‘ছবিটা যখন শেষ হলো ঝরঝর করে কাঁদছিলাম’

মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী বাংলাদেশের গল্প নিয়ে বড়পর্দায় মুক্তি পেলো ফাখরুল আরেফিন নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ভুবন মাঝি’। চলচ্চিত্রটি মুক্তির প্রচারণায় বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর  ডটকম কার্যালয়ে উপস্থিত হন চলচ্চিত্রটির অভিনেতা কলকাতার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দেশের ছোট ও বড়পর্দার প্রিয়মুখ মাজনুন মিজান। পরমকে ঘিরে গ্লিটজ টিমের প্রাণবন্ত এক আড্ডায় হাসি ঠাট্টায় উঠে আসে অনেক কথা, তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো..

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2017, 11:54 AM
Updated : 4 March 2017, 11:57 AM

গ্লিটজ আড্ডায় আপনাদের স্বাগত। ‘ভুবন মাঝি’ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে পরম দা’র কাছে জানতে চাইবো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

পরমব্রত: দু’টো কথা বলি, প্রথম একটা বলবো, আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি পশ্চিমবাংলায়, যে পরিবারে বড় হয়েছি, আমার মতো অনেকেই এরকম আছেন। তাদের কাছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ আচমকা অন্যদেশের ইতিহাস জানার মতো নয়। ভারতীয় বাঙালিদের দুটো সত্ত্বা থাকে। একটা হচ্ছে ভারতীয় আরেকটা হচ্ছে তারা বাঙালি। একেকটা সময়, একেকটা সত্ত্বা অগ্রাধিকার পায়। মুক্তিযুদ্ধের কথা এলে বাঙালি সত্ত্বাটা বেশি প্রাধান্য পায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আমারও ইতিহাস। আমি সেভাবেই বড় হয়েছি। আমার বাবা মা আমাকে সেভাবেই শিখিয়েছেন, পড়িয়েছেন, জানিয়েছেন। ভুবন মাঝি করতে গিয়ে আমাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন করে জানতে হয়নি। আমি আ-কৈশর জেনে বড় হয়েছি। এটাকে অত্যন্ত গর্বের বলে জেনেছি। অনুভব করতে করতে বড় হয়েছি। দ্বিতীয় কথা যেটা বলি, এটা হয়তো অল্প বয়স থেকে জেনে বড় হওয়ার জন্যই, বা সারা পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে জানার একটা আগ্রহ এমনিতে আছে সেকারনেই হয়তো এবং ভুবন মাঝি করতে গিয়ে, এতবার বাংলাদেশে যাতায়াত করে একটা নিবিড় যোগাযোগ গড়ে উঠেছে বলেই হয়তো সেটা আরও বেশি করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার যেটা মনে হয়, এটা কিন্তু ৭১ সালে সীমাবদ্ধ নয়। যুদ্ধটা হয়তো তখন হয়েছিলো কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ একটা আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধ একটা দর্শন। ভুবন মাঝিতে আমরা কিন্তু সেই লাইন অফ থটটাই ফলো করার চেষ্টা করেছি। কোথাও সেটাকে প্রতিষ্ঠা করারও চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ সেটাকে বাঁচিয়ে রাখা, সেটাকে অ্যাপ্লাই করা আরও বড় যুদ্ধ। যে যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত সমস্ত বাঙালিকে চালিয়ে যেতে হবে। ছবিটা কোথাও সেই কথাটা বলে। আমার কাছে এটাই অনুভব।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের ক্রাইসিস হিসেবে ‘ভুবন মাঝি’তে সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। একই ক্রাইসিস পশ্চিম বাংলা, ভারত কিংবা সারাবিশ্বেও। শিল্পী হিসেবে কীভাবে দেখছেন বিষয়টাকে?

