‘মডেলিংই আমার প্যাশন’

ক্যারিয়্যারের শুরু থেকেই নাটকে নিয়মিত না হলেও বিজ্ঞাপনের জগতে এখনও জনপ্রিয় মুখ আদিল হোসেন নোবেল। সম্প্রতি অভিনয় ও মডেলিং ক্যারিয়্যার ছাড়াও মিডিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2016, 10:58 AM
Updated : 16 Sept 2016, 11:05 AM

গ্লিটজ: ‘হাইওয়ে’ নাটকের জনপ্রিয়তার পরে কৌশিক শঙ্কর দাসের ‘সবুজের আলতো পথে’ নাটকের মাধ্যমে আবারও নোবেল-মৌ জুটিবদ্ধ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে টেলিভিশনের পর্দায় আমরা কি এই জুটিকে শক্তিশালী অবস্থানে পেতে যাচ্ছি?

নোবেল: উত্তরটা আমি একটু অন্যভাবে দেই। মৌ-নোবেল জুটি নিয়ে সবাই সবসময় কথা বলে। হয়ত আমরা কাজের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করেছি বলেই আমাদের এই জুটির ব্যাপারে প্রশংসা সবার মুখে।

মানুষ যেকোন ভালো জিনিস ধরে রাখতে চায়। দশ-বারো বছর আগে আমরা দুজনে অনেক বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। কিন্তু সম্প্রতি রবি টেলিকমের একটি বিজ্ঞাপনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। যেখানে বিজ্ঞাপনে বন্ধুকে ফিরে আসার আহবান জানানো হয়।

এতোদিন পরে আমাদের এই জুটিকে নিয়ে এমন একটি গল্পে বিজ্ঞাপন তৈরি মূল কারণ হলো আমাদের জুটির বন্ধন খুবই মজবুত। এছাড়াও আমরা র্দীঘ সময় ধরে টিকে থাকা জুটি। দর্শকরা আমাদের জুটিকে চাইছে বলেই আমরা নাটকে এক সঙ্গে কাজ করছি এবং ভালো কাজ আমরা সবসময়ই করবো।

তবে আমাদের জুটি নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করার জন্য যখন কোন র্নিমাতা প্রস্তাব নিয়ে আসেন তখন আমার খুবই ভালো লাগে। কারণ দর্শকরা এখনো আমাদেরকে পর্দায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবতারে এখনও দেখতে চায়।

গ্লিটজ: দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দর্শকদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আপনি কিংবা আপনাদের জুটি কতটুকু সক্ষম হবেন বলে মনে করেন?

নোবেল:
আমাদের দর্শকদের ফিরিয়ে আনার জন্য শুধুমাত্র নোবেল কিংবা মৌকে নিয়ে নাটক বানালেই যে হবে- তা কিন্তু নয়। এখানে আমার দিক থেকে দাবি হলো, যারা নাটক প্রযোজনা ও র্নিমাণ করছেন তাদের ভালোমানের ও ভালো গল্পের নাটক তৈরি করতে হবে। বাজেট কম, তাই দুই দিনেই নাটকের শুটিং শেষ-- এমনটি করলে মোটেও চলবে না। সবাইকে মান সম্মত প্রযোজনা ও র্নিমানের দিকে যেতে হবে।

ভালো মানের কাজ হলে কখনোই আমাদের দর্শকরা দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। তারা ভালো মানের কাজ উপভোগ করতে পারছেন না বলেই তারা বাইরের চ্যানেলের দিকে ঝুকেছেন।

আমার দাবি একটাই, ভালো কাজ করতে হবে। অনেক বেশি বাজেট নিয়ে একটি বড় গল্পের একটি সিনেম্যাটিক নাটক র্নিমান করতে আমি মোটেও বলছি না। কিন্তু গল্পটা খুবই শক্তিশালী হতে হবে এবং র্নিমাণের ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা থাকতে হবে। যদি এগুলো না হয় তাহলে আমরা দর্শকদের কখনোই ফিরিয়ে আনতে পারবো না।

গ্লিটজ: বর্ষীয়াণ ও তরুণ- সব বয়সের র্নিমাতাদের সঙ্গেই তো আপনার কাজ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কাজের মান বজার রাখার ক্ষেত্রে কারা বেশি এগিয়ে?

