পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে যখন পণ্যরূপে বিক্রি করা হয়, সেখানে হয়তো সিনেমাতেও ওই একটি ভূমিকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো নারীদের। কিন্তু নারীরা বসে থাকেননি। ক্যামেরার পেছনেও প্রমাণ করেছেন নিজেদের মেধা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পড়ুন সেরকমই কিছু বিখ্যাত নারী নির্মাতাদের গল্প।
শুরুর কথা
লুমিয়ে ভাইয়েরা কেবল তৈরি করেছেন ইতিহাসের প্রথম ৪৫ সেকেন্ডর কমেডি চলচ্চিত্র। মেলিয়ে তখনও হাত দেননি নিজের প্রথম চলচ্চিত্রের কাজে। এরমধ্যেই ফরাসী নারী এলিস গি-ব্লাশি স্বপ্ন দেখেছিলেন সিনেমা তৈরির। সেই স্বপ্নের পথে তার প্রথম পদচিহ্ণ ছিল ১৮৯৬ সালের নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দ্য ক্যাবেজ ফেইরি’। ইতিহাসে একেই ধরা হয় প্রথম চলচ্চিত্র যার দৈর্ঘ্য ছিল পুরো এক মিনিট!
পরের এক দশক ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরও অনেক নির্বাক চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন এলিস। কিন্তু তা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রশিল্প হয়ে উঠেছিল পুরুষশাসিত এক ক্ষেত্র, যেখানে অভিনয় ছাড়া, নারীরা কাজ করতো কেবল রূপসজ্জাকর আর পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে।
এই বিপত্তি সত্ত্বেও এলিস-এর ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসেন মার্কিন নারী লুইস ওয়েবার। হলিউডের প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে তিনি তার সিনেমায় তুলে আনতেন গর্ভপাত এবং জন্ম-নিয়ন্ত্রণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো। তার ১৯১৬ সালের নির্বাক চলচ্চিত্র ‘হোয়্যার আর মাই চিলড্রেন’ সেরকমই এক বার্তাবাহী সিনেমা।
তবে হলিউডের সেনালি দিনগুলোতে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা বানাতে পেরেছেন কেবল একজনই। তিনি হলেন ডরোথি আর্জনার। তার সিনেমায় অভিনয় করেই তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন ক্যাথরিন হেপবার্ন এবং জোয়ান ক্রফোর্ড-এর মতো অভিনেত্রীরা।
মূলধারার সিনেমা তৈরিতে পারদর্শী ডরোথি অবশ্য বাণিজ্যের তোড়ে হারিয়ে ফেলেননি তার নারীবাদি চিন্তাধারাকে।
অস্কারে নারী নির্মাতারা
ক্যাথরিন বিগেলো ২০১০ সালের সিনেমা ‘দ্য হার্ট লকার’-এর জন্য প্রথম নারী হিসেবে জিতে নেন সেরা নির্মাতার অস্কার। তার আগে সোফিয়া কপোলা ছিলেন একমাত্র নারী, যিনি তার ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন’-এর জন্য জিতেছিলেন সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার।
আফ্রিকান-আমেরিকান নারী নির্মাতা এভা ডুভার্নের ‘সেলমা’ ২০১৪ সালে দারুণ আলোড়ন তুলেছিল সেরা চলচ্চিত্রের বিভাগে মনোনীত হয়ে। কিন্তু নির্মাতার বিভাগে এভার মনোনয়ন না পাওয়াটা সমালোচনারও জন্ম দিয়েছিল অনেক।
ক্লেয়ার ডেনি এবং তার ফরাসি বিপ্লব
মধ্যপ্রাচ্যের নারীজাগরণ
মুসলিম সমাজব্যবস্থায় রক্ষণশীলতার বেড়া ডিঙিয়ে নারীদের স্বাভাবিক জীবন যাপনই অনেকসময় হয় বাধার সম্মুক্ষীন, সেখানে চলচ্চিত্রের নির্দেশনায় আসবে নারীরা- এককালে এ ছিল দিবাস্বপ্নের মতোই ব্যাপার। কিন্তু ইরানের রাখসান বনি-এতিমাদ প্রথমবারের মতো স্বপ্ন দেখেন একজন মুসলমান নারী হয়েও সেলুলয়েডের ফিতায় নিজের কল্পনাগুলোকে বাঁধতে।
সেই ধারায় ইরানে এখন নারীদের প্রতিনিধি হয়ে সাফল্যের সঙ্গে সিনেমা বানাচ্ছেন সামিরা মাখমেলবাফ। খ্যাতিমান চিত্রনির্মাতা মোহসেন মাখমেলবাফের সুযোগ্য এই কণ্যা মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার প্রথম ছবি ‘দ্য অ্যাপল’ দিয়ে জিতে নেয় কান চলচ্চিত্র উৎসবের জ্যুরি অ্যাওয়ার্ড।
প্রাচ্য আর প্রতীচ্য- সবখানেই এখন সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসছেন নারীরা। উপমহাদেশেও সেলুলয়েডে নারীমুক্তির অগ্রপথিক হিসেবে উঠে আসবে মীরা নায়ার, দীপা মেহতা, অপর্ণা সেন, নন্দিতা দাসদের মতো নারী নির্মাতাদের কথা। এভাবেই পুরুষশাসিত এই ক্ষেত্রে একদিন নারীদের অংশগ্রহণে আসবে সমতা- এমন স্বপ্ন এখন দেখাই যায়!