পরমব্রত: মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদ- যাই বলিনা কেন, এর রূপ বিভিন্নদেশে বিভিন্নভাবে দেখা যাচ্ছে। সেটা যেমন মিডলইস্ট এ দেখতে পাচ্ছি, আইএসএস-এর মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, তেমনি ভারতবর্ষে কিছু অতি ডান এবং গেরুয়া সংগঠনের মধ্যেও তেমন মৌলবাদী চরিত্র দেখতে পাচ্ছি। আনফরচুনেটলি সরকারে যারা আছেন তাদের সঙ্গে সরাসরি না হলেও অতি ডান বা গেরুয়া সংগঠনগুলো যুক্ত। এটা খুব একটা ভয়ের কারণ আমাদের সকলের কাছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তেমনি একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যেমন দেখতে পাচ্ছি তেমনি সারাবিশ্বের সো কল্ড ক্ষমতাধর বলে যাদের বলা হয় তাদের প্রেসিডেন্টকেও আমার মৌলবাদী ছাড়া কিছু মনে হয় না। এটা সারাবিশ্বের সমস্যা। সেটা হচ্ছে পোলারাইজেশান। কোথাও ‌র‌্যাশনালিটি, হিউম্যানিটি এগুলোর জায়গা আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মানুষকে অনেক প্রান্তবাসী করে দেয়া হচ্ছে। ভাবনার জায়গা থেকে ভীষণভাবে একটা মেরুকরণ হচ্ছে। কিন্তু আমরা এ পৃথিবীতে বড় হইনি। আমি অন্তত হইনি। একটা সমান্তরাল বাস্তবতা আছে যেখানে, যেখানে মাঝখানে কোথাও মিট করা যায় এমন কোনো একটা পৃথিবীতে বাস করবো বলে বড় হয়েছি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর অবস্থা, বাংলাদেশ বলুন, পাকিস্তান বলুন, ইন্ডিয়া বলুন, আমেরিকা এমনকি ইউকে বলুন কিংবা মিডল ইস্ট এই পুরো চিত্রটা আমাকে ভীষণ ভয় পাওয়ায় এবং বেদনাদায়ক।

 

শিল্পী হিসেবে এসবের বিরুদ্ধে আপনার লড়াইয়ের জায়গাটা কেমন?

পরমব্রত: নিরন্তর এবং নিরলস, এর বাইরে কিছু বলার নেই।

মিজান ভাই-এর কাছে জানতে চাইবো, ছোটপর্দার পাশাপাশি বড়পর্দাতেও নিয়মিত অভিনয় করছেন। ‘ভুবন মাঝি’ নিয়ে আপনার ভেতরের অনুভূতিটা কীরকম?

মাজনুন মিজান: ‘ভুবন মাঝি’ আমার সিক্সথ ফিল্ম। তবে ভুবন মাঝি নিয়ে আমার ফিলটা পুরোটাই অন্যরকম। আমি যেহেতু বাংলাদেশি বাঙালি, মুক্তিযুদ্ধ আমার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। সেই বিষয় নিয়ে ফিল্ম, সেখানে আমি একটা পার্ট আমার ভাবতে ভালো লাগে। আর যেটা পরম দা বলছিলেন, খুব সুন্দর। আমরা কিছু আদর্শ এবং একটি আদর্শ, হোয়াটেভার, সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করা, সে আদর্শ নিয়ে বেড়ে ওঠা তার মধ্যে জীবন যাপন করা সেটার একটা কন্টিনিউয়াস যুদ্ধ আমাদের এখন অব্দি আছে, এটা থাকবে। এটা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিচ্ছে ‘ভুবন মাঝি’। তাই ‘ভুবন মাঝি’ অন্য যে কোনো মুভির থেকে আলাদা।

শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাইবো দু’জনের কাছ থেকেই। আগে আপনার কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের বড় পর্দায় অভিষেক ঘটছে। কেমন লাগছে?

