‘সবক্ষেত্রেই শিল্পীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়’

প্রায় আট বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ছোটপর্দার অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র নির্বাচন। ফেব্রুয়ারীর ১০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন নিয়ে সরগরম মিডিয়াপাড়া। মামুনুর রশিদকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি এ নির্বাচন পরিচালনা করতে যাচ্ছে। এতে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন, ডি এ তায়েব, শহিদুল আলম সাচ্চু, গোলাম মোস্তফা এবং শহিদুজ্জামান সেলিম। অভিনয় শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সংগঠনটিকে দাঁড় করাতে দিনরাত প্রচার প্রচারণা ও আলোচনায় মগ্ন প্রার্থীরা। নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে গ্লিটজের মুখোমুখি হয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শহীদুজ্জামান সেলিম।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2017, 01:37 PM
Updated : 1 Feb 2017, 01:37 PM

গ্লিটজ: প্রায় আটবছর ধরে কোন কর্মসূচীতে নেই অভিনয়শিল্পী সংঘ। নতুন করে এ সংগঠনটির নির্বাচন হতে যাচ্ছে, কোন প্রেক্ষাপটে?

শহীদুজ্জামান সেলিম: নির্বাচন হতে যাচ্ছে, খুবই ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। তবে এটির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা আমি পালন করেছি। গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখ অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলাম। বৈঠকটা করার কারণটা বলি, আমি ছিলাম অভিনয় শিল্পী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমি, জাহিদ হাসান, তৌকির আহমেদ, আজিজুল হাকিম এ চারজন মিলে অভিনয় শিল্পী সংঘ শুরু করেছিলাম। এটা ২০০০ সালের কথা। তারপর একটি কমিটির কাছে সংগঠনটির ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। যে প্রক্রিয়াটা ঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। নতুন কমিটি সাতবছরে একটি সাধারণ সভাও করতে পারেনি। শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি সংগঠন হয়ে গিয়েছিলো। আমার সেপ্টেম্বরের বৈঠকের উদ্দেশ ছিলো, যেভাবে অন্যান্য সংগঠনগুলো সংগঠিত হয়ে যাচ্ছে তখন অভিনয় শিল্পী সংঘটাকেও আমাদের ঠিক করা দরকার। সে প্রেক্ষাপটে আমি নামকরা শিল্পীদের ডেকেছিলাম একটি মিটিংয়ে। সভায় আজিজুল হাকিমসহ ৭০জন অভিনয়শিল্পী অংশগ্রহণ করেছিলো। তখন এ সংঘের বর্তমান নেতৃত্বের অনেকের মনে হল আমরা একটা বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি। তখন আমার ওই মিটিংয়ের স্লোগান ছিলো-বিভাজন নয়, গতিশীলতা। এ স্লোগান ধরে আমরা এগোই। এবং আমরা অতিসত্বর একটি নির্বাচন চাই, তার আগে একটি সাধারণ সভা চাই। এ মিটিংয়ের পর ঘুমন্ত নেতৃবৃন্দ জেগে উঠে শিল্পীদের কাছে চিঠি পাঠায় ৭ অক্টোবর একটি শিল্পী সমাবেশ হবে। আমি চিঠির উত্তরে পাঠাই, সমাবেশ নয়, আমরা সাধারণ সভা চাই। তারপর একটি সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সে সভায় আমাকে ডাকা হয়নি। এরপর আমি শুনতে পাই নির্বাচনের উদ্দেশে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই যে আমি বৈঠক করেছিলাম বিভাজন নয়, গতিশীলতা-তার ফলস্রুতিতে আজকের এই নির্বাচন।

গ্লিটজ: আপনি তো সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন..

শহীদুজ্জামান সেলিম: মাঝখানে এফটিপিওর আন্দোলন হয়েছে। এটি হয়েছে বিভিন্ন চ্যানেলের বিরুদ্ধে, মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। সমস্তগুলোতেই আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে সিনিয়র শিল্পীদের ইচ্ছায় আমি এ পোস্টটিতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

গ্লিটজ: কোন বিরুদ্ধতা অনুভব করছেন?

শহীদুজ্জামান সেলিম: হ্যাঁ করছি, এভাবেই করছি, যে আমাদের সাম্প্রতিক আন্দোলন ছিলো চ্যানেল এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে। খুব ইন্টারেস্টিং ব্যপার হলো, মনোনয়ন সাবমিটের আগের দিন আমার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে একজনকে দাঁড় করানো হল যিনি একটি চ্যানেলের চাকরীভুক্ত কর্মকর্তা। উনি দাঁড়ালেন আমার বিরুদ্ধে। এটাকে আমি মনে করি, অভিনয়শিল্পীদের পক্ষের আন্দোলনে আমি যে স্লোগান উচ্চারণ করেছি, তারই বিপক্ষের একটি শক্তি আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। কারণ শিল্পীদের বারগেনিংতো থাকবেই চ্যানেলের সঙ্গে। সে জায়গায় যখন একটি চ্যানেলের কর্মকর্তা, শিল্পীও বটে তিনি যখন নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যান, তখন বুঝতে হবে এটি পরিকল্পিত।

গ্লিটজ: আপনি কি মনে করছেন চ্যানেলটি শিল্পীদের ভোটাধিকারে প্রভাব বিস্তার করতে পারে?

