বিকল্প চলচ্চিত্রের জন্য চাই ‘বিকল্প’ প্রেক্ষাগৃহ

বিকল্পধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শনে দেশের প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা যখন বিমুখ, তখন এ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারা দাবি তুলেছেন ‘বিকল্প’ প্রেক্ষাগৃহের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 09:49 AM
Updated : 28 August 2016, 09:49 AM

বিকল্প এসব প্রেক্ষাগৃহ গড়ে তোলা গেলে সংস্কৃতির ভিন্ন একটি ধারার শুরু হতে পারে বলে মনে করেন তারা। 

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা গাজী রাকায়েত বলেন, “বিকল্পধারার চলচ্চিত্র কর্মীদের উদ্যোগে যদি ঢাকার কোথাও একটি বিকল্প সিনেমা হল নির্মাণ করা যায়, তাহলে সেখানে দর্শকরা নিয়মিত সিনেমা দেখতে পারবে। এর মাধ্যমে একটা আলাদা সংস্কৃতি তৈরি হতে পারে।”

এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সিনেমা হল মালিক সমিতি ও প্রদর্শক সমিতির নেতারা দাবি করেছেন, বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের ‘দর্শক নেই’, তাই সেসব চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে তারা ‘আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হতে চান না।

গাজী রাকায়েত বলেন, “স্বাধীন চলচ্চিত্র মানে নির্মাতা সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু চলচ্চিত্রে লগ্নি করা অর্থ ফিরিয়ে আনার কথা মাথায় নিয়ে আমরা আর সেখানে স্বাধীন থাকতে পারি না।”

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বিকল্প চলচ্চিত্রের ৩ দশক’ শিরোনামে আয়োজিত বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের ত্রিশ বছরপূর্তির অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন তিনি।

ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘মুক্ত চলচ্চিত্র, মুক্ত প্রকাশ’ শীর্ষক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছিল শর্ট ফিল্ম ফোরাম। শুক্রবার শুরু হওয়া এই উৎসবটি শেষ হয় শনিবার। দেশ-বিদেশের নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি আয়োজন করা হয় মুক্ত আলোচনার।

এতে যোগ দিয়ে স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রেরর নানা দিক নিয়ে মন্তব্য করেন বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষকরা।

স্বাধীন চলচ্চিত্রকারদের জন্য আলাদাভাবে কোনো সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না চলচ্চিত্রকার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ।

তিনি বলেন, “কোনো সংগঠনের সাহায্য নিলে তাদের নিশ্চয়ই কিছু শর্ত থাকবে। তখন আর বিষয়টি স্বাধীন থাকে না। তাই স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রথমে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।”

তবে তার কথার বিরোধিতা করে আরেক চলচ্চিত্রকার সৈয়দ ইমরান হোসেন কিরমানী বলেন, “চলচ্চিত্র যেহেতু টিম ওয়ার্ক, সেহেতু ওয়ার্কশপ বা বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে একত্রীকরণের কাজ হতে পারে। নতুন চলচ্চিত্রকারদের পরিচয় ঘটার একটা প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। আর শর্ট ফিল্ম ফোরাম এ বিষয়ে ভূমিকা রাখছে।”

চলচ্চিত্রকার শবনম ফেরদৌসী শর্ট ফিল্ম ফোরামকে জঙ্গিবাদবিরোধী একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই দেখছেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, “তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আর্ট এবং জগৎ জীবন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। তারা কিভাবে আরও ভাল কাজ করতে পারেন, সেদিকে আরও খেয়াল রাখা দরকার।”

শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাবেক সভাপতি মানজারে হাসিন মুরাদ আলাপচারিতার ফাঁকে সরকারি অনুদান নিয়েও নির্মাতাদের গরিমসির সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “যারা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান নিচ্ছেন তারা অনেকেই দায়িত্বের সাথে তা সম্পন্ন করছেন না। তাই অনুদানের অর্থের প্রতি চলচ্চিত্রকারদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ।”

অগ্রজ চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সিনেমা নির্মাণ করতে গেলে শুধু প্রযুক্তি গ্রহণ করলে হবে না। একে রাখা বা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূল বিষয়।