‘লা লা ল্যান্ডে’র রাতে ‘মুনলাইটে’র বাজিমাত

‘লা লা ল্যান্ড’-এর দাপটের রাতে ৮৯ তম অস্কার স্মরণীয় হযে থাকলো আসগর ফারহাদির আর কৃষ্ণাঙ্গদের বিজয়ের কারণে। এমনকী শেষ পর্যন্ত চরম নাটকীয়তার পর সেরা সিনেমা হিসেবে ‘মুনলাইট’-এর জয় চমকে দিয়েছে সবাইকে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2017, 05:30 AM
Updated : 27 Feb 2017, 12:04 PM

নাটকের সূত্রপাত ঘটে আসরের সবচেয়ে বড় পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণার সময় ভুল করে ‘মুন লাইট’-এর জায়গায় ‘লা লা ল্যান্ড’-এর নাম পড়ে ফেলায়। ছয়টি অস্কার জেতা সিনেমাটির কলাকুশলীদের সবাই মঞ্চে উঠেও পড়েন, নির্মাতা এবং প্রযোজক পুরস্কার গ্রহণ করে তাদের বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

ঠিক এরপরই ঘোষণা আসে, ভুল করে ‘লা লা ল্যান্ড’কে পুরস্কৃত করা হয়েচে, আসল পুরস্কারের দাবিদার ব্যারি জেনকিন্স-এর সিনেমা ‘মুনলাইট’!

লস অ্যাঞ্জেলসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয় ৮৯ তম অস্কারের আসর। বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টায় রেড কার্পেট মাড়িয়ে অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন তারকা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা।

সেরা সিনেমার পুরস্কার অর্জনের পথে ‘লা লা ল্যান্ড’ ছাড়াও ‘মুনলাইট’ হারায় ‘হিডেন ফিগার্স’, ‘ফেন্সেস’, ‘অ্যরাইভাল’, ‘হ্যাকস রিজ’, ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’, ‘হেল অর হাই ওয়াটার’ এবং ‘লায়ন’কে।

‘মুনলাইট’-এর জন্য মাহেরশালা আলি জিতেছেন পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কার

এবারের আসরে ১৪ টি মনোনয়ন পেয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে ‘লা লা ল্যান্ড’। মূল অনুষ্ঠানে সেরা সিনেমা, সেরা নির্মাতা, সেরা অভিনেত্রীসহ সাতটি অস্কার জিতে নিলো রোমান্টিক মিউজিকাল ঘরানার সিনেমাটি।

সেরা পরিচালক বিভাগের পুরস্কারও গেছে ‘লা লা ল্যান্ড’-এর ঘরে, ডেমিয়েন শ্যাজেল প্রথমবারের মনোনয়নেই করলেন বাজিমাত। এই বিভাগের অন্য মনোনতিরা হলেন, ডেনিস ভিলেনিউভ (অ্যারাইভাল), মেল গিবসন (হ্যাকস রিজ), ব্যারি জেনকিন্স (মুনলাইট) এবং কেনেথ লোনারগ্যান (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি)।

এবারের অস্কারের অন্যতম অঘটন হিসেবে ধরা হচ্ছে সেরা অভিনেতার বিভাগে ক্যাসি অ্যাফ্লেক-এর (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি) জয়। এই বিভাগের অন্য মনোনীতরা হলেন অ্যান্ড্রু গারফিল্ড (হ্যাকস রিজ), রায়ান গসলিং (লা লা ল্যান্ড), ভিগো মর্টেনসেন (ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক), ডেনজেল ওয়াশিংটন (ফেন্সেস)।

‘ফেন্সেস’-এর জন্য ভায়োলা ডেভিস জিতেছেন পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর অস্কার

সেরা অভিনেত্রী বিভাগে অবশ্য তেমন কিছু হয়নি। ‘লা লা ল্যান্ড’-এর সুবাদে এমা স্টোন জিতে নিয়েছেন তার প্রতাশিত অস্কারটি। জয়ের পথে এই ২৮ বছর বয়সী হারিয়েছেন নাটালি পোর্টম্যান (জ্যাকি), রুথ নেগা (লাভিং), মেরিল স্ট্রিপ (ফ্লোরেন্স ফস্টার জেনকিন্স) এবং ইসাবেল উপের(এল)-এর মতো অভিনেত্রীদের।

পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা বিভাগের বিজয়ী হয়েছেন মাহেরশালা আলি, ‘মুনলাইট’ সিনেমার জন্য। এই বিভাগের অন্য মনোনতিরা হলেন, দেব প্যাটেল (লায়ন), জেফ ব্রিজেস (হেল অর হাই ওয়াটার), লুকাস হেজেস (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি) এবং মাইকেল শ্যানন (নকটারর্নাল অ্যানিমেল)।

পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেত্রী বিভাগের বিজয হয়েছেন ভাযোলা ডেভিস, ‘ফেন্সেস’ সিনেমার জন্য। এই জয়ের পথে তিনি হারিয়েছেন নিকোল কিডম্যান (লায়ন), নাওমি হ্যারিস (মুনলাইট), অক্টাভিয়া স্পেন্সার (হিডেন ফিগার্স) এবং মিশেল উইলিয়ামস-এর (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি) মতো তারকাদের।

‘লা লা ল্যান্ড’-এর জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম অস্কার জিতলেন এমা স্টোন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোলাল্ড ট্রাম্প-এর সাত মুসলিম দেশের ভিসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রতিবাদে এবারের অস্কার বর্জন করেন বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রে মনোনীত ‘দ্য সেলসম্যান’-এর (ইরান) নির্মাতা আসগর ফারহাদি। অথচ’ তিনিই দ্বিতীয়বারের মতো জিতলেন এই পুরস্কার।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলেও তার পক্ষ থেকে একটি বক্তব পড়ে শোনানো হয়, যেখানে লেখা ছিল, “দুঃখিত এবারের অনুষ্ঠানে আমি থাকতে পারছি না বলে। আমার এই সিদ্ধান্ত আমার দেশের মানুষ এবং এবং আরও ছয়টি দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া অভিবাসীদের নিষিদ্ধ করার অমানবিক নিয়মের প্রতিবাদ স্বরূপ।”

এই বিভাগের মনোনয়নপ্রাপ্ত অন্য সিনেমাগুলি হলো, ‘টোনি এর্ডমান’ (জার্মানি), ‘আ ম্যান কলড উভে’ (সুইডেন), ‘টান্না’ (অস্ট্রেলিয়া) এবং ‘ল্যান্ড অফ মাইন’ (ডেনমার্ক)।

সেরা অ্যানিমেশন সিনেমার অস্কার এবার জিতেছে ডিজনির ‘জুটোপিয়া’। বিভাগে মনোনীত অন্য সিনেমাগুলো হলো, ‘কুবো অ্যান্ড টু স্ট্রিংস’, ‘মোয়ানা’, ‘মাই লাইফ অ্যাজ আ জুকিনি’ এবং ‘দ্য রেড টার্টল’।

সেরা সিনেমার পুরস্কার বিভ্রাটের পর ভুল শোধরাতে অস্কারের নেইমকার্ড দেখানো হচ্ছে দর্শকদের

এবারের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন তারকা সঞ্চালক জিমি কিমেল। উপস্থাপনার শুরুতেই ট্রাম্প প্রশাসনের বৈষম্যমুলক অভিবাসন নীতির সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলে ওঠেন, ‘ট্রাম্পকে ধন্রবাদ, গতবছর অস্কারকে সবাই বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত করেছিল। এবার আ র সেরকম কিছু হচ্ছেনা!”

এছাড়াও তিনি সবার সামনে তুলে ধরেন চলতি বছরে তিনবারের অস্কারজয়ী ও ২০ তম অস্কারমনোনয়ন পাওয়া অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ-এর অর্জনসমূহকে। এসময় তিনি কৌতুকভরে বলে ওঠেন, “সবাই উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিন, ইতিহাসের সবচেয়ে অতিমূল্যায়িত অভিনেত্রীর জন্য!”

অনুষ্ঠানের শুরু হয় জাস্টিন টিম্বালেক-এর পরিবেশনায় ‘ক্যান্ট স্টপ দ্য ফিলিং’ গানটির মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর‌্যায়ে গান পরিবেশন করেন স্টিং এবং জন লেজেন্ড-এর মতো শিল্পীরা।

অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানো হয় ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করা শিল্পীদের প্রতি।

অন্যান্য বিভাগে যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারা হলেন:

সেরা সাহিত্যনির্ভর চিত্রনাট্য: ব্যারি জেনকিন্স (মুনলাইট)

সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য: কেনেথ লোনারগ্যান (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি)

সেরা সম্পাদনা: জন গিলবার্ট (হ্যাকস রিজ)

সেরা চিত্রগ্রহণ: লিনাস স্যান্ডগ্রেন (লা লা ল্যান্ড)

সেরা মৌলিক গান: সিটি অফ স্টারস (লা লা ল্যান্ড)

সেরা সংগীত: জাস্টিন হারউইটজ (লা লা ল্যান্ড)

সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড সিনেমা: পাইপার

সেরা তথ্যচিত্র: ও জে: মেইড ইন আমেরিকা

সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: সিং

সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র: দ্য হোয়াইট হেলমেট

সেরা রূপসজ্জা: আলেসান্দ্রো ব্রোগেলিনি, জর্জিও গ্রিগোলিনি এবং ক্রিস্টোফার নেলসন (সুইসাইড স্কোয়াড)

সেরা পোশাক পরিকল্পনা: কলিন অ্যাটউড (ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম)

সেরা সাউন্ড এডিটিং: সিলভেন বেলমার (অ্যারাইভাল)