শহীদুজ্জামান সেলিম: তা করতেই পারে, যেহেতু তারা বড় বড় ইভেন্ট করে, তাদের তো নিজস্ব কিছু শিল্পী আছেই। সেক্ষেত্রে একটা প্রভাব থাকতেই পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, যে স্ববিরোধীতা তাদের মাঝে আছে তা সর্বস্তরের শিল্পীদের কাছেই স্পষ্ট। আমি সারাজীবন সৎ থাকার চেষ্টা করেছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আমার অভিমত, যে প্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচন করছি, সেখানে চ্যানেলের কোন কর্মকর্তা যদি নির্বাচনে জেতেন তা শিল্পী সমাজের জন্য ভালো হবে না। এ ব্যাপারে শিল্পীসমাজও আমার সঙ্গে একমত আছেন।

গ্লিটজ: অভিনয়শিল্পীদের সংকটগুলো এখন কি মনে করছেন?

শহীদুজ্জামান সেলিম: নতুন এবং পুরাতন শিল্পীদের যে মিশ্রন তা এখন সিক্সটি পারসেন্ট নতুন ফর্টি পারসেন্ট পুরাতন হয়ে গেছে। বয়সের দুই শ্রেণীর শিল্পীদের সমন্বয় করার ব্যাপার আছে। পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিল্পী সংঘ ভূমিকা রাখতে পারে, শিল্পীদের মানোন্নয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। দেখবেন, যে কোন সংগঠন কিন্তু অভিনয় শিল্পী সংঘের উপর নির্ভরশীল। যে কোন দাবি দাওয়ার ক্ষেত্রে সেটা মিডিয়া ইউনিটি হোক, এফটিপিও হোক আমরা যারা বড়বড় স্টার আছি তাদের অনুরোধ করে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা তাদের সাথে থাকলেই কি, না থাকলেই কি। সবক্ষেত্রেই শিল্পীদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখন একটি অভিনয় শিল্পী সংঘ যখন শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে দাঁড়াতে পারে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কোথায় আমরা যাবো, কোথায় যাবো না। নিজেদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক যে নিরাপত্তা, শিল্পী-প্রযোজক, পরিচালকের মধ্যকার কাজের নীতিমালাগুলো অভিনয়শিল্পী সংঘ ঠিক করে দিতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

গ্লিটজ: সভাপতি নির্বাচনে আপনি কি ধরণের প্রতিশ্রুতি রাখছেন?

শহীদুজ্জামান সেলিম: আগামী ৭ তারিখে ‘মিট দ্য ক্যান্ডিডেট’ নামের যে সভাটা আছে, তখন আমি আমার প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরবো, এ সময়ের মধ্যে প্রস্তাবনাগুলো আরও সুলিখিত হবে, এ মুহুর্তে সেটা বলতে চাচ্ছি না।

গ্লিটজ: অভিনয় শিল্পী সংঘের নতুন কমিটির কার্যক্রম কেমন হতে পারে?

শহীদুজ্জামান সেলিম: যে নতুন কমিটিটা আসবে তাদের অনেক কাজ থাকবে। যেহেতু এখন এটি একটি ঘুমন্ত সংগঠন, এটি নতুনভাবে সক্রিয় করতে হবে, সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। গঠণতন্ত্র থেকে শুরু করে এটার রেজিস্ট্রেশান পর্যন্ত সব কাজ করতে হবে। আশা করি এর ফলে পরবর্তীতে যারা আসবে তাদের জন্য কাজটি সহজ হয়ে যাবে।

গ্লিটজ: আপনার অভিনয় ও নির্মাণ ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই

শহীদুজ্জামান সেলিম: এখন আমি ছোটপর্দার কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত। বেশকিছু চ্যানেলে নাটক প্রচারিত হচ্ছে। সেসব নিয়ে ব্যস্ত আছি। নতুন একটি চলচ্চিত্রের ব্যপারে কথা চলছে। আর নির্মাণে আপাতত ব্যস্ততা নেই। নতুন একটি টেলিভিশনে থ্রিলার নাটক নির্মাণের পরিকল্পনা প্রস্তাব দিয়েছি। দেখা যাক কি হয়।