হার না মানা শ্রাবণ্য

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা বসে আছেন রেস্টুরেন্ট। পেছনেই চলছে দুই বান্ধবীর আড্ডা। ‘আর বলিস না, সে কি স্পিড, থামাথামির কোন কাহিনিই নাই…”। মাশরাফি ভাবছিলেন তাকে নিয়েই হয়তো চলছিল গল্প; অথচ’ পেছনে ফিরে দেখলেন নতুন মোবাইল ফোনকেই ইঙ্গিত করছিলেন তরুণীরা।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 01:05 PM
Updated : 25 Oct 2016, 01:04 PM

কথা হচ্ছে, নতুন এক মোবাইল ফোনসেট বিজ্ঞাপন নিয়ে, যেখানে মাশরাফি্কে ছাপিয়ে নজর কেড়েছেন সেল্ফি তোলা চঞ্চল এক তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করা শ্রাবণ্য তৌহিদা।

কেবল অভিনয় আর মডেলিঙই নয়, শ্রাবণ্য নিজের আলাদা পরিচিতি গড়েছেন ক্রিকেট বিষয়ক টক শোয়ের উপস্থাপনা করেও। আর বিনোদন জগতের ব্যস্ততার বাইরে তিনি পরিচিত একজন চিকিৎসক হিসেবেও।

সকাল থেকে ঘুমোনো আগ পর্যন্ত শ্রাবণ্যরও কোনো থামাথামি নেই। গাজীপুরে একটি হাসপাতালের চিকিৎসক তিনি। চলছে এফসিপিএস ফাইনাল পার্ট পরীক্ষার প্রস্তুতি। সঙ্গে পুরোদমেচলছে মডেলিং, উপস্থাপনা ও অভিনয়।

এতোকিছু একসঙ্গে কিভাবে সামলান?

অলরাউন্ডার শ্রাবণ্য হাসতে হাসতে বললেন, “কেন যে দিনটা চব্বিশ ঘন্টায় শেষ হয়ে যায়। আরও কয়েক ঘন্টা বেশি হলে কি ক্ষতি হতো!”

জিটিভিতে প্রচারিত ‘ক্রিকেট ম্যানিয়া’র উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি।

প্রতিটি ম্যাচ শেষেই প্রাক্তন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে শ্রাবণ্য বসছেন বিশ্লেষণে। ম্যাচ পরবর্তী এ আলোচনা শুনলে মনে হতেই পারে, ক্রিকেট নিয়ে অগাধ জ্ঞান আছে তার। কী করে হল এমন?

শ্রাবণ্য বললেন, “ক্রিকেট নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। নিয়মিত খেলা দেখা, ক্রিকইনফো, ইএসপিএন আর সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ম্যাগাজিনগুলোতে চোখ রাখি আমি। প্রথম দিকে একটু ঝামেলা মনে হত, এখন একদম ঠিক হয়ে গেছে।”

দেশে নারীদের ক্রিকেট উপস্থাপনা ও ধারাভাষ্যে অংশগ্রহনের ইতিহাস খুব বেশি দিন আগের নয়। ক্রিকেট উপস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে শ্রাবণ্য মনে করেন কিছুটা ভূমিকা আছে তারও।

বললেন, “ক্রিকেট উপস্থাপনায় শুধু পুরুষের উপস্থিতির যে ট্রেন্ডটা, ওটা এদেশে আমরাই ভেঙেছি। আমি বলবো আমরা তিনজন ভেঙেছি; মানে- আমি, সামিয়া আফরিন এবং মারিয়া নূর। জিটিভিকে থ্যাংকস অনেকদিন ধরে এই সুযোগটা দেয়ার জন্য।”

ক্রিকেট নিয়ে এখন টক শোয়ের উপস্থানা করলেও, একসময় নিজেই খেলতেন বলেও জানালেন তিনি।

বলেন, ছোটবেলায় বড় ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে যেতেন তিনি। ব্যাটিং-বোলিং খুব একটা না পেলেও তার দায়িত্ব পড়তো উইকেট কিপিংয়ে। এখন না খেললেও নিয়মিত খেলা দেখা ও উপস্থাপনা দুটোই খুবই উপভোগ করছেন তিনি।

বললেন, “আমার প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি যা অনেকেই পারেন নি। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স খুব ভালো লাগে আমার।”

সাকিবে মুগ্ধ হলেও প্রশংসায় ভাসালেন অধিনায়ক মাশরফিকেও।

“আর মাশরাফি! আমাদের ক্যাপ্টেন। তার পারসোনালিটি আমাকে খুব মুগ্ধ করে। খেলার জন্য তারযে ডেডিকেশন তা পৃথিবীর কোন খেলোয়াড়ের নাই। ডাক্তার হিসেবে তার শারিরিক যন্ত্রনাটাও আমি খুব অনুভব করতে পারি।”

জীবনটাকেও কখনও ক্রিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন কী?

হাসতে হাসতে শ্রাবণ্য বললেন, “দেখুন, মেডিকেলের পড়াশোনা কখনোই শেষ হবে না। সারাজীবনই এ চিকিৎসক চরিত্রটা ধারন করতে হবে আমার। ফলে ডাক্তার হিসেবে আমি টেস্ট খেলছি! আর যেহেতু লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি বেশি, এটা আমার কাছে ওয়ান ডে ম্যাচ।”

আর মডেলিং?

“ওটাতো টিটুয়েন্টি,” হাসতে হাসতেই জবাব দিলেন শ্রাবণ্য।

‘ক্রিকেট ম্যানিয়া’ ছাড়াও শ্রাবণ্য একুশে টেলিভিশনের সেলিব্রেটি টক শো উপস্থাপনা করছেন। সামনেই জিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আজকের অনন্যা’ উপস্থাপনায়ও দেখা যাবে তাকে।

প্রায় সব বড় ব্র্যান্ডের বিলবোর্ড মডেল হয়েছেন তিনি। করেছেন পনেরটিরও বেশি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন। ব্যক্তিজীবনে একজন চিকিৎসক হওয়ার কারণে অভিনয়ের সময় পান না তেমন। আর তাই টিভি ধারাবাহিকের চেয়ে এক ঘন্টার নাটকেই বেশি আগ্রহী তিনি।

জানালেন, সিনেমায়ও ডাক আসছে তার। কিন্তু এখনই নয়। খুব পছন্দের কোন স্ক্রিপ্টের জন্য শ্রাবণ্য আছেন অপেক্ষায়।

নিজের স্বপ্ন ছুঁতে চাইছেন শ্রাবণ্য। এ জন্য পরিবারের সঙ্গেও কম লড়তে হয়নি তার। তবু বাবার একটা উক্তি হঠাৎ মনে পড়ে গেলো তার।

“জানেন, বাবা বলেন- আমি এক সুপার ওমেন। উনি বিশ্বাস করেন, আমি যা চাই তাই করতে পারি। আমি কোনো কিছুতে না বলি না। কোনো কিছু শুরু করলে তা আমাকে শেষ করতেই হবে। আমি কখনোই হেরে যেতে চাই না।”    

এভাবেই নিজের অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্স দিয়ে জীবনের ম্যাচে জয়ী হতে চান শ্রাবণ্য। মেধা. শ্রম এবং চেষ্টা দিয়ে পূরণ করতে চান নিজের স্বপ্নগুলো।

ছবি: শিথিল রহমান