‘আমি আগে শিল্পী, পরে নায়ক’: আরিফিন শুভ

‘জাগো’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় অভিষিক্ত হলেও মাহিয়া মাহির বিপরীতে ‘অগ্নি’ সিনেমার মাধ্যমেই ঢালিউডে নিজের স্থান পোক্ত করেছেন আরিফিন শুভ।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2016, 04:45 AM
Updated : 7 July 2016, 04:45 AM

পরের বছরগুলোতে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘মুসাফির’ ও ‘অস্তিত্ব’র মাধ্যমে নিজের অভিনয় জীবনকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। ঈদ উপলক্ষ্যে নিজের নতুন সিনেমা ও ক্যারিয়্যারের নানান বিষয়ে গ্লিটজের আড্ডা দিলেন সময়ের এই আলোচিত তারকা।

গ্লিটজ: ‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমায় নতুন কোন অবতারে পাচ্ছি?

শুভ: জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমায় আমার অভিনীত চরিত্রটি খুবই স্বাভাবিক একটি চরিত্র কিন্তু আবার অস্বাভাবিক চরিত্র। আমার ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে এই সিনেমায় আমার অভিনীত চরিত্র সীমান্তের সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে। চরিত্রটি এমন, যার মনের ভেতরে লুকিয়ে আছে অনেক কিছুই, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। সিনেমায় আমার চরিত্রটি বলতে পারেন অনেকটা ইন্ট্রোর্ভাট… বেশ চাপা প্রকৃতির একটি চরিত্র।

গ্লিটজ: সিনেমায় ফারিয়ার সঙ্গে কাজের রসায়ন কেমন?

শুভ: ব্যক্তিজীবনে অনেক আগে থেকেই ফারিয়া আমার খুব ভালো বন্ধু। ওর সঙ্গে আমি রেডিওতে অনুষ্ঠান করেছি। ওর সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মডেলিং করেছি। মঞ্চের অনুষ্ঠানে কাজ করেছি। সেই দিক থেকে আগে থেকেই ওর সঙ্গে একটা পরিচিতি ছিলো।

সত্যি বলতে ‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমায় আমরা খুব আনন্দ করে কাজ করছি। শুধু একটি ঘটনা শেয়ার করছি। সিনেমার একটি দৃশ্যে ফারিয়া মাতাল থাকে। যতবারই ফারিয়া সংলাপ বলছে ঠিক ততবরাই সে ভুল সংলাপ বলছে। কিন্তু সেসময় আমাকে ফারিয়ার সঙ্গে তালমিলিয়ে ইমোশনের রিঅ্যাকশন দিতে হবে। সেই মূর্হুতে আমার হাসিও পাচ্ছে আবার ফারিয়া ভুল শব্দ বলছে কিন্তু আমি ওর দিকে ইমোশনাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। তখন আমার প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে কিন্তু আমি কিছুই ওকে (ফারিয়া) বলতে পারছি না। হাসতেও পারছিলাম না। আসলে কাজের ক্ষেত্রে আমাদের রসায়নটা খুবই মজার।

গ্লিটজ: আগামীতে আমরা শুভ-ফারিয়াকে কি নতুন কোনো রোমান্টিক জুটি হিসেবে পাচ্ছি?

শুভ: ‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমার পুরো শেষ হলে এবং সিনেমা মুক্তির পরই কেবল বোঝা যাবে অনস্ক্রিনে আমাদের রসায়নটা কেমন ফুটে উঠল। এই মূর্হুতে আগে থেকে কোনভাবেই আমার বলাও সম্ভব নয় বোঝাও সম্ভব নয়। সিনেমার দৃশ্যধারন শেষ হলেই তখন বলা যাবে পর্দায় আমাদের জুটির রসায়ন কেমন ফুটে উঠল।

আসলে আমাদের ব্যক্তিজীবনে কিংবা কাজের ক্ষেত্রে, পর্দার অভিনয়ের বাইরে অনেকের সঙ্গেই আমাদের অনেক ধরনের সর্ম্পক থাকে। ফারিয়ার সঙ্গে আমার তেমনি একটা ভালো বন্ধুত্বর্পূণ সর্ম্পক রয়েছে। এটা ঠিক যে যদি সহশিল্পীর সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে সুসর্ম্পক থাকে তাহলে কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা হয়। তবে আমরা ঢাকাই সিনেমার রোমান্টিক জুটি কিনা তা সিনেমার মুক্তির পরেই দর্শকরা নির্ধারণ করবে।

গ্লিটজ: ঢালিউড ও টালিউডের মহাতারকাদের দাপুটে অবস্থানের কারনে আপনি কি নিজের জায়গা তৈরি করতে পারছেন?

শুভ: প্রশ্নটা খুবই কন্ট্রোর্ভাসিয়াল। তবে আমি এইটুকু বলতে চাই এমন ধরনের বিষয়টা কিন্তু যুগে যুগে সিনেমা শিল্পে হয়ে এসেছে। এটা নতুন কোন ঘটনা নয়। এক সময় ছিলো যখন নায়করাজ রাজ্জাকের সময় ছিলো। তিনি এখনও আমাদের কাছে নায়করাজ, কিন্তু তিনি কি এখনও রুপালি পর্দায় অভিনেত্রী কবরীর সঙ্গে রোমান্স করছেন? তা কিন্তু নয়। প্রত্যেকের একটা সময় থাকে। তারপরে সেই জায়গাটা সময়ের নিয়মে ছেড়ে দিতে হয়।  

গ্লিটজ: যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা র্নিমানের ধারনাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ণ করেন?