পরমব্রত: বছর তিন চারেক আগে আমি জানতাম না যে বাংলাদেশের মানুষ এত প্রবলভাবে পশ্চিম বাংলার ছবি দেখেন। এটা গত তিন চার বছর ধরে ক্রমাগত আসতে আসতে আমি বুঝতে পেরেছি, স্যোশাল মিডিয়ার কারনে আরও বেশি জানতে পারি এখন, কাজেই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যে নতুন করে কম্যুনিকেট করতে হবে না সেটা আমার জানা ছিলো। আমি তাদের কাছে পরিচিত, তারা আমার কাছে পরিচিত। কিন্তু বড়পর্দায় একটা ছবি মুক্তি পাওয়া এক অন্যরকম জিনিস। সেজন্য নিশ্চয়ই এটা একটা উত্তেজনা এবং আনন্দের মুহূর্ত, এই কারনে যে, বাংলাদেশের বড়পর্দায় প্রথম আমার একটা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কেননা আমার করা অন্য ছবিগুলো আজ অব্দি বাংলাদেশে মুক্তি পায়নি। সেই প্রেক্ষিতে এটা ভীষণভাবে একটা আনন্দের এবং নার্ভাসনেসেরও জায়গা। আর আমি আসলে একদিক থেকে খুব খুশি যে ‘ভুবন মাঝি’ দিয়ে জার্নিটা শুরু হল। কোনো ছবি মাঝারি হয়, কিছু ছবি দারুণ ভালো হয়, সেটাতো কিছু দর্শকের একরকম লাগে, কিছু দর্শকের অন্যরকম লাগে। সেটা অন্য ব্যাপার। যারা ছবিটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, তাদের যদি জার্নিটা খুব সুন্দর হয়, যাপনটা খুব সুন্দর হয় তাহলে ছবিটার সঙ্গে অন্যরকম একটা আবেগ জড়িয়ে যায় আরকি। ‘ভুবন মাঝি’র সঙ্গে আমার সেটা আছে। আমাদের সকলেরই সেটা আছে। আমার ভীষণভাবে আছে। কাজেই আই অ্যাম রিয়েলি গ্ল্যাড যে ‘ভুবন মাঝি’ প্রথম মুক্তি পেলো।

টানা ৩৭দিন কুষ্টিয়ায় একসঙ্গে ছিলেন, পুরো ইউনিট। সে সময়ের জার্নিটা একটু জানতে চাই..

মাজনুন মিজান: প্রথমত ‘ভুবন মাঝি’র পুরো টিম একটা আবেগের জায়গা থেকে সম্মান এবং সততার সঙ্গে কাজ করেছে। টিমওয়ার্কটা খুব ভালো ছিলো। ডিরেক্টর থেকে প্রোডাকশন বয় পর্যন্ত। যে জায়গায় মুক্তিযুদ্ধটা ঘটেছে সে জায়গায় গিয়ে অভিনয়টা করার কারনে ‘ভুবন মাঝি’র সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা বা আবেগটা অন্যরকম। যেটা ঢাকাতে সেট ফেলে কিংবা কলকাতায় সেট ফেলে করলে হতো না। যে কারনে এই ৩৭ দিনে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের বন্ধু, কাছের মানুষ হয়ে উঠেছি। সেটা খুবই ভালো ছিলো। আমি পুরো ‘ভুবন মাঝি’ টিমের কাছে পরম দা কে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, পরম দা অত্যন্ত বড় মাপের একজন শিল্পী, বড় মাপের মানুষও বটে, আমি তাকে খুবই ভালোবাসি, রেসপেক্ট করি, এই ৩৭ দিনে তাকে মনে হয়নি তিনি ওপার বাংলার অনেক বড় স্টার। আমরা ভোরবেলা জগিং করতাম, গান করতাম, আড্ডা দিতাম, পরম দা খুব ভালো গান গাইতে পারেন।

পরমব্রত: এই বিপদটা এখন এনোনা, সর্বনাশটা করো না এখন...(গান গাইতে হবে ভেবে)

মাজনুন মিজান: (হাসি) দাদা খুব ভালো ক্রিকেটও খেলতে পারেন। আমরা ক্রিকেট খেলতাম। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন একটা ম্যাচ ছিলো আমাদের।

পরমব্রত: ওটা দারুণ মজার ছিলো।

মাজনুন মিজান: সব মিলিয়ে পরম দা খুব বাঙালি, আমাদের মতো মানুষ। যার ফলে ‘ভুবন মাঝি’ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। আপনাদের সাথে আমরা কথা বলছি।

