মধুমিতার পাশে দুই বাংলার তারকারা

অনলাইনে ভারতীয় টিভি অভিনেত্রী মধুমিতা চক্রবর্তীর দেহব্যবসার মিথ্যা খবর ও বিকৃত ছবি প্রকাশের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন দুই বাংলার তারকারা। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ খ্যাত এ অভিনেত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশের কিছু অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা খবর প্রকাশ করার এ ঘটনাকে নিন্দনীয় ও অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার- এটাই এখন দাবি তাদের।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2016, 10:33 AM
Updated : 22 August 2016, 10:33 AM

বাংলাদেশের দুই অভিনেত্রী জয়া আহসান ও সোহানা সাবা ইন্ডিয়ান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মধুমিতার প্রতি তাদের সহমর্মিতার কথা জানান। অন্যদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে মধুমিতার প্রতি সমবেদনা ও মানসিকভাবে তার পাশে থাকার কথা ব্যক্ত করেছেন কলকাতার  অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদার, শ্রীলেখা মিত্র, সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও এনা সাহা।

জয়া আহসান

কাজের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ায় সরব উপস্থিতি রয়েছে জয়া আহসানের। ‘রাজকাহিনী’ ও ‘আবর্ত’-এর পর ১২ আগস্ট কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে জয়া অভিনীত তৃতীয় ছবি ‘ঈগলের চোখ’। মধুমিতার সাথে যা ঘচেছে তার সাথে তার নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার মিল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এ অভিনত্রী।

এ প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি এ মুহুর্তে কেমন সময় পার করছেন মধুমিতা। একই অনুভূতি আমারো হয়েছিলো যখন ‘রাজকাহিনী’ ছবিতে অভিনয়ের পর আমাকে নিয়ে নোংরা কথা বলা হয়েছিলো।”

তিনি আরও বলেন, “এই ছবিতে আমি একজন যৌনকর্মীর চেরিত্রে অভিনয় করি আর কাহিনীর প্রয়োজনেই আমাকে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে সেটা খুবই খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিলো সে সময়। এমনকি আমার সাথে একজনের ‘লিভ-টু-গেদার’ এর মিথ্যা খবরও ছড়ানো হয়েছিলো। আমি সে সময় খুবই আহত হয়েছিলাম।’’

জয়ার ভাষ্যে, উপমহাদেশের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সবসময় নারী তারকাদের লক্ষ্য বানানো হয় এমন অপপ্রচারের।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে অনেক সহজলভ্য ভাবা হয়। এ কারণে মেয়েরাই সব সময় এরকম হেনস্থার শিকার হয়। একজন মেয়েকে নিয়ে এ রকম মিথ্যা কথা সবাই খুব সহজেই বিশ্বাস করে। আমি বললো মধুমিতা খুব ভালো কাজ করেছে আদালতে গিয়ে। আমি চাই সে তার ন্যায়বিচার পাক। সে ন্যায়বিচার পেলে আমিও আমার প্রতি অবিচারের ন্যায় বিচার পেয়েছি বলে মনে করবো।’’

সোহানা সাবা

জুলাইয়ে মুক্তি পা্ওয়া ‘ষড়রিপু’ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ছবিতে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশের অভিনেত্রী সোহানা সাবার। মধুমিতার এ ঘটনা মর্মাহত করেছে তাকেও।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন পর্যন্ত খবরগুলো পড়িনি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এ ধরনের মানহানিকর ও মিথ্যা খবর একজন অভিনেত্রীর জন্য কতটা অসম্মানের হতে পারে। মধুমিতার সাথে যেটি হয়েছে সেটি খুবই নোংরা একটি কাজ। সে একজন তারকা বলেই নয়, যে কোনো মেয়ের জন্যই এমন ঘটনা খুবই বিব্রতকর। এই অপরাধগুলোর কোনো দেশ নেই। এগুলো বড় অপরাধ। আমি চাই যারা এই কাজ করেছে তাদের বিচার হোক।’’

শ্রীলেখা মিত্র

টালিগঞ্জের অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র মনে করেন এই ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিয়ে ঠিক কাজ করেছেন মধুমিতা। আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “একসময় আমার ছবিও মর্ফড হয়েছিল। তখন সেটা দেখে আমি শুধু হেসেছিলাম। ইগনোর করেছিলাম। মধুমিতার সঙ্গেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যদিও ওকে ব্যক্তিগত ভাবে আমি চিনি না। কিন্তু ও লালবাজারে গিয়ে একদম ঠিক কাজ করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা এ সব করে তারা মানসিকভাবে বিকৃত। তাই দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। যাতে কেউ আর কখনও এ সব কাজ করার সাহস না পায়। মধুমিতাকে বলব, ও যেন শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। মাঝপথে হাল ছেড়ে দিলে কিন্তু কোনো লাভ নেই।”

ইন্দ্রাণী হালদার

‘গোয়েন্দা গিন্নি’ খ্যাত ইন্দ্রাণী হালদার পুরো ব্যাপারটিকে দেখছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও প্রযুক্তির অপব্যাবহারের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে।

তিনি বলেন, “সোশাল মিডিয়ার ভালো-মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। এটা তো ঠিক কথা সোশাল ওয়ার্ল্ডের হাত ধরে অনেক উপকৃত হই আমরা। এটাই ঠিক এমন কাজ কেউ না কেউ সব সময় করতে চাইবেন। মধুমিতার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে ধিক্কার জানাচ্ছি। যদি উপায় থাকে দোষীদের ধরে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।”

ইন্দ্রাণীর মতে, গোটা বিষয়টি মধুমিতার তারকাখ্যাতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

তিনি বলেন, “ তবে এটা করে কেউ মধুমিতার পার্সোনালিটিতে ছোট করতে পারবে না। ও তো পাবলিক ফিগার। মন দিয়ে কাজটা করে যেতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। এ ঘটনা নতুন নয়। আগেও হয়েছে। ভয় না পেয়ে প্রতিবাদ যেমন করতে হবে তেমনই মনে রাখতে হবে কাজটাই আসল। সে জন্যই দর্শক ওকে ভালোবাসেন।”

সুদীপ্তা চক্রবর্তী

আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুদীপ্তা বলেন, “মধুমিতার সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা জঘন্য অপরাধ। সব সময় দেখবেন গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের লোকরা টার্গেট হন। এটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ফেসবুকে তো সেলিব্রিটিদের ছবিতে যা খুশি তাই মন্তব্য করেন এক ধরনের মানুষ। এরা কী ভেবেছে? এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।”

এনা সাহা

মধুমিতার একসময়ের সহকর্মী মানতে পারছেন না ঘটনাটি। তিনি বলেন, “মধুমিতার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তাকে আমি অনেক দিন ধরেই চিনি। তার সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। মধুমিতা লিগ্যাল স্টেপ নিয়ে একদম সঠিক কাজ করেছে। আমি তো ভাবতেই পারছি না এই রকম কেউ করতে পারে! তার জন্য সব রকম মরাল সাপোর্ট রয়েছে।”