গুগলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “গোটা বিশ্বের সংগীত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, বিশেষ করে ডিস্কো, ফাঙ্ক, ক্যাবারে-এর মতো ধারাকে হিন্দি গানে সংযোজন করে আর ডি বর্মণ বলিউডে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।”
‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে যো দিলকো’-এর মতো জনপ্রিয় গানের এই স্রষ্টাকে তার ৭৭ তম জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপনেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। ডুডলটি অবশ্য কেবল ভারতীয়দের জন্যই করেছে গুগল। অর্থাৎ গুগল ইন্ডিয়ার পেইজে গেলেই কেবল দেখা যাবে ডুডলটি।
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত হিন্দি এবং বাংলার সংগীতাঙ্গন কাঁপানো আর ডি বর্মন ১৯৩৯ সালের ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতায়, ত্রিপুরার এক সংগীতপ্রেমী পরিবারে। ভারতের আরেক খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী শচীন দেব বর্মন এবং মীরা দেব বর্মণের পুত্র তিনি।
আর ডি বর্মণ-এর ডাক নাম ছিল পঞ্চম; কাছের মানুষদের কাছে এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। এই নামের পেছনেও রয়েছে ছোট্ট এক গল্প।
ছোট বেলায় রাহুল যখন কাঁদতেন, তখন নাকি তার কান্নার আওয়াজ নাসিকা গোড়া থেকে অনেকটা সারে গা মা পা-এর ‘পা’ এর মতো শোনা যেতো!
স্বরলিপির পঞ্চম সুরে কাঁদতেন বলেই নাকি তাকে ডাকা হতো ‘পঞ্চম’, সংগীতপ্রেমী পরিবারে এও ছিল এক মজার রসিকতা!
আর ডি বর্মণ সংগীত পরিচালনায় তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬১ সালে অভিনেতা মেহমুদ প্রযোজিত ‘ছোটে নবাব’ সিনেমায়। পরের তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তার সুরেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ‘ইয়াদো কি বারাত’, ‘গোলমাল’, ‘খুবসুরাত’, ‘সানাম তেরি কাসাম’, ‘শোলে’, ‘রকি’র মতো সিনেমার গানগুলি।
হিন্দি সিনেমার গানে লোকজ ধারার সঙ্গে জ্যাজ এবং ডিস্কো ঘরানার সুরের মিশ্রণ ঘটান তিনিই। তার সুরারোপিত শেষ সিনেমাটি হচ্ছে ‘নাইন্টিন ফর্টি টু: আ লাভ স্টোরি’। ‘এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’র মতো মিষ্টি প্রেমের গানের এই সিনেমা মুক্তির আগেই মারা গিয়েছিলেন আর ডি বর্মণ।
ব্যক্তিজীবনে দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আর ডি বর্মণ। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন রিতা প্যাটেল। ১৯৬৬ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু পাঁচ বছরেই দাম্পত্যের ইতি ঘটান তারা।
পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে তিনি বিখ্যাত গায়িকা আশা ভোঁসলেকে বিয়ে করেন তিনি। পঞ্চমদার পরিচালনাতে আশা তাঁর জীবনের অনেক বিখ্যাত গান গেয়েছেন। একসঙ্গে তাদের রয়েছে তিন সন্তান।
রাহুল দেব বর্মণ তার (চন্দ্রবিন্দু হবে না) জীবনে নানান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮১ সালে "সানাম তেরি কাসাম" সিনেমার সংগীত পরিচালনার জন্য ফিল্মফেয়ার "সেরা সঙ্গীত পরিচালক" এর পুরষ্কার পান। বর্তমানে তার নামে ফিল্মফেয়ারে "আর ডি বর্মণ নবীন সঙ্গীত পরিচালক"পুরষ্কার দেয়া (দেওয়া) হয়।
কিংবদন্তী এই সংগীত পরিচালক ১৯৯৪ সালের ৪ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন করেন।