনের সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তার প্রমাণ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই সিনেমাটির আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। সংলাপ না থালেও সিনেমাতে সংগীতের ব্যবহার করেছিলেন চ্যাপলিন, আর সেটি ছিল তার নিজেরই পরিচালনা।

দ্য গ্রেট ডিক্টেটর

অনেকেই হয়তো জানেন না, নাৎসি বাহিনীর হোতা ও কুখ্যাত জার্মান একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলার ও চার্লি চ্যাপলিন জন্মেছিলেন একই বছরে, একই মাসে, মাত্র চারদিন আগে-পরে! এই তথ্য না জানলেও এই দুজনের চেহারায় যে ছিল আশ্চর্য মিল, বিশেষ করে দু’জনেরই ছিল ঠোঁটের উপরে বিখ্যাত এক বাটারফ্লাই গোঁফ, সেটা নিয়ে কিন্তু চর্চা চলতো সবসময়ই।

ত্রিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যাপলিন-এর জনপ্রিয়তা ছিল পড়তির দিকে। তার চলচ্চিত্রের নায়িকা ও স্ত্রী পলেট গদার-এর সঙ্গে বিচ্ছেদ এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ইমেজের কারণে চ্যাপলিন সাধারণ দর্শকদের মধ্যে হারাচ্ছিলেন তার প্রভাব। ঠিক তখনই হিটলার-এর সঙ্গে নিজের এই সাদৃশ্যকে কাজে লাগিয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একটি জমজমাট স্যাটায়ার তৈরি করার। আর সেটারই ফলাফল ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর”।

সিনেমাটি জমজমাট হলেও পরবর্তীতে আত্মজীবনীতে এটি নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছিলেন চ্যাপলিন। বলেছিলেন, “আমি যদি জানতাম নাৎসি বাহিনীর মানুষ হত্যার উন্মত্ততার কথা, তবে হয়তো এতো হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে সিনেমাটি তৈরি করতাম না।”

‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ চ্যাপলিনের অন্য সিনেমার থেকে আলাদা আরও একটি কারণে, সংলাপের ব্যবহার। সিনেমার শেষ দৃশ্যে একনায়কের বেশে চ্যাপলিনের বক্তৃতা আজও মনে রেখেছে দর্শক।