বেঙ্গলের উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব ২৪ নভেম্বর থেকে

ধ্রুপদী সংগীত ও নৃত্য নিয়ে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব এবার শুরু হবে ২৪ নভেম্বর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 12:01 PM
Updated : 24 Oct 2016, 12:01 PM

পাঁচ দিনের এই উৎসব এবার উৎসর্গ করা হচ্ছে সদ‌্য প্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হককে।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন তাদের পঞ্চমবারের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরে।

আগের মতোই ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলবে সুর-তাল ও লয়ের খেলায় বৈচিত্র্যময় ধ্রুপদী পরিবেশনা। উৎসবে অংশ নিতে নিবন্ধন শুরু হবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।

সংবাদ সম্মেলনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, উপদেষ্টা আবদুল মোমেন, মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাছারাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং ব্র্যাংক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন্স জারা মাহবুবও ছিলেন।

আবুল খায়ের বলেন, “নানা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের আয়োজন নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল। তবে সরকারি উদ্যোগ ও আগ্রহ বিভিন্ন মহলের অঙ্গীকার দূর করে দিয়েছে সেই শঙ্কা।”

সংগীতের মাধ্যমে ‘চিত্তের বিকাশ’ ঘটিয়ে মৌলবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।

এবারের আয়োজন

এবারের উৎসবে অংশ নেবেন বাংলাদেশের ১৬৫ জন শিল্পী। উদ্বোধনী পর্বে নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় নৃত্যনন্দন দলের প্রায় ৬০ জন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙ্গা গানে মণিপুরী, ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও কত্থক রীতির রূপায়ন পরিবেশন করবেন।

উৎসবের চতুর্থ দিনে কত্থক নৃত‌্য পরিবেশন করবেন মুনমুন আহমদ ও তার দল। উৎসবের শেষ দিন প্রিয়াংকা গোপের একক কণ্ঠের খেয়ালের সঙ্গে থাকবে তার নির্দেশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন মোহাম্মদ শোয়েবের নির্দেশনায় তার শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করবে নিরীক্ষামূলক রাগ সঙ্গীত। এছাড়া উৎসবের বিভিন্ন দিনে সেতার, সরোদ ও তবলায় যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

এবারের উৎসবের অংশ নিচ্ছেন বেনারস ঘরানার পদ্মবিভূষণ খেতাবপ্রাপ্ত ৮৭ বছরের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী। উৎসবের প্রবীণতম এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি ও টপ্পার পরিবেশনায় ছড়াবেন পূরব অঙ্গের রূপ-রস।

প্রথম দিনের পরিবেশনায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি শিল্পী আলাউদ্দিন খাঁর বংশধর ওস্তাদ আশিষ খাঁ।

আয়োজকরা জানান, এবারের উৎসবে প্রাধান্য পাবে নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা।

পুরুষ ও নারী কণ্ঠের ভিন্ন স্তরের রাগে পরিবেশিত জাসরাঙ্গি শীর্ষক যুগলবন্দি পরিবেশনায় অংশ নেবেন জয়পুর আত্রোলির বিদুষী অশ্বিনী ভিদে ও মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত সমঞ্জীব অভয়ঙ্কর।

উৎসবের প্রথম দিনে পশ্চিমা ও ঢংয়ে বেহালা বাজিয়ে শোনাবেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত ড. এল সুব্রহ্মণ্যন। প্রেরণাসঞ্চারী ওড়িশি নৃত্যের আশ্রয়ে মঞ্চ আলোকিত করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তার শিষ্যা আরুশি মুডগাল।

এ উৎসবের প্রথমবারের মতো শোনা যাবে ম্যান্ডোলিনের সুর। বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত বংশীবাদক রনু মজুমদার ও ইউ রাজেশ।  

গত বছরের মতো এবারও অনন্য এই সঙ্গীতায়োজনে অংশ নেবেন প্রবাদপ্রতিম বাঁশরিয়া পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। শোনা যাবে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার মোহনীয় সন্তুরের সুর।

কণ্ঠসঙ্গীত ও বাদ্যের নানা পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবতী, পণ্ডিত উলহাস কশলকর, ওস্তাদ রশিদ খান, পণ্ডিত কুশল দাস, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। শোনা যাবে বিশিষ্ট সেতার পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়ের সেতারের বাজনা। থাকবে পদ্মভূষণপ্রাপ্ত কিরানা ঘরানার কোকিলকণ্ঠী শিল্পী ড. প্রভা আত্রে এবং ফরুকাবাদা ঘরানার খ্যাতিমান তবলিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোধ্যায় ও তার ছেলে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশনা।

বাঁশি ও বেহারার যুগলবন্দি পরিবেশনায় রং ছড়াবেন প্রবীণ গোধকিণ্ডি ও রাতিশ টাগডের। যৌথ তবলাবাদনে অংশ নেবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসী ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

এছাড়া বিভিন্ন মেজাজের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উপস্থাপন করবেন সেতারে রাগসঙ্গীতের নন্দিত শিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়, কর্ণাটকি সঙ্গীতে পারদর্শী ভগ্নিদ্বয় রঞ্জনী ও গায়ত্রী, কর্ণাটকি বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন, খেয়ালিয়া আরবতহী আঙ্কালিকার, জয়তীর্থ মেউন্ডি ও কুমার মারদুর।

কনিষ্ঠতম শিল্পী হিসেবে উৎসবে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত ফুলঝুরি খান। সাত বছরের এই শিল্পী সেতার বাজিয়ে শোনাবেন। 

উৎসবে অংশগ্রহণের নিয়ম-নীতি

প্রতিবছরের মতো অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে প্রবেশপত্র। ১ নভেম্বর থেকে শুরু থেকে সীমিত সময়ের জন্য এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে বলে আয়োজকরা জানান।

অনলাইনের বাইরে ধানমন্ডির ৭/এ সড়কের ৬০ নম্বর বাড়ির জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ এবং এয়ারপোর্ট রোডের খিলক্ষেতের বেঙ্গল সেন্টারে সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে। 

উৎসব শুরুর প্রথম দুই দিন পর্যন্ত অফ-সাইট নিবন্ধন চললেও তৃতীয় দিন থেকে এ সুযোগ থাকবে না।

কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না উৎসব আঙিনায় এবং থাকবে না গাড়ি পার্কিয়ের সুবিধা। প্রতিদিন রাত ১টায় বন্ধ হয়ে যাবে উৎসবের প্রবেশ পথ। ভোরে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে ফেরার জন্য বাস থাকবে নির্দিষ্ট রুটে।