বক্স অফিসে কার দাপট!

শাকিব খান ও পরিমণির ছবি মিলিয়ে ঈদুল আজহায় সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে তিনটি সিনেমা। সেক্ষেত্রে বক্স অফিসে এবার কার দাপট ছিল সে খবর গ্লিটজকে শোনালেন ঢাকার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপকরা।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 02:18 PM
Updated : 25 Sept 2016, 02:18 PM

ঈদে সারা দেশে মুক্তি পেয়েছিলো চারটি সিনেমা। যার মধ্যে দুটি ছিল দেশীয় প্রযোজনায় ও বাকী দুটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। কিন্তু ঈদুল আজহায় মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা মাত্র তিনটি।

যেগুলো হল- ‘রক্ত’, ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’। যার মধ্যে দুটি দেশীয় প্রযোজনা ও একটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।

সারাদেশে ১৫৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে দেশীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সুনান মুভিজের প্রযোজিত সিনেমা ‘শ্যুটার।’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন রাজু চৌধুরী। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করছেন শাকিব খান ও নবাগত শবনম বুবলি। প্রেক্ষাগৃহ বুকিংয়ের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কারণে সকলের দৃষ্টি ছিল এই সিনেমাকে ঘিরে।

কিন্তু ‘শ্যুটার’ নাকি আশানুরুপ সাড়া ফেলতে পারেনি এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপকদের কথায়।

বসগিরি।

রাজধানীর মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, “রোজার ঈদে আমাদের প্রেক্ষাগৃহে টিকেট বিক্রির তুলনায় এবারের ঈদে সিনেমার টিকেট বিক্রি তেমন আশানুরুপ হয়নি। টিকেট বিক্রির পরিমাণ গড়পড়তা বলা যেতে পারে। বিগত অন্যান্য বছরের ঈদুল আজহায় টিকেট বিক্রির সঙ্গে তুলনা করলে সেই হিসেবে এই ঈদে টিকেট বিক্রি ভালোই হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “মঙ্গলবার (ঈদের দিন) থেকে আজ পর্যন্ত একটি শো হাউজফুল হয়নি যদিও ঈদের কয়েকদিন মাত্র কয়েকটা শো হাউজফুলের কাছাকাছি হয়েছিলো। তবে সেই শোগুলোর প্রতিটিতে ডিসিগুলো দর্শকে পরির্পূণ ছিলো। মূলত শাকিব খানের সিনেমা বলেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি দেখতে এসেছে। কারণ শাকিব খানের সিনেমার সবসময়েই একটা দর্শকশ্রেণি রয়েছে।”

প্রায় একই সুরে কথা বললেন রাজমণি প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক ওয়াহিদ।

তার ভাষায়, “কুরবানির ঈদে ঢাকা শহরের সিনেমার আসল দর্শকরা মূলত তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। ফলে কখনও এই সময়টায় সিনেমার টিকেট বিক্রি রোজার ঈদের মতো ভালো হয় না। ঈদের পরে মানুষ আস্তে আস্তে শহরে ফিরে আসছে তাই প্রতিদিনই কমবেশি দর্শক প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে আসছে।”

তিনি আরও বলেন, “বতর্মানে সিনেমার দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। কারণ এবার সপ্তাহ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (ঈদের দিন) থেকে। সেই হিসেবে প্রথম সপ্তাহের টিকেট বিক্রির পরিমাণ ছিল গড়পড়তা। প্রতি বছর আমাদের প্রেক্ষাগৃহে কুরবানির ঈদে টিকেট বিক্রির পরিমাণ যেমন থাকে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এইবার মাত্র তিনটি শো হাউজ ফুল ছিল। রোজার ঈদে হাউজ ফুলের সংখ্যা বেশি থাকে কিন্তু কুরবানির ঈদে হাউজফুল শো-য়ের সংখ্যা কম থাকে তবে প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত দর্শক থাকে তাই বিক্রি গড়পড়তা হলেও সবসময়ই ভালো হয়।”

রক্ত।

যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত লেডি অ্যাকশনধর্মী ‘রক্ত’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ৬৩টি প্রেক্ষাগৃহে। বিগ বাজেটের এই ছবি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এসকে মুভিজ। সিনেমাটি র্নিমাণ করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন পরীমণি ও নবাগত রোশান।

প্রেক্ষাগৃহ বুকিংয়ের দিক থেকে সংখ্যার তুলনায় দেশের বড় বড় প্রেক্ষাগৃহের সিংহভাগই ছিল ‘রক্ত’ সিনেমার দখলে। মুক্তির আগেই ‘ডানাকাটা পরী’ গানের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারলেও প্রেক্ষাগৃহে নাকি দর্শকের তেমন জোয়ার টানতে পারেননি পরীমণি।

