সালমান মানেই বিতর্ক!

পর্দায় সালমান খান নায়ক হতে পারেন, তবে বাস্তব জীবনে একের পর এক বিতর্ক তাকে 'খলনায়ক' বানিয়েছে বহু আগেই। ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের বলিউড ক্যারিয়ারে সালমান জন্ম দিয়েছেন মুখরোচক সব বিতর্কের।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2016, 05:55 AM
Updated : 23 June 2016, 05:55 AM

সাম্প্রতিক সময়ে সালমান আবারও আলোচনায় এসেছেন এক মন্তব্যের জন্য। 

নতুন সিনেমা 'সুলতান'এর শুটিং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে নিজেকে 'ধর্ষিতা নারী'র সঙ্গে তুলনা করে বিপাকে পড়েছেন এই সুপারস্টার। একদিকে টুইটারে চলছে হ্যাশট্যাগ #ইনসেনসিটিভসালমান, অপরদিকে সালমানের বিরুদ্ধে মামলাও করে বসেছে ভারতের মহিলা পরিষদ।

'সুলতান'এর শুটিং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সালমান বলেন, 'প্রতিদিন টানা ছয় ঘন্টা করে আমাদের কুস্তি করতে হত। দিন শেষে আমি যখন মঞ্চ থেকে বের হতাম, নিজেকে মনে হত কোনো ধর্ষিতা নারীর মতোন, হাঁটার শক্তি পেতাম না।'

সালমান নিজে এখনও এই বিতর্কে সাড়া না দিলেও ছেলের পক্ষ হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন তার বাবা চিত্রনাট্যকার-লেখক সেলিম খান। সালমানের এই বিতর্কিত মন্তব্য শিরোনাম হয়ে আসে গসিপ ওয়েবসাইট 'স্পট বয়'তে, যদিও সাংবাদিকদের একাংশের দাবী তার মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন আরও অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই বলিউড সুপারস্টার। যেগুলোর মধ্যে আছেঃ

গাড়ি চাপা মামলা

২০০২ সালের সেপ্টেম্বরের এক দুপুর রাতে গাড়ি চালিয়ে ব্যান্ড্রার রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটান সালমান। তার গাড়ি চাপা পড়ে আহত হন চার জন মানুষ, মারা যান এক জন। এরা সবাই সেদিন রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন। সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, সেদিন রাতে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তবে পুরো ১৩ বছর বিচার চলার পর ২০১৫ সালে উচ্চ আদালত সালমানকে বেকসুর খালাস দেয়।

হরিণ শিকার মামলা

১৯৯৮ সালে 'হাম সাথ সাথ হ্যায়' সিনেমার শুটিং করতে যোধপুর গিয়ে বেআইনিভাবে হরিণ শিকার করেছিলেন সালমান। সেই মামলায় কিছুদিন কারাগারেও কাটাতে হয়েছে এই তারকাকে। আপাতত জামিনে মুক্ত আছেন তিনি, তবে মামলা এখনও চলছে।

ঐশ্বরিয়াকে লাঞ্ছনা

২০০২ সালে 'কুছ না কাহো' সিনেমার সেটে শুটিংরত ঐশ্বরিয়া রায়কে পুরো ইউনিটের সামনে লাঞ্ছিত করেন সালমান। তার সঙ্গে অ্যাশের প্রেমে ফাটল ধরে এরপরই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সেদিন মাতাল অবস্থায় সেটে এসে অ্যাশের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করেন এই অভিনেতা। এক পর্যায়ে প্রেমিকাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন তিনি। তখন ইউনিটের লোকজন এসে তাকে থামান। এরপর নাকি অ্যাশের পার্ক করে রাখা গাড়িতে জোরে আঘাতও করেছিলেন।

বিবেক ওবেরয়কে হুমকি

২০০৩ সালে অ্যাশের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরপরই, অভিনেতা বিবেক ওবেরয়কে হত্যার হুমকি দিয়ে বসেন সালমান। তার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিবেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল অ্যাশের। যদিও অ্যাশ কখনও এই খবর স্বীকার করেননি। সে বছর বিবেক সংবাদ সম্মেলন ডেকে সবাইকে জানান, অ্যাশের সঙ্গে তার প্রেম হয়েছে দেখে রেগে গেছেন সালমান। তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।

ক্যাটরিনা কাইফের জিনিস ছুঁড়ে ফেলা

২০০৯ সালের দিকে, যখন ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে প্রেম চলছিল সালমানের তখন উঠে এই গুঞ্জন। শোনা যায়, ক্যাটের সঙ্গে ঝগড়ার পর তার যাবতীয় জিনিস নিজের বাড়ি থেকে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিয়েছেন সালমান।

শাহরুখের সঙ্গে মারামারি

২০০৮ সালে ক্যাটের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শাহরুখ খানের সঙ্গে হাতাহাতি লেগে যায় সালমানের। এরপর প্রায় সাত বছর তাদের মুখ দেখাদেখি ছিল বন্ধ।

সালমানের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি

মুসলমান পরিবারে জন্ম নিয়েও হিন্দুদের গনেশ বিসর্জন উৎসব পালন করার কারণে ২০০৮ সালে সালমানের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিল ভারতের কয়েকটি ইসলামি সংগঠন।

মোদিকে সমর্থন

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদিকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন সালমান এবং তার পরিবার। মোদির সঙ্গে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি। কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন তার তৎকালীন সিনেমা 'জয় হো' বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। এরপর এক হাসপাতালে ২৫ লাখ রুপি দান করে বিতর্কের মুখ বন্ধ করেন সালমান।

ভক্ত এবং দেহরক্ষীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ

নিজের বদমেজাজের কারণে আলাদাভাবে পরিচিত সালমান। তার ভক্ত, দেহরক্ষী এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। একবার সালমান তার এক দেহরক্ষীকে চড় মেরে বসেছিলেন, তার অপরাধ ছিল এক ভক্তকে আহত করেছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে একবার গাড়িতে করে যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে এক ভক্তের মোবাইল হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন সালমান, ভক্তটি তার ছবি তুলছিল। 'জয় হো'র শুটিং চলাকালীন এক সাংবাদিক সেটের ছবি তুলতে এলে তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে সব ছবি মুছে দেন সালমান।

জেলে পরিবারকে হত্যার হুমকি

ব্যান্ড্রার সাগরপাড়ের জেলে পরিবার অভিযোগ করে, সালমান এবং তার দেহরক্ষীরা তাদের জেলে নৌকাটি সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় তাদের হত্যা করারও হুমকি দেন। কারণ সাগর পাড়ের এমন জায়গায় নৌকাটি বাঁধা হত, যেখান থেকে সালমানের ব্যান্ড্রার অ্যাপার্টমেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট হত।