ওম পুরিকে নিয়ে কিছু অজানা তথ্য

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস তাকে মনে রাখবে ‘আক্রোশ’, ‘অর্ধ সত্য’, ‘যানে ভি দো ইয়ারো’র মতো সিনেমার জন্য। নাসির উদ্দিন শাহ, শাবানা আজমী আর স্মিতা পাতিলদের সমসাময়িক ওম পুরি চলে গেছেন চিরতরে; তবে পৃথিবীজুড়ে সিনেমাভক্তদের হৃদয়ে জ্বলবে তার স্মৃতির দীপশিখা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2017, 08:14 AM
Updated : 6 Jan 2017, 08:45 PM

ভারতীয় নানা গণমাধ্যমে তার দেওয়া সাক্ষাৎকার, বন্ধুদের স্মৃতিচারণ আর অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা তথ্যে জানা যায় শক্তিমান এই অভিনেতার ব্যক্তিজীবন ও ক্যারিয়ারের নানা অজানা দিক।

ওম পুরি শাবানা আজমি: শাবানা আজমীর সঙ্গেও দারুণ বন্ধুত্ব ছিল ওম পুরির

ওম পুরির জন্ম কবে?

আম্বালার এক পাঞ্জাবী পরিবারে জন্ম ওম পুরির। তার জন্মের দিনক্ষণ সরকারিভাবে নিবন্ধন না করায়, ওম পুরির মা নিজেও জানতেন না, তার ছেলের সঠিক জন্মতারিখটি। শুধু বলতেন, দুর্গাপূজার দুদিন আগে ১৯৫০ সালে জন্ম তার।

স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় নিজের জন্মতারিখ ৯ মার্চ, ১৯৫০ লিখতেন ওম পুরি। পরবর্তীতে পঞ্জিকা ঘেঁটে তিনি বের করেন, ওই বছরের দুর্গাপূজার দুদিন আগের তারিখটি ছিল ১৮ অক্টোবর। এরপর থেকেই এটি তার জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

রেলসড়ক থেকে খ্যাতির মহাসড়কে

তারকা হওয়ার আগ পর‌্যন্ত আর্থিক সচ্ছলতা কখনো ছিল না ওম পুরির পরিবারে। ছোটবেলায় রীতিমতো দারিদ্রের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে কাটাতে হয়েছে তাকে। 

অর্ধ সত্য: ‘অর্ধ সত্য’ সিনেমার পুলিশ ইন্সপেক্টরের চরিত্র তাকে জাতীয় পুস্কার এনে দেয়

সাত বছর বয়স থেকেই গ্রামের সরাইখানায় গ্লাস ধুয়ে মুছে রাখার কাজ করতেন তিনি। পরিবারকে সাহায্য করতে রেল লাইন থেকে কয়লা কুড়ানোর কাজও করেছেন তখন। 

চিনাবাদামে কেনা

অভিনয়ে ওম পুরির ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালের সিনেমা ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’ দিয়ে। ওই সিনেমায় অভিনয়ের সম্মানী হিসেবে কয়েক মুঠো চিনাবাদাম পেয়েছিলেন তিনি!

অমিতাভ বচ্চনের প্রতি কৃতজ্ঞতা

১৯৮২ সালের ‘অর্ধসত্য’ সিনেমায় বহুবছর ধরে চলে আসা সমাজ এবং রাজনৈতিক অবকাঠামোর প্রতিবাদ করা এক পুলিশ ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ওম পুরি। এই চরিত্রেই তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এনে দেয়।

অথচ’ প্রথমে এই চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনকে। বিগ বি ফিরিয়ে না দিলে নিজের সবচেয়ে প্রশংসিত চরিত্র থেকে বঞ্চিত হতেন পুরি।

সদগতি-ওমপুরি-স্মিতা পাতিল: স্মিতা পাতিলের সঙ্গে বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন ওমপুরি। এটি ‘সদগতি’ সিনেমার একটি দৃশ্য

এ নিয়ে পরে অমিতাভের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন তিনি, “অমিতজী এক মহান অভিনেতা। আমি তার প্রতি চির কৃতজ্ঞ যে তিনি ‘অর্ধ সত্য’ ফিরিয়ে দিয়েছেন।”

নিরামিষাশী থেকে ভোজনরসিক

অভিনয় ছাড়াও যে জিনিসটা দারুণ উপভোগ করতেন ওম পুরি, তা হলো ভালো খাবার। তবে প্রথম জীবনে কঠোর নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করা এক নিরামিষাশীই ছিলেন তিনি।

অনুপম খেরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওম পুরি বলেছিলেন, নিরামিষ থেকে তাকে আমিষাশীতে রূপান্তরিত করার সব কৃতিত্ব নাসিরউদ্দিন শাহ-এর।

পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের স্কুল অব ড্রামায় পড়ার দিনগুলো থেকেই একে অপরের প্রাণের বন্ধু নাসিরউদ্দিন শাহ এবং ওম পুরি। তখনই নাসিরের সঙ্গে থাকতে থাকতে মাংস খাওয়া ধরে ফেলেন তিনি।

যানে ভি দো ইয়ারো: বিদ্রুপাত্মক কমেডি ‘যানে ভি দো ইয়ারো’ ছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল সিনেমা

‘মোটা নাক’ সমাচার

ওম পুরি ছোটবেলা থেকেই চাইতেন হিন্দি ছবির হিরো হতে। কিন্তু চেহারা ভালো নয় দেখে সিনেমায় সুযোগ পাবেন না- এই ভয় থেকে তিনি অভিনয় শিখতে পুনে আসেন।

ওম পুরীর ভাষ্যে, “সিনেমায় ঢোকার জন্য, যে চেহারা থাকা চাই, সেটা আমার ছিল না। দুঃখজনকভাবে, হিন্দি সিনেমায় মোটা নাকের কোনো স্থান নেই।”

চিরকালের প্রেমিক পুরুষ

নাসির উদ্দিন শাহ-এর মতে, ওম পুরির মতো রোমান্টিক মানুষ তিনি জীবনে আর দুটো দেখেননি। মেয়েদের পটাতে ফুল, চকোলেট আর উপহার কেনা ছিল তার নিত্য অভ্যাস।

ওম পুরির বক্তব্য অবশ একটু অন্যরকম ছিল। তার ভাষ্যে, “নাসিরের মতো ছেলেরা কেবল ফটাফট ইংরেজি আওড়াতো, আর মেয়েরা তাতেই পটে যেতো। আমাকে সেখানে নানা কসরৎ করে তাদের মন পেতে হতো।”