‘বিরতিহীন নাটক প্রচারের পক্ষপাতি নই’

টেলিভিশনের জন্য নাটক তৈরির ক্ষেত্রে সবসময় সংখ্যার চেয়ে মানের দিকেই বেশি আগ্রহী নির্মাতা কৌশিক শংকর দাস। সম্প্রতি নিজের ক্যারিয়্যার ও নাটক শিল্পের বিভিন্নবিষয় নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 10:52 AM
Updated : 23 Oct 2016, 10:21 AM

গ্লিটজ: প্রথমেই জানতে চাই আপনার নির্মিত কাজের সংখ্যা কম কেন?

কৌশিক শংকর দাস: আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় কম কাজ করেছি। আমার এমনও ঘটনা আছে যেখানে বছরের দুটো ঈদে আমার কেবলমাত্র একটি বা দুটো নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।আমি কখনোই নাটকের সংখ্যার উপর গুরুত্ব দিইনি। আজ পযর্ন্ত যখনই কাজ করেছি কিংবা যতগুলো কাজ করার সুযোগ পেয়েছ, ব্যাটে-বলে মিলে গেলেই কেবলমাত্র আমি সেই কাজগুলো করেছি।

গ্লিটজ: আপনি ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচিত সদস্য। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের দর্শকদের বিদেশী টিভি চ্যানেলের নাটক থেকে দেশীয় চ্যানেলমুখী করার ক্ষেত্রে আপনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?

কৌশিক শংকর দাস: আমি সবসময়ই গল্পর্নিভর নাটক নির্মাণ করি। কারন দর্শকের কাছে সবার আগে গল্পটার প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। গল্পটা ভালো লাগলেই দর্শকরা নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা সিনেমাদেখতে পছন্দ করেন। সেই দিক থেকে আমার অবস্থানের ব্যতিক্রম কখনোই হবে না। যদি আমি ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য নির্বাচিত নাও হতাম তারপরেও দর্শকের চাহিদার কথা চিন্তা করেই গল্প র্নিভরকাজ করতাম।

গ্লিটজ: আমাদের দর্শকদের বিদেশী টিভি চ্যানেলমুখী হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কি কারণ থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

কৌশিক শংকর দাস: আমাদের দর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা বিদেশী টিভি চ্যানেলের নাটকগুলো দেখছেন। কিন্তু তারা মূলত নাটকের গল্পের গাঁথুনির কারণেই সেই টিভি চ্যানেলগুলোর নাটকগুলোদেখছেন।

আমিও মাঝে মাঝে সেসব বিদেশী চ্যানেলগুলোর নাটকগুলো দেখে থাকি। তাদের নির্মীত নাটকগুলোর গল্পের গাঁথুনি খুব মজবুত। কিন্তু আমাদের দেশে গল্পের উপরও জোর দেওয়া হয় না, একইভাবের্নিমানের উপরও খুব বেশি জোর দেওয়া হয় না।সত্যি বলতে আমাদের দেশে যেভাবে কাজ করছি এটা কাজ করার সঠিক কোন পন্থা নয়। যেহেতু আমরা টেলিভিশন শিল্পের জন্য কাজ করছি, আমরাকাজ পাচ্ছি, আমাদের কাজ তৈরি করে দিতে হবে এবং সেগুলো টেলিভিশনগুলোতে প্রচার করা হবে সেক্ষেত্রে অনেক সময়ই আমাদেরকে কাজের ক্ষেত্রে কম্পোমাইজ করতে হয়। কিন্তু যতদিন পর্যন্তআমরা কম্প্রোমাইজ করবো ততদিন পর্যন্ত আমাদের দর্শকরা অন্য দেশের টিভি চ্যানেলের নাটকগুলো দেখছেন কেনো?-এই প্রশ্ন আমরা তুলতে পারবো না।

আমরা যখন কাজের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কম্প্রোমাইজ না করে সঠিক উপায়ে সঠিক কাজ করবো তখনই আমরা দর্শকদের প্রশ্ন করতে পারবো, আমরা তো ভালোমত কাজ করছি তাহলে এখন কেনবিদেশী টিভি চ্যানেলমুখী হচ্ছেন? আমরা আসলে এই প্রশ্ন করার মতো অধিকার বোধহয় হারিয়ে ফেলেছি।

গ্লিটজ: নাটক কিংবা টেলিফিল্মের ক্রয়ের ক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর এজেন্সির র্নিভরশীলতাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

কৌশিক শংকর দাস: আমার দিক থেকে বলতে চাই এখানে শুভ ও অশুভ দুটো লক্ষণই রয়েছে। শুভ লক্ষণ- এই অর্থে যে, এখানে অনেক অর্থ লগ্নি হচ্ছে। এজেন্সির মাধ্যমে অনেক নতুন কাজ হচ্ছে।অনেক নতুন নাটক নির্মাণ হচ্ছে যেগুলোর জন্য তারা বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করছেন। প্রচুর নতুন অভিনেতা, অভিনেত্রী, চিত্রনাট্যকার, নির্মাতারা বিশেষ করে যারা তরুণ তারা মিডিয়াতে কাজ করারসুযোগ পাচ্ছে। সেটাই অবশ্যই একটা শুভ লক্ষণ। কারণ তরুণেরা কাজ শিখতে পারলে এবং ভালো কাজের সুযোগ পেলে তারাই এই শিল্পটাকে একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে সহযোগিতা করতেপারবে।

