সামজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত ছবি এবং ভিডিও শেয়ারের মধ্য দিয়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠা ‘পাকিস্তানের কিম কার্দাশিয়ান’ খ্যাত এই মডেলকে গত শুক্রবার শ্বাস রোধ করে হত্যা করে তারই আপন ভাই ওয়াসিম। ‘অনার কিলিং’ নামের তথাকথিত এই বর্বরতায় স্তব্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানের মতো ‘গোঁড়া রক্ষনশীল’ দেশটির মুসলিম সমাজও।
যদিও কাপুরুষোচিত এই হত্যান্ডের নায়ক ওয়াসিম সম্প্রতি মিডিয়াকে জানায় যে তাঁর আপন বোনকে হত্যা করে বিন্দুমাত্রও অনুতপ্ত নয় সে। কারণ সামজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তার ‘সেলফি’, ভিডিও সহ অন্যান্য ছবিগুলো শেয়ার করে কান্দিল তাদের পারিবারিক নাম ‘বেলুচ’-এর ‘সম্মানহানি’ করেছেন। বিশেষত খ্যাতিমান ধর্মগুরু আব্দুল কাভি’র কোলে বসা ছবিটির কথা উল্লেখ করে এই হত্যাকারী।
এই হত্যাকান্ডের পরপরই ওয়াসিম ও তার আরেক ভাই এর বিরুদ্ধে মামলা করেন বেলুচ-এর বাবা মোহাম্মদ আজিম।
বেলুচ-এর সঙ্গে ছবি তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় আব্দুল কাভি’কে। সোমবার পুলিশ জানায় ঘটনার সঙ্গে আব্দুল কাভির সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখছে তারা। যদিও কোন প্রকার অপকর্মের সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতা প্রত্যাখ্যান করেছেন তেহরিক-ই-ইনসাফের এই ‘বরখাস্ত’ নেতা।
মামলা হলেও পাকিস্তানি আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেরিয়ে যাচ্ছে এই ধরণের হত্যাকারীরা। কেউ কেউ নামে মাত্র সাজা পেলেও, পরিবারের ‘ক্ষমা’ প্রদর্শনের মাধ্যমে খুনীদের একটি বিশাল অংশই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তবে দেশটির সবচেয়ে বড় প্রদেশ পাঞ্জাব সরকার এই হত্যাকান্ডটির ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটার সুযোগ রাখেনি। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াসিম-এর বাবা-মা কোনভাবেই ক্ষমা করতে পারবে না তাকে সম্প্রতি এই মর্মে একটি ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছে পাঞ্জাব সরকার।
এই প্রসঙ্গে পাঞ্জাব পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “ সরকারের আদেশেই এমন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসে এধরনের পদক্ষেপ বিরল।”
যদিও পাঞ্জাব সরকারের এমন পদক্ষেপ আদতে সফল হবে কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। কারণ হত্যাকারীদের পরিবার কর্তৃক ক্ষমা করতে না পারার জন্য একটি আইন পাস হওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে পাকিস্তান পার্লামেন্টে। প্রধান মন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ফেব্রুয়ারিতে এই প্রক্রিয়াকে দ্রুতকরনের কথা বললেও আদতে এখন পর্যন্ত তেমন কোন তৎপরতা নেই বলে দাবি করছেন এই বিলের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে বাঁ হয়েছে এমন কোন কাজে জড়িত থাকলেই পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যা করতে হবে তাকে আর এই ধরণের হত্যাকান্ডকেই বলা হয় ‘অনার কিলিং’। প্রতি বছর এই ধরণের হত্যাকান্ডে পাকিস্তানে নিহত হয় গড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী যার বেশিরভাগই ঘটে নিহতদের কোন নিকট আত্মীয়ের হাতে।
নওয়াজ শরীফের মেয়ে মারিয়াম বলেছেন, বেলুচ হত্যাকান্ড নিয়ে ক্ষিপ্ত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। তিনি বলেছেন, “ সম্মান রক্ষার নামে করা এইধরনের হত্যাকান্ডে আসলে কোন গৌরব নেই”।