নাটকের জনপ্রিয়তার ‘কারিগর’ আবদুল্লাহ আল মামুন

বাংলাদেশে মঞ্চ ও টিভি নাটক জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়াত নাট্যজন আবদুল্লাহ আল মামুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে মন্তব্য করেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2016, 05:04 PM
Updated : 21 August 2016, 05:04 PM

আবদুল্লাহ আল মামুনের অষ্টম মৃত্যুদিবস রোববার শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে দুটি স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। নাটক লেখার পাশাপাশা অভিনয়, নির্দেশনায় ছিলেন তিনি। নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রও।

স্টুডিও থিয়েটার হলে নাট্যম রেপার্টরি আয়োজিত সভায় রামেন্দু মজুমদার বলেন, “আধুনিক মঞ্চ নাটক বা টিভি নাটক- দুটির ভীষণ জনপ্রিয়তার কারিগর ছিলেন মামুন। মামুন তার নাটকে সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক চিত্রিত করেছেন।

“সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে তার এতই দক্ষতা ছিল, তিনি খুব সহজেই সাধারণ দর্শকের মন ছুঁতে পেরেছিলেন। আজকাল নাটকের ১০-১৫ মিনিট তো কিছুই থাকে না। কিন্তু মামুন তার নাটকে দর্শক ধরে রাখতে পারতেন।”

নতুন নির্দেশক ও অভিনেতা তৈরির পাশাপাশি সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আবদুল্লাহ আল মামুনের এক অনন্য ভূমিকা ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, “টিভি নাটকের প্রতি মামুনের ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। তার কারণেই টিভি নাটক তথা মেগাসিরিয়াল এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিবেশ তো কখনো ছিল না। তার মধ্যেও মামুন ‘সারেং বউ’ নির্মাণ করেছিলেন।”

অগ্রজ নাট্যব্যক্তিত্ব গোলাম সারোয়ার বলেন, “আবদুল্লাহ আল মামুন অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে নব্য ধনীক শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্ত সমাজের নানা সঙ্কটের কথা তার নাটকে ধ্বনিত হয়েছে।”

এর আগে ‘তুমি রবে নীরবে’ গানটির সঙ্গে বৃন্দনৃত্য পরিবেশনা করে নাট্যম রেপার্টরী। শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় ‘চারদিকে যুদ্ধ’ নাটক মঞ্চস্থ হয়।

এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে থিয়েটার স্কুল প্রাক্তনীর আয়োজনে যোগ দিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, বিস্তৃত এক শিল্পী জীবনকে ধারণ করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।

“আমি নাটকের বৈরী পরিবেশে বড় হয়েছি। যদি আব্দুল্লাহ আল মামুন আমার জীবনে না আসতেন তাহলে আজকের এই ফেরদৌসী মজুমদার হতে পারতাম না।”

আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘কোকিলারা’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ নাটকসহ তার অধিকাংশ নাটকের প্রধান অভিনেত্রী ছিলেন ফেরদৌসী মজুমদার।

তিনি বলেন, “তিনি আমার নাট্যসঙ্গী, তিনি আমার নাট্যকার, তিনি আমার বন্ধু। তার অবদান আমার জীবনে ভোলার নয়। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা না জানানোর মত অধর্ম আর হবে না। তিনি আমার মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে দিয়েছেন।”

‘মঞ্চসারথি’ আতাউর রহমান বলেন, “জীবনটা হচ্ছে উদযাপনের। মানুষ যে কর্ম রেখে যায় তার মৃত্যু নেই। আবদুল্লাহ আল মামুনের যা কাজ তা আমাদের জীবনে উদযাপনের উপলক্ষ সৃষ্টি করেছে।”

আলোচনা শেষে আব্দুল্লাহ আল মামুন থিয়েটার স্কুলের সাবেক সদস্যরা মঞ্চস্থ করেন ‘প্রথম পার্থ’ নাটকটি। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগের রাতের ঘটনা অবলম্বনে বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রথম পার্থ’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক আবদুল্লাহ আল মামুন পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

তার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকগুলো হল ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখনও দুঃসময়’, ‘সেনাপতি’, ‘এখনও ক্রীতদাস, ‘কোকিলারা’, ‘দ্যাশের মানুষ’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’, ‘মেহেরজান আরেকবার’ ইত্যাদি।

নাট্য সংগঠন থিয়েটার-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন তিনি। শহীদুল্লা কায়সারের উপন্যাস ‘সংশপ্তক’ নিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণের পর তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি।

তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘সখী তুমি কার’, ‘এখনই সময়’, ‘জোয়ারভাটা’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘দুই বেয়াইয়ের কীর্তি’, ‘দরিয়াপাড়ের দৌলতি’।

১৯৮০ সালে ‘এখনই সময়’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০০০ সালে পান একুশে পদক।

২০০৮ সালের ২১ অগাস্ট মারা যান আবদুল্লাহ আল মামুন।