‘গেইম অফ থ্রোন্স’ সিজন ফিনালে: টুইটারে ঝড়

কিছুদিন আগেই শেষ হয়ে গেল এইচবিও’র জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি-ড্রামা টিভি সিরিজ ‘গেইম অফ থ্রোন্স’-এর ষষ্ঠ সিজন। অকল্পনীয় সব চমক আর গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সব ঘটনা দিয়ে সাজানো শেষ পর্বটি নিয়ে এরমধ্যেই ইন্টারনেটে শুরু হয়ে গেছে চর্চা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2016, 08:30 AM
Updated : 29 June 2016, 08:32 AM

মারটেল, টাইরেল হাউজের পতন আর ল্যানিস্টার, টারগেরিয়ান এবং স্টার্ক সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য এক বারুদঠাসা সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিয়ে শেষ হয়েছে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'গেইম অফ থ্রোনস' এর ষষ্ঠ সিজন। ধ্বংস, প্রতিশোধ আর রক্তপাতের বন্যায় এক অনন্য সমাপনী পর্ব নির্মাতারা উপহার দিয়েছেন সিরিজের ভক্তদের, যেটিকে অনেকেই আখ্যা দিয়েছেন টিভি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ কোন সিরিজ পর্ব হিসেবে। একই সঙ্গে চলছে টুইটারে ঝড়, পরবর্তী সিজনের অপেক্ষা আর চরিত্রগুলোর পরিণতি বিশ্লেষণে মগ্ন এখন সবাই।

প্রথম সিজন থেকে ষষ্ঠ সিজন- প্রত্যেকটি ঘটনাপ্রবাহের চক্র এসে শেষ হয়েছে ষষ্ঠ সিজনের সমাপনী পর্বে এসে, একই সঙ্গে জট খুলেছে অনেক রহস্যের; যার কূল কিনারা অনলাইনে ছবছর ধরেই খুঁজছিলেন ভক্তরা। এখনই প্রতিটি পর্বের জন্য এক সপ্তাহের প্রতীক্ষার শূণ্যতা অনুভব করতে শুরু করেছেন এক টুইটার ব্যাবহারকারী, একটি ট্রল পোস্টে জ্যাকেন হ্যাগারের ছবিসহ তিনি সেখানে লেখেন, "একজন মানুষ শুধু সপ্তম সিজনের জন্য অপেক্ষা করেনা, তারবদলে সে প্রথম থেকে ষষ্ঠ সিজন বারবার দেখে যায়।"

এছাড়াও লাখের উপর টুইট এসেছে শুধু 'গেইম অফ থ্রোনস' এর নতুন সিজনের অপেক্ষা সংক্রান্ত পোস্ট নিয়ে।

সিজনের দ্বিতীয় পর্বেই আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ফিরেছেন জন স্নো। নবম পর্বে বোল্টন প্রধান র‌্যামসি বোল্টনের বিরুদ্ধে উইন্টারফেল দখলের যুদ্ধে স্নোর বিজয়ে আবারও নর্থের দখল নিয়েছে স্টার্করা। নর্থের নতুন লর্ড জন স্নোকে স্বাগত জানিয়ে টুইটারে পোস্ট এসেছে অনেক, যার বেশিরভাগেই লেখা, 'নর্থের রাজার জয় হোক।'

তবে দর্শকরা সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন দীর্ঘ এক অনুমান সত্য হওয়ায়। জন স্নো'র বাবা-মা কে, এই প্রশ্নের সমাধান নানা হিসেব কষে বের করে ফেলা হয়েছিল বহু আগেই। জর্জ আর আর মার্টিনের বইয়েও ছিল সে ইঙ্গিত। অবশেষে সিরিজের নির্মাতারাও খোলাসা করেছেন জন স্নো'র জন্মপরিচয়, R+L=J থিওরিটি সত্য হওয়ায় দারুণ আনন্দিত তাই ভক্তরাও, জন স্নোর ছবি আর তাদের অনুমান পোস্ট করেছেন অনেকেই, লিখেছেন, "অবশেষে হলো সত্যি।"

দ্বিতীয় সিজন থেকেই বাবা-মা এবং ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আরিয়া স্টার্ক অবশেষে সফল হয়েছে তার লক্ষ্যে। ‘রেড ওয়েডিং’-এ কারিগর ওয়াল্ডার ফ্রে এবং তার পুত্রদের নিজের হাতে হত্যা করে আরিয়া। অনেক দর্শকেরই মনে ধরেছে গোটা ব্যাপারটা। অনেকেই ঘটনাটিকে আখ্যা দিয়েছেন, ‘সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক দৃশ্য’ হিসেবে।

