থমকে আছে ‘আমার বাবা’, বাদ পড়লেন মৌসুমী

বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বে্ঙ্গল চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরাম গঠন করে তরুণ নির্মাতাদের অনুদান দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা। অনুদানপ্রাপ্ত পাঁচ চলচ্চিত্রের তিনটিরই নির্মাণ সমাপ্তির পথে হলেও, ‘আমার বাবা’ ও ‘ইতি পলাশ’ সিনেমাদুটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2016, 03:06 PM
Updated : 15 Nov 2016, 03:06 PM

‘আমার বাবা’র পরিচালক আশেুতোষ সুজন ও ‘ইতি পলাশ’-এর নির্মাতা আদনান কবিরের বিরুদ্ধে অনুদানের অর্থ অপচয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে বেঙ্গল-এর পক্ষ থেকে। ওদিকে সুজন দাবি করেছেন ‘অপেশাদারী’ কারণে তার প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছে বেঙ্গল ফোরাম।

এমনকী বাজেট স্বল্পতার কারণে ‘আমার বাবা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আগেই চুক্তিবদ্ধ করা চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে বাদ দিতেও বাধ্য হয়েছেন- বলেও দাবি করেছেন সুজন।

২০১৫ সালের ১ মার্চ বেঙ্গল চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরাম দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে পাঁচটি চলচ্চিত্রকে অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয় রতন পালের ‘ইসমাইলের মা’, সৈয়দা নিগার বানুর ‘নোনা পানি’, আদনান কবিরের ‘ইতি পলাশ’ এবং আশুতোষ সুজনের ‘আমার বাবা’। নির্বাচিত অন্য ছবিটি হলো হুমায়রা বিলকিসের প্রামাণ্যচিত্র ‘মাই লং রোড টু স্কুল’।

এখন অনুদান কর্তৃপক্ষ ও নির্মাতার দ্বন্দ্বের জের ধরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে ‘আমার বাবা’র ভবিষ্যত। 

দুইদিন শুটিংয়ের পরও বাজেট স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে চলচ্চিত্রটি থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্মাতা সুজন।

অনুদান প্রদানের দেড় বছরের মাথায় তিনটি চলচ্চিত্রের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকল্পটির সমন্বয়ক এন রাশেদ চৌধুরী। তিনি জানান, এরই মধ্যে হুমায়রা বিলকিসের ‘মাই লং রোড টু স্কুল’ প্রামান্য চিত্রের শুটিং শেষ হয়েছে। চলছে নির্মাণ পরবর্তী কাজ। নির্মাতা রতন পালের ‘ইসমাইলের মা’ সিনেমাটির শুটিং শেষ হয়েছে চলতি সপ্তাগে। অন্যদিকে সৈয়দা নিগার বানু পরিচালিত ‘নোনাপানি’র শুটিংও সন্তোষজনক সমাপ্তির পথে।

তবে, আশুতোষ সুজনের ‘আমার বাবা’ ও আদনান কবিরের ‘ইতি পলাশ’ চলচ্চিত্রটির বিষয়ে নাখোশ প্রকল্প পরিচালক রাশেদ। 

তিনি বলেন, “প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর সর্বপ্রথম সুজনকেই আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ি ছয় লাখ টাকা প্রদান করি। এর মধ্যে এক লক্ষ টাকা দিয়ে চলচ্চিত্রটিতে মৌসুমীকে চুক্তিবদ্ধ করেন তিনি। দুইদিনের শুটিংয়ের জন্য বরিশালেও যান। কিন্তু ফিরে এসে তিনি জানান, যে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে তা চলচ্চিত্রে ব্যবহারের অনুপযোগী। এবং চরিত্রটিতে মৌসুমীকেও রাখতে চাননা তিনি। এ বিষয়ে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছি তাকে।”

রাশেদ আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে আশুতোষ সুজনকে দেয়া অনুদানের ছয় লাখ ও আদনান কবিরকে দেয়া চার লাখ টাকা অপচয়ের কারনে আমরা এ চলচ্চিত্রদুটির বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবো বলে জানাই তাদের। তবে, আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্ত, চলতি মাসে অথবা ডিসেম্বরেই তাদের সঙ্গে বসে আমাদের পূর্ণাঙ্গ তত্বাবধায়নে চলচ্চিত্রটি নির্মাণে সহযোগিতার শর্তে অনুদান প্রক্রিয়া সচল রাখা।”

এদিকে নির্মাতা আশুতোষ সুজন গ্লিটজকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অনুদানের টাকা দেয়া হচ্ছে না আমাকে। সিনেমাটির কাজও এ কারণে সম্পূর্ণ করতে পারছিনা।” 

নন্দিত কথাসাহিতিক্য হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার বাবার জুতা’ শিরোনামের একটি ফিচার ও তাঁর মা আয়েশা ফয়েজের লেখা ‘জীবন যেমন’ বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে ‘আমার বাবা’ সিনেমাটির গল্প। চলচ্চিত্রটিতে হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। 

গেলো বছর আগস্টে বরিশালের পিরোজপুরে চলচ্চিত্রটির জন্য দুইদিনের ডামি শুটিংও করেন নির্মাতা সুজন। সে বছরের সেপ্টেম্বরেই পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা ছিলো চলচ্চিত্রটির শুটিং। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও তা আর শুরু হয়নি। নির্মাণের এ দীর্ঘসূত্রিতার জন্য চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরামের গড়িমসিকেই দায়ি করেছেন আশুতোষ সুজন। 

তিনি বলেন, “তারা অপেশাদারী আচরন করেছেন। শোকজ লেটারও অফিসিয়ালি দেননি। আমাদের অনুদানের টাকা বন্ধ রেখে তারা নিজেদের সিনেমা বানাচ্ছেন। এ জন্যই আমাদের অর্থ পেতে দেরি হচ্ছে।”

চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে চলচ্চিত্রটি থেকে বাদ দেয়া প্রসঙ্গে আশুতোষ বলেন, “মৌসুমীকে সিনেমাতে না রাখার কারণ বাজেট। উনাকে নিয়ে বর্তমান বাজেটে সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। আমি বাজেট স্বল্পতার কারনে অনেক কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। বর্তমান বরাদ্দকৃত বাজেটেই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ শেষ করতে চাই আমি।” 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুনে যাত্রা শুরু করে ‘বেঙ্গল চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরাম’। নবীন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতা নির্বাচনে ফোরামটি সারা দেশ থেকে চিত্রনাট্য জমা দেয়ার আহ্বান জানায়। জমা পড়া ১২৬টি চিত্রনাট্য থেকে অনন্য মৌলিক ভাবনা এবং চলচ্চিত্রিক সম্ভাবনার ভিত্তিতে নির্বাচিতদের নিয়ে যথাযথ কর্মশালার পর যাচাই বাছাইয়ের পর জুরি বোর্ডের সদস্যরা চূড়ান্ত পাঁচটি ছবিকে অনুদানের জন্য নির্বাচিত করেন।