আমি নায়িকা ম্যাটেরিয়াল না: নাবিলা

শুক্রবার সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে অমিতাভ রেজা র্নিমিত সিনেমা ‘আয়নাবাজি’। সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মাসুমা রহমান নাবিলা। সিনেমার প্রচারনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্লিটজের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠে ছিলেন তিনি। আড্ডার চুম্বক অংশটুকু তুলে ধরা হলো ‘গ্লিটজ’ এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2016, 05:02 PM
Updated : 1 Oct 2016, 08:48 AM

গ্লিটজ: ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার মাধ্যমে ক্যারিয়্যারের জন্য কোনো বাজি ধরলেন?

নাবিলা: নতুনভাবে দর্শকদের বিনোদিত করার বাজি ধরতে যাচ্ছি। সবসময় আমাকে এক আঙ্গিকে দেখলেও এবার নতুন আঙ্গিকে দর্শকরা আমাকে দেখতে পাবেন। দর্শকরা সবসময় আমাকে ভালোবেসে অনেক বেশি সহযোগিতা করেছে ও অনেক বেশি ভালোবাসা দিয়ে তাদের হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছে এবং অনেক বেশি পছন্দও করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে চলচ্চিত্রে অভিনয় একেবারেই ভিন্ন একটা জিনিস যেটা আমি আগে কখনোই করিনি। তবে জানি না দর্শকদের ভালো লাগবে না খারাপ লাগবে কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি। বলতে গেলে এই আনন্দে দর্শকদের বিনোদিত করার বাজি ধরেছি।

গ্লিটজ: ঢালিউডের বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকাদের সঙ্গে অফ-ট্র্যাক সিনেমার নায়িকা হয়ে টক্করের জন্য কতটুকু প্রস্তুত মনে করেন নিজেকে?

নাবিলা: আমি মোটেই কোন টক্কর দিচ্ছি না। আমার টক্কর দেওয়ার মনোভাবও নেই। আসলে আমার গায়ে নায়িকার তকমাটা লেগে গিয়েছে। আমি কখনোই নিজেকে নায়িকা হিসেবে দেখি না। আমি মূলত সিনেমায় একটি চরিত্রে অভিনয় করছি। বিষয়টাকে এভাবেই দেখছি আমি। গতানুগতিকভাবে সিনেমার নায়িকা বলতে যেমনটি বোঝানো হয়ে থাকে এই সিনেমায় আমার অভিনীত চরিত্রটি মোটেও সে রকম নয়। এটি কেবলই একটি চরিত্র যা সিনেমার পর্দায় রূপায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া সিনেমাতেই যে আমি নিয়মিত হবো তেমনটিও নয়। তাই কারো সঙ্গে টক্কর দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

গ্লিটজ: তাহলে কি আপনি ঢালিউডে ক্ষণিকের অতিথি?

নাবিলা: আমি মোটেও ক্ষণিকের অতিথি না। আমি অবশ্যই কাজ করতে চাই। কিন্তু আমি যে ধরনের সিনেমায় কাজ করতে চাই সে ধরনের কাজ আমাদের দেশে খুব একটা হয় না। ‘আয়নাবজি’র মতো সিনেমা কিন্তু সচরাচর র্নিমিত হয় না। আমি সিনেমা মেটেরিয়াল নই, এমনকি আমি নায়িকা মেটেরিয়ালও না। এটা আমার ভালোমতোই জানা আছে। কাজেই যে ধরনের গল্পে এবং যে ধরনের চরিত্রে আমাকে মানাবে, সেই ধরনের গল্প ও চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব যদি পাই তাহলে আমি অবশ্যই অভিনয় করবো।

গ্লিটজ: সম্প্রতি ছোট পর্দার জনপ্রিয় এক উপস্থাপিকা ঢালিউডের নায়িকা হয়েছেন। আপনিও তো উপস্থাপিকা থেকে নায়িকা হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনি কি কারো পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন?

নাবিলা: আমি কারো পদাঙ্ক অনুসরণ করিনি। আমি যদি কারো পদাঙ্ক অনুসরণ করতাম তাহলে আমি উপস্থাপনার জায়গাটা ছেড়ে দিতাম। কিন্তু আমি উপস্থাপনা মোটেও ছেড়ে দেই নি। বরং আমি এখনো উপস্থাপনা করি এবং সবসময় উপস্থাপনা করে যাবো।

গ্লিটজ: উপস্থাপনার নিয়মিত মুখকে দর্শকরা বড় পর্দার নায়িকা হিসেবে কি সাদরে গ্রহণ করবেন বলে মনে করছেন?