ষষ্ঠ সিজন শেষে লৌহ সিংহাসনে বসেছেন নতুন শাসক, অবশ্য তিনিই সমগ্র ওয়েস্ট্রোসের প্রথম নারী শাসক। পঞ্চম সিজনে নিজের কৃতকর্মের জন্য 'ওয়াক অফ অ্যাটনমেন্ট' এর শাস্তি দেওয়া হয়েছিল যাকে, সেই সার্সেই ল্যানিস্টারই এখন সেভেন কিংডমসের অধিপতি। হাই সেপটনের ধর্মগুরু আর টাইরেল হাউজকে ওয়াইল্ডফায়ারে দগ্ধ করে এখন সার্সেই সকল ক্ষমতার কেন্দ্র। তার এই দাপুটে উত্থান নিয়েও টুইটার ভেসে যাচ্ছে একের পর এক পোস্টে।

সার্সেই এর উত্থানকে এক টুইটার ব্যাবহারকারী তুলনা করেছেন 'স্টার ওয়ার্স' এর খল চরিত্র ডার্থ ভেডারের সঙ্গে। পোস্টে তিনি লেখেন, "ডার্থ সার্সেই-এর উত্থান হলো।"

ঠাণ্ডা মাথায় পুরো সেপ্ট অফ বেইলরকে ধ্বসিয়ে দেওয়া সার্সেই এর ব্যাক্তিত্বে 'দ্য গডফাদার' এর ডন ভিটো করলিওনের মিল পেয়েছেন এক ভক্ত। আরেকজন একটি ট্রল ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে পুড়ছে একটি দালান আর তার বিপরীতে হাসছে এক কিশোরী। পোস্টে সেই কিশোরীকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সার্সেই হিসেবে।

এদিকে পুরো ওয়েস্ট্রোস দখল করতে আয়রনবর্ন, মারটেল, টাইরেল, ডথরাকি এবং আনসালিডদের বিশাল বাহিনী নিয়ে ওয়েস্ট্রোসে এগুচ্ছে ড্যানেরিস টারগেরিয়ান।

সিংহাসন পুনর্দখলের এই প্রেক্ষাপটকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলে একজন টুইটার ব্যাবহারকারী লিখেছেন, "আগে ছিল পাগলাটে রাজা এইরিস, এবার এসেছে খুনে পাগলাটে রাণী সার্সেই। এটা হতে যাচ্ছে দুই রাণীর মধ্যকার প্রলয়ঙ্কারি এক যুদ্ধ।"

প্রতি বছরই 'গেইম অফ থ্রোন্স'-এর সিজনগুলো দর্শকপ্রিয় করে তোলে কয়েকটি চরিত্রকে। এবারও হয়নি তার ব্যাতিক্রম, মরমন্ট হাউজের প্রধান দশ বছরের শিশু লেডি লিয়ানা মরমন্টের বিস্ফোরক সংলাপ মন কেড়ে নিয়েছে অনেকেরেই।

প্রিয় এই চরিত্রটি নিয়ে একজন টুইটারে লিখেছেন, "যদি লিয়ানার কাছে তিনটি ড্রাগন থাকতো, তবে দুটি সিজন আগেই এই সিরিজ শেষ হয়ে যেত।"

নির্মাতারা জানিয়েছেন, আর দুটি সিজন পরেই শেষ হয়ে যাবে জনপ্রিয় এই সিরিজ। তবে, শোনা যাচ্ছে, দশটি পর্ব থেকে কমিয়ে মাত্র সাত পর্বেই শেষ করে দেওয়া হবে নতুন সিজনগুলো। বহু প্রতীক্ষিত উইন্টার এসে হাজির হয়েছে পুরো ওয়েস্ট্রোসে, সম্মুখ সমরের অপেক্ষায় সকল বড় হাউজ, একই সঙ্গে অতর্কিত হামলার চমক নিয়ে যেকোন সময় রক্ত হিম করতে আবির্ভূত হতে পারে হোয়াইট ওয়াকাররা। এই শ্বাসরুদ্ধকর গল্পগুলো টিভি পর্দায় দেখতে 'গেইম অফ থ্রোনস' ভক্তদের দশ মাসের দীর্ঘ অপেক্ষার শুরু হলো এখন।