সুলতান সুলেমান: দীপ্ত টিভির লাইসেন্স বাতিলের দাবি

বাংলায় ডাবিংকৃত তুরস্কের মেগা সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’ সম্প্রচার বন্ধ না করায় টেলিভিশন চ‌্যানেল দীপ্ত টিভির লাইসেন্স বাতিলের দাবি করেছে শিল্পী-কলাকুশলীদের সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন-এফটিপিও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2016, 04:21 PM
Updated : 19 Dec 2016, 04:21 PM

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘সুলতান সুলেমান’ বন্ধ না হলে দীপ্ত টিভি দেখানো বন্ধ করতে কেবল অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দীপ্ত টিভির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে এফটিপিওর আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ অন‌্যান‌্য টিভি চ‌্যানেলেও বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানান।

তা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

দীপ্ত টিভির পাশাপাশি একুশে টিভিতে ‘হাতিম’ ও ‘সীমান্তের সুলতান’, এসএ টিভিতে ‘ইউসুফ জুলেখা’, মাছরাঙা টিভিতে ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’ প্রচারিত হচ্ছে।

এফটিপিওর অবস্থান কর্মসূচি থেকে ‘সুলতান সুলেমান’কে বাংলাদেশের সমাজ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির জন‌্য ‘অবমাননাকর’, ‘কুরুচিকর’ ও ‘অসামাজিক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সিরিয়ালটি নারীদেরও ‘হেয় প্রতিপন্ন’ করছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামুনুর রশীদ বলেন, “বিদেশি ভাষার সিরিয়াল এনে এক অশুভ ব্যবসা চলছে। এসব সিরিয়ালের উপাদানগুলো আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী।”

টেলিভিশনে নাটক ও অনু্ষ্ঠান চলাকালে ঘণ্টায় ১০ মিনিটের বেশি বিজ্ঞাপন না দেখানোর দাবি জানান তিনি।

বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে দাবি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম।

“স্বাধীনতার মূল্যবোধ, ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় আমরা আজ আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সংস্কৃতি যখন বিপন্ন তখন আমাদের পথে নামা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না,” বলেন তিনি।

বিজয় দিবসে ‘সুলতান সুলেমান’ প্রচারের সমালোচনা করে টেলিভিশন নাটক নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, “দীপ্ত টিভি এক ‘নব্য রাজাকার’।”

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে দীপ্ত টিভির কর্তাদের সমালোচনায় সরব হন এফটিপিওর সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত, অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য সচিব আহসান হাবীব নাসিম, অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ, নাদের চৌধুরী, আমিরুল হক চৌধুরী, কে এস ফিরোজ, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম, নওশিন, স্বাগতা, শামীমা তুষ্টি।

চ্যানেলে ডাবিংকৃত সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলগুলো শিল্পী ও কলাকুশলীদের ‘রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা।

“দীপ্ত টিভির ‘সুলতান সুলেমান’ ছাড়াও লোগোটি সরিয়ে ফেললেও এটি একটি ভারতীয় চ্যানেলের রূপ নেবে। এরা যে বাংলা নাটকগুলো প্রচার করছে সেগুলোও ভীষণ অরুচিকর, অসামাজিক। এগুলো পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যায় না।”

অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ বলেন, “আমরা শিল্পী-কলাকুশলীরা নানাভাবে ব্যবহৃত হয়েছি। লক্ষ রাখতে হবে, আমরা যেন আর কোনোভাবে ব্যবহৃত না হই।”

বেলা ১২টার দিকে অবস্থান কর্মসূচির শেষে মামুনুর রশীদ জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় একুশে টিভির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন তারা।

এরপর ২৮ ডিসেম্বর এসএটিভি এবং ২৯ ডিসেম্বর মাছরাঙা টিভির কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন তারা।

শিল্পী-কলাকুশলীদের আন্দোলন নিয়ে দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী উরফী আহমদ বলেন, “তারা মাত্র একবারই এসেছেন। এরপর থেকে উনারা আন্দোলন করে আসছেন, আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

“আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, আলোচনার মাধ্যমে আসলে সমাধান হওয়া উচিৎ। আমরা এখনও আলোচনার পথটি খোলা রেখেছি।”

বিজয় দিবসে ‘সুলতান সুলেমান’ সম্প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিজয় দিবসে আমরা দেড় ঘণ্টা সরাসরিসহ মোট সাড়ে নয় ঘণ্টা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করেছি, যার মধ্যে তিনটি প্রামাণ্যচিত্রও রয়েছে। আমাদের এ ভালো কাজগুলো তারা না বলে, শুধু এটিই বলছেন।”

কেবল টিভি উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মীর হোসাইন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে, এ ধরনের বক্তব্য প্রদান ঠিক নয়। আলোচনাসাপেক্ষেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”