‘সময়কে অতিক্রমের অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে থিয়েটারের’

“থিয়েটার তো ভীষণ শক্তিময়। সব কিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এর টিকে থাকার অমিত ক্ষমতা আছে- যুদ্ধ, সেনা, দারিদ্র্য সবকিছু। সত্যি বলতে কি, সময়কে অতিক্রম করার এক অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে থিয়েটারের।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2017, 04:56 PM
Updated : 27 March 2017, 04:56 PM

নানা আয়োজনে বিশ্ব নাট্য দিবস উদযাপনের মুহূর্তে থিয়েটার সম্পর্কে নিজের এমন বোধের কথাই তুলে ধরেছেন ফরাসি অভিনেত্রী ইজাবেল হুপায়ার।

বিশ্ব নাট্য দিবসের বাণীতে দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে আজীবন সম্মাননা ‘গোল্ডেন লায়ন’ জয়ী এই অভিনেত্রী বলেন, “থিয়েটার সর্বদাই তার জন্ম থেকে পুনর্জাত হয় এক নতুন মাত্রায়, নতুন এক অবয়বে। এভাবেই সে হয়ে উঠে চিরায়ত।”

১৯৬১ সালের জুনে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) এর নবম কংগ্রেসে বিশ্ব নাট্য দিবস প্রবর্তনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। তার পরের বছর থেকে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় থিয়েটার অব নেশনস উৎসবের সূচনার দিন ২৭ মার্চ প্রতি বছর বিশ্ব নাট্য দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে ১৯৮২ সাল থেকে বিশেষ মর্যাদায় দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে বিশ্ব নাট্য দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইটিআইয়ের বাংলাদেশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান এবং পথনাটক পরিষদ।

প্রত্যেকটি দেশে আয়োজনের প্রতিটি পর্বেই দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া ইজাবেল হুপায়েরের বাণী শোনানো হয়।

এতে ৫৫ বছর ধরে পালন করে আসা বিশ্ব নাট্য দিবস উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বিশ্ব নাট্য দিবস কোনো সাধারণ দিবস নয়। তাই অন্যান্য প্রচলিত পালিত দিবসের মতো একে গতানুগতিক বলে বিবেচনা সম্ভব নয়।

“স্থান ও সময়ের চলমান বিপুলতার প্রবেশ পথ হলো এই দিবস, আর সেই পথ প্রবেশের হাতিয়ার হল বৈশ্বিক ঐক্যমত্য।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারফর্ম করেছেন ইজাবেল; কুড়িয়েছেন সম্মান, পেয়েছেন অগণিত দর্শকের ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা স্মরণ করে থিয়েটারকে ধন্যবাদ দেন এ অভিনেত্রী।

“আমি সত্যি অর্থে এক বিশ্ব নাগরিক। আমার অন্তরের গহিনে যে গভীর ঐক্যতানের অস্তিত্ব ঠিক তারই কারণে। কারণ এই মঞ্চের কিংবা থিয়েটারেই তো আমরা খুঁজে পাই অকৃত্রিম বিশ্বজনীনতা। আমি এখানে অভিনেত্রী নই। আমি সেই সব মানুষদের মধ্যে একজন যার আবরণে থিয়েটারের অস্তিত্ব বেঁচে থাকে। তাই বলা যায় আমাদের অস্তিত্বের জন্য থিয়েটারকেই ধন্যবাদ।”

তিনি বলেন, “একথা সর্বৈব সত্য যে মঞ্চ সেই দুর্জ্ঞেয় সময়কাল থেকেই এক উন্মুক্ত দৃশ্যাঙ্গন, আর অভিনেতা বা অভিনেত্রীই হল এর কৃত্যশিল্পী। একথা তো সর্বজনবিদিত, জনগণ ব্যতীত থিয়েটারের অস্তিত্বই নেই।”

থিয়েটার আঁকড়ে ধরেছেন সেই স্কুলবেলায়। থিয়েটার বদলে দিয়েছে তার জীবনের গতিপথ। মঞ্চের প্রতি প্রণতি জানিয়ে থিয়েটারের পথ সুগম করতে দেশে দেশে শাসনভারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের আহ্বান জানান ইজাবেল।

“থিয়েটার আমাদের রক্ষক, আমাদের আশ্রয়দাতা। আমি মনেপ্রাণে ধারণ করি থিয়েটার আমাদের ভালোবাসে,যেমন আমরাও থিয়েটারকে ভালোবাসি।এক সনাতন মঞ্চ নির্দেশকের মতো আমিও বলতে চাই  থিয়েটারের পথ সুগম কর।”

সোমবার বিকালে শিল্পকলার আয়োজনটি শুরু হয় নাটকপাড়া বেইলি রোড থেকে। সেখান থেকে নানা নাট্যসামগ্রী, মুখোশের সঙ্গে কণ্ঠে গান নিয়ে নাট্যকর্মীদের শোভাযাত্রা এসে শেষ হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সামনে এসে। এর পর ছিল প্রীতি সম্মিলনী। পরে হয় দিবসের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

এবার বিশ্ব নাট্য দিবস সম্মাননা প্রদান করা হয় সদ্যপ্রয়াত রাষ্ট্রদূত, শিল্প-সমালোচক মিজারুল কায়েসকে। বিশ্ব নাট্যদিবস বক্তৃতা করেন নাট্যজন ইনামুল হক।

বাংলাদেশের পক্ষে বাণীতে নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, “নাটক হচ্ছে একমাত্র শিল্প, যার মধ্যে দিয়ে প্রেক্ষাগৃহের জীবিত মানুষেরা সমভাবে ভাগাভাগি করে নেয় মঞ্চ কৃত্যে নিয়োজিত মানুষদের সাথে সুখ-দুঃখের হালখাতা, যেখানে যুগপৎ মিলিত হয় আমাদের পার্থিব অপার্থিব জীবন।

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় নৃতনাট্যদেবদাসী কমলাপরিবেশনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নাট্য দিবসের দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি হয়।