নাবিলা:
 ছোট পর্দা-বড় পর্দা এ ব্যাপারটা আসলে আমার কাছে খুব বড় কোনো বিষয় বলে মনে হয় না। এই বিষয়টা আমি কখনোই বুঝিতে না। আসলে মানুষ সিনেমার নায়িকা বা নায়ককে দেখতে যায় না, আমার কাছে মনে হয় আমরা আসলে সিনেমায় একটি গল্প দেখতে যাই। একটা পুরো সিনেমা দেখতে যাই। সেটাই তো হওয়া উচিত। যদি সেটি একটি ভালো সিনেমা হয় এবং সেই সিনেমার অংশ যদি আমি হই তাহলে মানুষ কেন দেখতে যাবে না? আমি আসলে বড় পর্দা, ছোট পর্দা, উপস্থাপনা এইগুলোকে কখনোই এভাবে ভেদাভেদ করি না। আমি মূলত ভালো কাজ করতে চাই। সেটা যে কোনো মাধ্যমেই হোক।

গ্লিটজ: সিনেমায় আপনার অভিনীত চরিত্র সর্ম্পকে জানতে চাই।

নাবিলা: সিনেমায় আমি হৃদি চরিত্রে অভিনয় করেছি। খুব সাধারন একটি চরিত্র। পাশের বাড়ির একজন মেয়ে। যিনি শিক্ষিত সৃজনশীল একজন মানুষ। যার সবকিছু জানার একটা কৌতুহল থাকে। তার সঙ্গে আয়না’র (চঞ্চল চৌধুরী) পরিচয় হয়। যাকে ঘিরে হৃদির মনের ভিতরে একটা কৌতুহল সৃষ্টি হয়। সেই জায়গা থেকে আয়নাকে তার (হৃদি) খুবই ইন্টেরেস্টিং মনে হয়। তারপরে তাদের মধ্যে একটি সর্ম্পক গড়ে উঠে। ব্যস.. বাকীটা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে জানতে হবে!

গ্লিটজ: ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আপনার চুম্বন দৃশ্যের বিষয়টা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন ?

নাবিলা: আমি কিছুটা বিব্রত ছিলাম এ দৃশ্রটা নিয়ে। কারণ একজন অভিনেতার জন্য হয়ত বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক কিন্তু আমার জন্য বিষয়টি তেমন নয়। আমি যখন প্রথমে শুনেছি এরকম একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে আমাকে, তখন এটা নিয়ে খুব বিব্রত ছিলাম এবং বেশ ভয়ও পেয়েছিলাম। তবে পরে সেটি কাটিয়ে উঠেছি। এ সিনেমা কোনো দৃশ্য বা কোনো মূর্হুতই  আরোপিত নয়। গল্পের কারনেই প্রতিটি জিনিস রয়েছে। প্রেম মানেই তো রোমান্স থাকবেই। যা আমাদের সাধারন জীবনেও থাকে। সেই জায়গা থেকে যদি সিনেমায় আয়না ও হৃদির প্রেম থাকে, যদি প্রেম দেখানো হয় তাহলে রোমান্সও আছে। সেই জায়গা থেকেই এটাকে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া এই দৃশ্যটা এমনভাবে চিত্রায়িত হয়েছে যে তা দেখে দর্শকের মোটেও দৃষ্টিকটু লাগবে না বা এটিকে আরোপিত মনে হবে না। গল্পের সঙ্গেই এটা মানানসই। গল্পের প্রয়োজনেই এ দৃশ্যটিকে রাখা হয়েছে আর সে জায়গা থেকেই এটা করা।

গ্লিটজ: শুনেছি ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার প্রতিটি চরিত্রই নাকি ‘আয়না’ চরিত্রকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে? সেক্ষেত্রে সিনেমাতে আপনি কি পুতুল নায়িকা?

নাবিলা: সিনেমায় আয়নার জীবনে যখন হৃদিতা আসে তখন সে তার জীবনের চলার ভঙ্গি গোছানোর চেষ্টা করে। আয়না তার জীবনে যে পথে চলছিলো তা হয়ত পরিবর্তন করার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই পরিবর্তন করতে আয়না সফল হয় কি হয় না সেটাই সিনেমায় দেখার বিষয়। কিন্তু আয়নার জীবনে এই যে চিন্তটা আসে তা প্রেমের কারনেই হয়েছে। প্রেম তো আয়নার জীবনে দরকার ছিলো। তাহলে আমি (হৃদি) পুতুল নায়িকা কিভাবে হলাম?

গ্লিটজ: প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা আপনার সিনেমা কেন দেখতে যাবেন?

নাবিলা: নতুন নায়িকার সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা কেন দেখতে যাবেন এইভাবে নয় বরং আমি প্রশ্নটাকে এভাবে দেখি যে, দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ‘আয়নাবাজি’ কেন দেখতে যাবেন? একমাত্র আমার জন্য তো সিনেমা নয়। সিনেমা হচ্ছে সবার জন্য। কারণ এই সিনেমায় সবাই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করেছে। তাই সকলেরই এখানে কন্ট্রিবিউশন রয়েছে। সকলের কন্ট্রিবিউশন থেকেই ‘আয়নাবাজি’। আর ‘আয়নাবাজি’ দেখতে যাবেন বিনোদিত হবার জন্য। সিনেমার পুরো সময় জুড়ে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে থাকবেন শুধুমাত্র সিনেমাটি উপভোগ করার জন্য।