‘মিডিয়াতে এখন শিল্পীরা শুধু টিকে থাকার জন্য আসছেন’ 

পরপর দুটি সিনেমায় গ্যাংস্টারের চরিত্রে অভিনয় করে ক্যারিয়্যারের শুরুতেই সিনেপাড়ায় ‘শহুরে ছেলে’র তকমা জুটিয়ে ফেলেছিলেন মডেল ও অভিনেতা এবিএম সুমন। তবে এই প্রথমবারের মত সোহেল আরমানের ‘ভ্রমর’ সিনেমায় ভিন্ন এক ভূমিকায় অভিনয় করলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে নিজের ক্যারিয়্যারের বিভিন্ন দিক নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন তিনি।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 03:02 PM
Updated : 11 Jan 2017, 03:02 PM

গ্লিটজ: ‘ভ্রমর’ সিনেমায় আপনার চরিত্রটি কেমন?

এবিএম সুমন: নব্বইয়ের দশকের সময়ে গ্রামের এক শিক্ষিত পেশাজীবি মানুষের শহর ফেরত শিক্ষিত ছেলে যেমন ধরণের হয় আমি ঠিক সেই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছি। সিনেমায় আমার নাম ভ্রমর। আমার বাবার মত আমিও একজন ডাক্তার। কিন্তু আমার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যার কারণে ডাক্তারের পরিচয়টা ছাপিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে আমি নতুন এক পরিচয়ে পরিচিত হই। এই ধরনের চরিত্রে এর আগে আমি নিজেও অভিনয় করিনি এবং দর্শকরাও আমাকে এমন চরিত্রে দেখবে, এটাও তারা কখনও প্রত্যাশা করেনি।  

গ্লিটজ: সহশিল্পী মুগ্ধতা নিপুণ-এর সঙ্গে কাজের রসায়ন কেমন জমে উঠেছে?

এবিএম সুমন: সম্প্রতি আমরা ঢাকার বাইরে ‘ভ্রমর’ সিনেমার শুটিং শেষ করে এসেছি। কিন্তু সেখানে নিপুণ-এর সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন তৈরি হওয়ার মত এখনো তেমন কোনো দৃশ্য ছিল না। যে কয়েকটি দৃশ্যের কাজ হয়েছে সেগুলো ছিলো মেলোড্রামাটিক।

তবে প্রথম লটের দশদিনের মধ্যে টানা তিনদিনের মত তার সঙ্গে আমার কাজ হয়েছে। এই সময়টাতে তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সহশিল্পী হিসেবে তার কাছ থেকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছি।

গ্লিটজ: ‘ভ্রমর’ সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজের প্রস্তুতির জায়গাটা কেমন ছিলো?

এবিএম সুমন: অভিনয়ের ক্ষেত্রে একজন শিল্পীর তার নিজেকে এক চরিত্র থেকে অন্য একটি নতুন চরিত্রের জন্য ভেঙে ফেলার বিষয়টি কিংবা নিজেকে প্রস্তুত করা বিষয়টি আপেক্ষিক। যেহেতু এই সিনেমার ভ্রমর চরিত্রটি নব্বইয়ের দশকের একজন শিক্ষিত তরুনের চরিত্র। সেই সময়টা আমি দেখেছি তাই এই চরিত্রে প্রবেশ করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। তবে যেহেতু কাজের সময় নির্মাতা এই চরিত্রের বিভিন্ন দিকগুলোকে খুব ভালোমত আমার কাছে উপস্থাপন করেছেন তাই কাজ করতে করতে এই চরিত্রে প্রবেশ করা হয়ে যাচ্ছে।

গ্লিটজ: ‘তুই চলে যাবি’, ‘কেউ না জানুক’, ‘মন দরিয়া’ ইত্যাদি বেশ কিছু জনপ্রিয় মিউজিক ভিডিওতে আপনি কাজ করেছেন। আপনি কি মনে করেন এই কাজগুলো আপনার অভিনয় ক্যারিয়্যারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে?  

এবিএম সুমন: সাধারনত যারা বড় পর্দায় অভিনয় করেন তারা অনেক সময় ছোট পর্দায়ও কাজ করে থাকেন। এমনটা শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয় বরং সারা দুনিয়া জুড়েই হচ্ছে। মিউজিক ভিডিওর ক্ষেত্রে শ্রোতারা মূলত গানটাকে শুনে থাকেন। এরমধ্যে যারা আমার ভক্ত রয়েছেন শুধু তারাই খুব মনোযোগ সহকারে ভিডিওটি দেখে থাকেন। তাই এখানে আমার অভিনয়ের ক্যারিয়্যারে নেতিবাচক প্রভাব পড়া কিংবা আমার অবস্থান নিয়ে দর্শকের ধরণের দ্বিধান্বিত হওয়ার কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। তাছাড়া এখনকার সময় যেসব মিউজিক ভিডিওগুলোর কাজ হচ্ছে বিশেষ করে আমি যে কাজগুলো করেছি, সেখানে আমি অভিনয় করার প্রতিই বেশি জোর দিয়েছি।

গ্লিটজ: বিজ্ঞাপনে হঠাৎ অনুপস্থিত হয়ে গেলেন কেন?

এবিএম সুমন: প্রায় এক বছরের মত সময় হয়ে গিয়েছে আমি কোনো বিজ্ঞাপনে মডেলিং করছি না। আসলে মানসম্মত কাজ ও ভালো সম্মানী না পেলে আমি বিজ্ঞাপনে কাজ করিও না। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রতিদিন শিল্পী সম্মানী কমে যাচ্ছে। আমাদের এই বিজ্ঞাপনে কাজের জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

একটি সময় ছিলো যখন শিল্পীরা বিজ্ঞাপনে কাজ করতে আসতেন। কিন্তু এখন যারা কাজ করতে আসছেন তারা শুধুমাত্র টিকে থাকার জন্য আসছেন। তারা শিল্পের জন্য কিছুই করছেন না। মূলত মিডিয়াতে তাদের টিকে থাকার প্রবণতার কারনে শিল্পী সম্মানীর জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মিডিয়াতে এখন শিল্পীরা নয় বরং সারভাইভাররা আসছেন। যারা মিডিয়াতে শিল্পচর্চার জন্য নয় বরং রুটি রুজি জোগাড়ের জন্য এসেছেন।

গ্লিটজ: ‘আদি’ ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমা দুটোর বর্তমান অবস্থা কি?

এবিএম সুমন: ‘আদি’ ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দুটো সিনেমার দৃশ্যধারন শেষ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে দুটো সিনেমাই সম্পাদনার টেবিলে রয়েছে।

গ্লিটজ: চলতি বছরে দর্শকরা আপনার কাছ থেকে কয়টি সিনেমা উপহার পাচ্ছে?

এবিএম সুমন: সবকিছু ঠিকঠাক মত চললে এই বছর তানিম রহমান অংশুর ‘আদি’ দীপঙ্কর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও সোহেল আরমানের ‘ভ্রমর’ এই সিনেমা তিনটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়াও হাতে আরো বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজের প্রস্তাব রয়েছে। সবকিছু ব্যাটে বলে মিলে গেলে সেই সিনেমাগুলোর নামও মুক্তির মিছিলে যোগ হবে।