নোবেল: আমি এব্যাপারে র্নিদিষ্টভাবে কিছু বলতে পারবো না। কারণ আমার গণ্ডিটা খুবই সীমিত। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন র্নিমাতার সঙ্গে আমার কাজ করা হয়। তাই আমি কোন ধরনের তুলনার মধ্যে যাবো না। আমার কাছে মনে হয় আমরা নাটকে যারা কাজ করি, মানে নাটকের পুরো দল- অর্থাৎ র্নিমাতা, প্রযোজক এবং কলাকুশলী- সবাই মিলেই নাটকে আসলে সময় দেওয়া হচ্ছে না।

গ্লিটজ: তাহলে কি আমাদের নাটকের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব গড়ে উঠেনি?

নোবেল: পেশাদারিত্ব গড়ে উঠছে, কিন্তু সেই পেশাদারিত্ব আবার অনেক ধরনের হতে পারে। তবে এই ব্যাপারে আমার পরিস্কার বার্তা হলো, কাজ নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। কাজকে অনেক সময় দিতে হবে। হাতে একটি স্ক্রিপ্ট পেলে তা পড়েই কাজে নেমে পড়লে চলবে না। এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে, যেন কাজটা একটা মানসম্মত জায়গায় গিয়ে পৌছাতে পারে।

গ্লিটজ:  বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম প্যাকেজ নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’-তে আপনি গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আপনাকে গোয়েন্দা চরিত্রে কেন দেখা গেল না?

নোবেল:  আমার অল্প কাজের মধ্যে আমার যতটুকু জানার সুযোগ হয়েছে, সেই আলোকেই বলছি, গোয়েন্দা চরিত্র র্নিমাণ করা খুব সহজ নয়।

দেশের বাইরের বিভিন্ন গল্পে আমরা যেসব গোয়েন্দা চরিত্রগুলো দেখি সেখানে বিশাল ধরনের আয়োজন রাখা হয়। অনেক সময় অনেক র্দীঘ সিকুয়্যাল হয়।

আমি ঠিক জানি না আসলে কারনটা কী, তবে আমাদের নাটকে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। যারা প্রোডিউস করেন তারা হয়ত এই সব জিনিসগুলো মেনটেইন করতে পারেন না বলেই হয়ত করেন না। আবার এমন ধরনের কাজে ব্যয় অনেক বেড়ে যায় বলেই হয়ত, কেউ আর এরকম নাটক বানায় না। যদি এমন ধরনের ভালো নাটক র্নিমাণ হতো তাহলে আমি অবশ্যই সেখানে অভিনয় করতাম।

গ্লিটজ: মৌ-নোবেল জুটির পরে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে আর কোনো শক্তিশালী জুটি আমরা পেলাম না কেন?

নোবেল: আমার কাছে মনে হয় যেকোন কাজেই চর্চা বা অধ্যাবসায় অনেক বেশি থাকতে হয়। আমি একটা কাজ করছি, কিন্তু কেন করছি, এই কাজটা ভালো করার জন্য আমাকে কি করতে হবে এবং সেই কাজটাকে আমি পছন্দ করছি কিনা কিংবা ভালোবাসছি কিনা—এগুলো নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। কারণ এই সবকিছু মিলিয়ে একটি কাজ দাঁড়ায়। আমি একটি কাজ করার সময় সেই কাজটাকে বুঝলাম না, ভালোবাসলাম না কিংবা সেই কাজটার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলাম না তাহলে সেই কাজটা কখনোই ভালো হবে না। কাজের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব নিজেকে সম্পৃক্ত করতেই হবে। সম্পৃক্ত না হলে সেই কাজ থেকে তাকে বেরিয়ে যেতে হবেই।

গ্লিটজ: চলচ্চিত্রে তো আমরা আপনাকে কখনও পাইনি। সেক্ষেত্রে নাটক ও বিজ্ঞাপনের মধ্যে কোন জায়গায় আপনি বেশি জোর দিতে আগ্রহী?

নোবেল: চলচ্চিত্র আমাকে কখনোই কেন জানি আর্কষন করেনি। কেন করেনি তা আমি আদৌ জানি না। মাঝে মাঝে আমি নাটকে অভিনয় করি। বিশেষ দিনগুলোতেই ‍আমি কেবল নাটকে অভিনয় করি। আমার লক্ষ্য থাকে আমি ঈদে একটি নাটকেই অভিনয় করবো। কিন্তু বতর্মানে ঈদে নাটকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতি বছর দুই ঈদে সর্বোচ্চ চারটি নাটকে অভিনয় করবো। এছাড়াও ভালোবাসা দিবস কিংবা বিশেষ দিনের নাটকে অভিনয় করবো।

কিন্তু মডেলিংই হলো আমার প্যাশন। মডেলিংয়ে আমি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আমি আরও অনেক মডেলিংয়ে কাজ করতে চাই এবং আমার বিশ্বাস আমি আরও অনেক ভালো ভালো মডেলিংয়ের কাজ করবো।