পরমব্রত: যেহেতু কুস্টিয়ায় শুট ছিলো আমি প্ল্যান করেছিলাম প্লেনে আসবো না। আমি গাড়িতে এসেছিলাম। বর্ডার ক্রস করেছিলাম। এই যে জার্নিটা, কলকাতা থেকে, বসিরহাট হয়ে টাকির ভিতর দিয়ে এসে একটা সীমানা অতিক্রম করা। যে সীমানা নিয়ে আমার দাদুর কাছে দিদিমার কাছে এত বিলাপ শুনেছি, খারাপ লাগার কথা শুনেছি, মন খারাপের কথা শুনেছি, সেটা নিজে ফিজিক্যালি ক্রস করা এটা অন্য জিনিস। আমি এটা ইচ্ছা করেই করতে চেয়েছিলাম কিছুটা। তারপর বাংলাদেশে ঢুকে একইরকম সবকিছু, তিন চার ঘন্টা কুস্টিয়া তে এসে পৌঁছানো, এই জার্নিটা আমাকে ‘ভুবন মাঝি’র জন্য তৈরি করে দেয়। কোথাও একটা শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলে ‘ভুবন মাঝি’ করাটা একটু মুশকিল হতো। এই যাত্রাটা শেকড়ের সঙ্গে পুনঃস্থাপন করতে খুব সাহায্য করেছিলো। আর তারপর শুটটা যে কবে শেষ হলো কবে শুরু হলো ঠিক বুঝতে পারিনি। কেননা মিজান, অপর্ণা, কুষ্টিয়ার শিল্পকলা একাডেমির শিল্পী যারা পেশাদার অভিনেতা নন, এরকম প্রচুর মানুষ ছিলেন, পুরো টিমটা আরেফিনের, সকলেই খুব অল্পবয়েসী, প্রায় কেউই সেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোক নন, সবাই বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্র, সবাই একটা চার্জড আপ, ভীষণ স্বপ্নালু একটা দল ছিলো আর কি। আমার এ ধরণের লোকদের সঙ্গে কাজ করতে একটু ভালো লাগে আর কি।

কেমন লেগেছে মাজনুন মিজান কিংবা অপর্ণার সঙ্গে কাজ করে?

পরমব্রত: প্রথম দিন মিজানের সঙ্গে আলাপ করার পর থেকেই অন্যকম একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। ইনফ্যাক্ট প্রিমিয়ারে সবাই যেটা নিয়ে খুব মজা করলো, আরেফিন বলছিলো ৩৭টা রাত তার সঙ্গে কাটিয়েছি আসলে মিজানের সঙ্গে শারিরীক ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিলো। কেননা একটা ছোট্ট মটর সাইকেলে দুজন বসে থাকা, অনেকটা সময় সেখানে কাটাতে হয়েছে আমাদেরকে। বন্ধুত্বতো হতেই হতো, হয়েই যায়। আর অপর্ণা প্রচুর মজার একজন মানুষ। ভালো অভিনেত্রীতো বটেই, খুব চিলড আউট, খুব ইজি গোয়িং একজন মানুষ। এছাড়া মজার সময় কেটেছে শুভাশীষ ভৌমিকের সঙ্গে। আমার ধারণা উনি একজন অনেক ভালো অভিনেতা। আকরাম ভাই বলে একজন ছিলেন, ঢাকা থেকে আসতেন। সবাই, সবাই। সবমিলে আমার অভিনয় জীবনের সবথেকে সুন্দর, সবথেকে আনন্দের একটা মাস।

ভুবন মাঝি চলচ্চিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও অপর্ণা ঘোষ

জার্নিটা তো হলো, ছবিটা কেমন লেগেছে?

পরমব্রত: যে কোনো ছবির ক্ষেত্রে বলতে গেলে আমি একটু নিরপেক্ষভাবে কথা বলি। আরেফিনের এটা প্রথম ফিচার ফিল্ম। এর আগে সে ডকুমেন্টরি বানিয়েছে। ভুবন মাঝি কিন্তু খুব অ্যাম্বিশাস একটা প্রজেক্ট। করা অতো সহজ না। ৭১ এর সময়টাকে রিক্রিয়েট করা, সেই স্কিল তৈরি করা, সেই ম্যাগিনিচিউডে সেটা করা। আর যেখানে বাংলা ছবিতে, সেটা এ বাংলা হোক আর ও বাংলা হোক, বলিউডের ছবির মতো অমন কোমরের জোরও থাকেনা ওরকম মাশল পাওয়ারও থাকে না। সবকিছুই একটা সীমিত সামর্থের মধ্যে করতে হয়। খুবই কিন্তু ঝামেলার একটা কাজ ও হাতে নিয়েছিলো। ছবি দেখতে দেখতে আমারও মনে হচ্ছিলো এখানে মেকিং স্টাইলটা একটু অন্যরকম হলে ভালো হতো, এখানে অভিনয়টা একটু অন্যরকম হতে পারতো ইনক্লুডিং আমারও। কিন্তু একটা ছবির প্রধান লক্ষ্য থাকে তা হলো ন্যারেটিভটা দানা বাঁধছে কিনা। একটা কোহেরেন্ট ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে কি না। যেটা শেষ কালে ছবিটার যে উদ্দেশ্য সেখানে পৌঁছানো যাচ্ছে কিনা, ছবিটার যে অভীষ্ট সেখানে পৌঁছুনো যাচ্ছে কিনা। সেই জায়গা থেকে আমি বলবো, ভুবন মাঝি দারুনভাবে সফল। পুরো ছবিতে আমারও মনে হচ্ছিলো এই জায়গাটা একটু অন্যরকম হতে পারতো, ওই জায়গাটা একটু অন্যরকম হতে পারতো কিন্তু ছবিটা যখন শেষ হলো আমি ঝরঝর করে কাঁদছিলাম। হোলিস্টিক্যালি সবটা মিলে ছবিটা কিন্তু খুব দানা বেঁধেছে।