শুভ: যৌথ প্রযোজনা যদি ব্যালেন্সড হয় তাহলে পজেটিভ। আর যৌথ প্রযোজনা যদি ইমব্যালেন্সড হয় তাহলে নেগেটিভ। যেমন, ব্যালেন্সড যৌথ প্রযোজনার প্রজেক্ট-এর একটি উদাহরণ হল ‘নিয়তি’। আর ইমব্যালেন্সড যৌথ প্রযোজনার প্রজেক্টও আছে, কিন্তু সেই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। যেটা দেখে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই এতে বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব আছে।

একটি প্রজেক্ট দেখে আমার মনে হতে হবে, হ্যাঁ এটা আমাদের প্রোডাক্ট। একটি প্রজেক্ট দেখে যদি আমি বুঝতেই না পারি যে এখানে বাংলাদেশও রয়েছে, সেক্ষেত্রে তা অবশ্যই নেগেটিভ।

গ্লিটজ: টালিগঞ্জে বিকল্প ধারার সিনেমার বাজার তুঙ্গে আর বাণিজ্যিক সিনেমার বাজারে মন্দা। সেক্ষেত্রে আপনি ধ্রুপদী সিনেমায় অভিনয়ের বদলে যৌথ প্রযোজনার বাণিজ্যিক সিনেমায় কেন অভিনয় করছেন?

শুভ: আমার কাছে এখনো বিকল্প ধারার সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে নাই। যদি বিকল্প ধারার সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আমার কাছে আসে তাহলে আমি অবশ্যই সেখানে অভিনয় করবো। আমার কাছে যেসব সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছে সেখান থেকে যাচাই বাছাই শেষে যেটা আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে সেই সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি।

গ্লিটজ: আপনি কি নিজেকে এই ধরণের সিনেমার জন্য যোগ্য মনে করেন?

শুভ: অবশ্যই। কারন সবার আগে আরেফিন শুভ একজন শিল্পী, নায়ক নন। শুধু এক লাইনেই বলতে চাই, আমি যখনই দেখবো কোন জায়গায় আমার কাজ করার মত জায়গা রয়েছে সেক্ষেত্রে ইংরেজি কিংবা চাইনিজ সিনেমা হলেও সেখানে আমি অভিনয় করবো। কিন্তু যদি আমার কাজ করার মতো জায়গা না থাকে সেক্ষেত্রে তা যে কোন ভাষার সিনেমা হোক কিংবা যে কোন প্রজেক্টই হোক না কেন আমি কাজ করবো না।

গ্লিটজ: যৌথ প্রযোজনা নাকি দেশীয় একক প্রযোজনা কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন?

শুভ: আমার উত্তরটা ডিপ্লোমেটিক মনে হতে, পারে কিন্তু আমার কাছে বিষয়টা হলো আমরা একই ভাষায় ভালোবাসি। একই ভাষায় ঘৃণা করি। একই ভাষায় প্রেম নিবেদন করি। একই ভাষায় মাকে ডাকি। ভাষা একইরকম, মাঝে কেবল একটা বেড়া। আমি তার দর্শক, সেও আমার দর্শক।

পুরো পৃথিবীর কাছে আলাদা হতে পারে কিন্তু আমার কাছে আমরা সবাই বাংলা ভাষী। আমি বাংলা ভাষায় কাজ করি। আমার ভাষা যার বোধগম্য হবে আমি তার জন্য কাজ করবো। আমি আমার সময় সিনেমার প্রযোজকের কাছে বিক্রি করি। এখানে যৌথ প্রযোজনা নাকি দেশীয় প্রযোজনা কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কিছু নেই। আমি যখন যেই প্রজেক্ট কাজের জন্য গ্রহন করি তা ভালোমত সম্পন্ন করি।

গ্লিটজ: ছোট বেলার ঈদ নিয়ে মজার গল্প শুনতে চাই।

শুভ: ঈদ নিয়ে একটা গল্প এখনও মনে আছে। তখন ভিসিআরের বেশ প্রচলন ছিলো। সেসময় আমাদের টিভি নষ্ট ছিলো। তাই ঈদের সিনেমা দেখার জন্য সেই ঈদের আগের দিন আমরা চাচার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ঘটনাচক্রে সেই রাতে আমি সিনেমা দেখে সেইখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে আমাকে একটা পাঞ্জাবি পড়তে দেয়া হয়। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিলো আমাকে দেয়া পাঞ্জাবি নাকি আমার চাচার ছোটবেলার পাঞ্জাবি। আমিও সেটা বিশ্বাস করেছিলাম। সেটা পড়ে আমি ঈদের নামাজও পড়েছি। কিন্তু ঈদের পরের দিন আমি জেনেছি চাঁদ রাতে আমার চাচা-চাচী মার্কেট থেকে আমার জন্য নতুন পাঞ্জাবি কিনে এনেছিলো। কিন্তু ঈদের দিন সেটা তারা আমাকে বলেন নি। যখনই সেই ঘটনাটা আমার মনে পড়ে তখনই আমি তাদের খুব মিস করি। কারন তারা এখন আর বেঁচে নেই।