এমনই আভাস পাওয়া গেল রাজধানীর সনি প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক সামাদের কন্ঠে।

তিনি বলেন,“ ঈদের সিনেমা হিসেবে যে কোন সিনেমাই ভালো ব্যবসা করা কথা। কিন্তু এবারের ঈদে সিনেমার ‘রক্ত’ আমাদের আশানুরুপ ব্যবসায়িক মুনাফা দিতে পারে নি। ঈদের দিন থেকে শুরু করে একটি শো হাউজফুল হয়নি। প্রতিটি শোতে মাত্র একশত কিংবা বড়জোড় দু্ইশত দর্শকদের উপস্থিতি থাকলে কি কোন সিনেমা হাউজফুল হতে পারে? এটা কি আদৌ সম্ভব। সত্যি বলতে এবারের ঈদে কোন সিনেমাই ভালো ব্যবসা করছে না। তবে যদি এই সিনেমায় পরীমণির বদলে মাহিয়া মাহি অভিনয় করতো তাহলে দর্শকদের একটা জোয়াড় বইতো। যদিও পরীমণি তার অভিনয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে।”

তবে রক্ত সিনেমাকে ঘিরে কিছুটা ইতিবাচক কথা শোনালেন জোনকী প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক আনোয়ার।

রক্ত।

তিনি বলেন, “রক্ত সিনেমার টিকেট বিক্রি খুব ভালোও নয় আবার খুব খারাপও নয়। প্রত্যাশা ছিল এই সিনেমার টিকেট বিক্রি গত রোজার ঈদের সিনেমার মতোই হবে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি তেমন একটা হয়নি। এর অন্যতম কারণ হল বাণিজ্যিক সিনেমার যারা নিয়মিত দর্শক তাদের বেশিরভাগই ঢাকায় ছিলেন না। তাছাড়া ঈদে বিভিন্ন টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা ও ঈদের সিনেমার কারণেও অনেকেই পরিবার নিয়ে বাসাতেই ছুটির সময় কাটিয়েছেন। তবে এর মাঝেও ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন মর্নিং শো, ম্যাটিনি, ইভিনিং ও নাটট শো এই চারটি শোগুলো হাইজ ফুল ছিল। কিন্তু চতুর্থ দিন থেকেই টিকেট বিক্রি কমে গেছে। তবে প্রতিটি শো-য়ের ডিসি আসনগুলো দর্শকে পরির্পূণ ছিল।”

অন্যদিকে ঈদের তৃতীয় সিনেমা ‘বসগিরি’ সারাদেশের ৯৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। দেশীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খান ফিল্মসের প্রযোজনায় এটি নির্মাণ করেছেন শামিম আহমেদ রনি। ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও নবাগত শবনম বুবলি।

ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত তিনটি সিনেমার মধ্যে ‘বসগিরি’ সিনেমা নাকি গড়পড়তার চেয়ে কিছুটা ভালো ব্যবসার করেছে। এমন খবরই শোনালেন সেনা অডিটোরিয়োমের ব্যবস্থাপক মনির হোসেন।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমার টিকেট বিক্রি ভালোই। ঈদের দিন পাঁচ শোয়ের মধ্যে চারটি শো হাউজফুল হয়েছে। এছাড়াও ঈদের পরে দিন ইভিনিং শো, ম্যাটিনি শোও নাইট শোগুলো হাউজফুল গিয়েছে। বতর্মানে টিকেটে বিক্রিতে মন্দা থাকলেও আজ অবধি শুধুমাত্র ইভিনিং শোগুলোর টিকেট বিক্রি ভালোই হচ্ছে। সত্যি বলতে এবারে আমাদের ব্যবসা গড়পড়তার চেয়ে কিছুটা ভালোই হয়েছে।”

শ্যুটার।

তবে হতাশার চিত্রই ফুটে উঠেছে গাজীপুরের ‘চম্পাকলি’ প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক আবুল কালামের কথায়।

তিনি বলেন, “এবারের ঈদে ব্যবসা ভালো হয়নি। যদিও কুরবানির ঈদে এমনিতে ব্যবসা তেমন একটা ভালো হয়। শুধুমাত্র শাকিব খানের সিনেমা বলেই প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা এসেছে। যেমন আশা ছিল তেমন ব্যবসা হয়নি। ঈদের দিন থেকে একটি শো-ও হাউজফুল হয়নি। আমরা দ্বিতীয় সপ্তাহে এই সিনেমা প্রদর্শন করছি। তৃতীয় সপ্তাহে আর এই সিনেমা প্রদর্শন করছি না।”