ফিল্মে যেটা দেখা গেছে আপনার চরিত্র, নহির, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মানুষ খুন করতে পারে না। আপনার কি মনে হয় বাস্তবে আপনি তেমন পারবেন কি না?

পরমব্রত: আমি? আমি নিজে? ভাবিনি, বাস্তবে চেষ্টা করিনি এখনো(হাসি)। আমি নিজে কোনোরকম ভায়োলেন্সে বিশ্বাস করি না।

সেরকম পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়..

পরমব্রত: সেরকম পরিস্থিতিতে পড়লে হয়তো আমি দুম করে..(হাসি) মানে দুরকম ব্যাপার আছে। একটা হচ্ছে ক্যালকুলেটেড কিলিং। আমি যুদ্ধ করছি। কারো সঙ্গে লড়াই করছি তাতে অন্য একজনকে মেরে ফেলতে হবে সেটা অন্য জিনিস। আরেকটা হলো, পরিস্থিতির জন্য অন্যরকম অনেককিছু ঘটে যায়, যার ফলে একজনের হাতে আরেকজনের মৃত্যু ঘটে। সেটা তো বলতে পারবো না..

বলতে চাইছি, চরিত্রটার যে ক্রাইসিস, সাহস ছিলো না। মানবিকতার চুড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে একটা ক্রাইসিস-মানুষ মানুষকে খুন করছে, কিন্তু একজন মানবিক মানুষ সেই খুনে নিজেকে প্ররোচিত করতে পারছে না। সেই প্রসঙ্গেই জানতে চাওয়া।

পরমব্রত: এই মুহূর্তে হলে আমি বলবো যে আমি কাউকে খুন করতে পারবো না। টু সফট ফর দ্যাট। কিন্তু নহীরের মতোই এমন কোনো পারিপর্শ্বিক ঘটনা ঘটলো, কোন বিপ্লব ঘটলো বা বিদ্রোহ ঘটলো, আমার ভিতর থেকে সেই তাগিদটা এলো যে, আমি বুঝতে পারলাম যে, একটা কোনো সত্যি যে সত্যি যে দর্শনে আমি বিশ্বাস করি। সে দর্শনের জন্যে আমাকে হয়তো কিছু না-সুন্দর বা অসুন্দর কিছু করতে হবে। সেরকম জিনিস হলে ততোটা তাগিদ এলে সময় বলে দেবে।

বাংলাদেশি হলে হয়তো জানতে চাইতাম, এখন যদি মুক্তিযুদ্ধ হয়, যুদ্ধে যেতেন কি না..

পরমব্রত: যদি বাংলাদেশি হতাম, এখন যদি মুক্তিযুদ্ধ হতো, আমি এখনই যুদ্ধে যেতাম..

‘ভুবন মাঝি’ নিয়ে আড্ডাপর্বটি এখানেই শেষ হলো। পরমব্রত’র সঙ্গে আড্ডার দ্বিতীয় অংশে উঠে আসবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার নতুন যাত্রা, দুই বাংলার চলচ্চিত্রের নানা সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ। খুব শিগগিরই গ্লিটজ পাঠকদের জন্য তা প্রকাশ করা হবে।