কিন্তু আমি অশুভ লক্ষণ যেটাকে মনে করি, তা হলো- এখানে এই কাজ গুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রে মনে হয় কোন কোয়ালিটি কন্ট্রোলের বিষয়টি থাকে না। একটি নাটক যখন তৈরি করছি কিংবা নির্বাচনকরছি বা কাস্টিং করছে বা শুটিং করছি বা সম্পাদনার কাজটি শেষ করছি, এরপরে সেই কাজটি টেলিভিশনে প্রচারের উপযোগী হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি কেউ দেখছে না।

গ্লিটজ: তরুণ নির্মাতাদের কাজের ভিড়ে আপনার মতো সিনিয়র নির্মাতারা কি কোনভাবে অবহেলিত হচ্ছেন বলে মনে হয়?

কৌশিক শংকর দাস:  আসলে অবহেলিত কিনা এই ব্যাপারে কেবল তারাই বলতে পারবেন যারা বেশি কাজ করেন। তবে এটাও ঠিক যারা অপেক্ষাকৃত তরুণ নির্মাতা অর্থাৎ বয়সে নয় কাজে যারা তরুণ,তারা কাজের ক্ষেত্রে সুযোগ বেশি পাচ্ছে।

এর অন্যতম কারণ হলো এখন অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেল। কিন্তু আমরা যারা কাজ শুরু করেছিলাম তখন ছিলো পাঁচ-ছয়টি টেলিভিশন চ্যানেল। সুতরাং চ্যানেল বাড়ছে সেই সঙ্গে কাজের সংখ্যাওবাড়ছে।

গ্লিটজ: বতর্মান সময়ে আমাদের নাটকের শিল্পে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট কি কাজ করছে?

কৌশিক শংকর দাস:  এটা  কোনো সিন্ডিকেটের বিষয় নয়। এমনটি সব সময়ই ছিলো। এখন হয়ত এজেন্সিগুলো তাদের পরিচিত নির্মাতাদের দিয়ে বেশি কাজ করছে বলে হয়ত এই বিষয়টি খুব বেশিচোখে ধরা পড়ছে। এটা মোটেও সিন্ডিকেট নয়। একটা পছন্দের অপছন্দের ব্যাপার তো থাকেই। কিছু টেলিভিশন চ্যানেল আবার কিছু নির্মাতাদের পছন্দের একটা ব্যাপারও থাকে। এই বিষয়টি আগেওছিলো।

গ্লিটজ: টেলিভিশনে বিরতিহীন নাটক প্রচারের মাধ্যমে দর্শককে ফিরিয়ে আনা কি আদৌ সম্ভব?

কৌশিক শংকর দাস: টেলিভিশনে বিরতিহীন নাটক প্রচার আমি একেবারেই পক্ষপাতি নই, কারন এটা টেলিভিশন। আমরা যখন টেলিভিশন দেখি তখন অনেক কিছুই করি। সেই সময় হয়ত আমরা চাখাচ্ছি, গল্প করছি তার ফাঁকে ফাঁকে আমরা টেলিভিশনটা দেখছি। টেলিভিশনে মনোযোগ দিয়ে টানা একঘন্টা দেখা কোনদিনই সম্ভব হবে না। আর এটা কোনদিনই সম্ভব হয়নি। এই কারণেই টেলিভিশনেবিজ্ঞাপন প্রচারের প্রচলন হয়।

প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে গেলে আমরা বিরতিহীন সিনেমা দেখছি কারন সেই সময় সেই অন্ধকার রুমে পর্দায় তাকিয়ে সিনেমা দেখা ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই। কিন্তু টেলিভিশনে আমরাযদি বিরতিহীন নাটক প্রচার করলেই বেশি দর্শক পাবো এটা মোটেও ঠিক নয়।

এই বিরতির ব্যাপারেও আমার একটি কথা ও অভিযোগ দুটোই আছে। এটা সত্যি আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অনেক বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার হয় কিন্তু বতর্মানে সেই বিজ্ঞাপন প্রচারের মাত্রাটাবেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনেক কমে এসেছে। কিন্তু আমাদের মাথায় একটা কথাই ঢুকে গিয়েছে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হলেই তা পনেরো মিনিট প্রচার হবে। কিন্তু এটা মোটেও সত্যি নয়।বিদেশী টিভি চ্যানেলেও বিজ্ঞাপন শুরু হলে দশ-বারো মিনিট প্রচারিত হয়। সেই সেই দিকে কেউ নজর দেয় না।