‘বাবা আমার আকাশ’

কন্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবীর জীবনে তার বাবা প্রয়াত সংগীতশিল্পী মাহমুদ উন নবীর প্রভাব আকাশ সমান। যাপিতজীবনে কেবল হৃদয়ে ধারণ করাই নয়, গানের মাধ্যমেও তিনি প্রতিনিয়ত জিইয়ে রাখছেন বাবার স্মৃতিকে।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2016, 06:50 AM
Updated : 19 June 2016, 06:51 AM

বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে তার গানে এবং জীবনে বাবার প্রেরণা, ভূমিকা সহ নানান বিষয়ে গ্লিটজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

গ্লিটজ: আজ বিশ্ব ‘বাবা’ দিবস। আজকের এই দিনটিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ফাহমিদা: বাবা হচ্ছেন এমন একজন অবয়ব আমার কাছে যার কোনো আকার নেই। মা-বাবা হলেন জন্মদাতা, তাদের কোনো মৃত্যু নেই, তাদের কোনো আকার নেই। আমি কোনো সংজ্ঞায়, কোনো দিবসে আমার বাবাকে আটকে রাখতে পারবো না।

গ্লিটজ: আপনার বাবা মাহমুদ উন নবীর চলে যাওয়াটা গোটা সংগীতাঙ্গনের জন্যই অপূরণীয় এক ক্ষতি। নিজের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে নিশ্চয়ই আপনিও সেটা অনুভব করেন?

ফাহমিদা: আমার বাবা আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পরে আমি তার কথা মনে করে শুধুই কাঁদতাম। কিন্তু এখন আমার আর কাঁদি না। কারন আমি প্রতি মূহুর্তে অনুভব করি আমার বাবা আমার সঙ্গে রয়েছেন। আমি তার আত্মাকে আমার ভিতরে অনুভব করি। আমার যখন খুবই কষ্ট হয় তখনই আমি আমার বাবাকে খোঁজ করি। আর তখনই আমি বাবাকে খুঁজে পাই।

আমার কাছে বাবা হচ্ছে জীবনের ছায়া, বাবা হচ্ছে এক বিশাল আকাশ। যে আকাশে একজন সন্তান তার বাবার ছায়া সবার মধ্যে খোঁজ করে। কিন্তু বাবার জায়গা আসলে কেউ নিতে পারে না।

গ্লিটজ: বাবার গানে অনুপ্রাণিত হয়েই কি আপনার গানের পথচলা শুরু হয়েছিলো?

ফাহমিদা: গান আমার সবসময়ই খুব ভালো লাগতো। আমার বাবার জন্য যে আমি গান করছি তা কিন্তু নয়। তবে গানের মাধ্যমে আমার বাবাকে এখন আমি ধারন করি। কারন আমার বাবা একজন কিংবদন্তি শিল্পী, যার কন্ঠ এতো শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছে তাকে আমাদের ধারন করতে হয়। সেইভাবেই আমি, আমরা গান গাইতে চেষ্টা করি।

যদিও সেরকমভাবে গান গাইতে পারি না, কিন্তু বাবাকে দেখে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তার গানগুলো শুনলে মনে হতো, আরে, আব্বা এতো ভালো গান করেন! তার গান এতো শ্রোতারা, এতো মানুষ ভালোবাসতে পার! তাহলে, আমিও গান গাইতে চাই!

গ্লিটজ: মাহমুদ উন নবী কি আপনার কাছে দাশর্নিক গুরু নাকি কেবলই একজন বাবা?

ফাহমিদা: আমার জীবন ধারনের জন্য আমার বাবার অনেক কিছুই আমাকে গ্রহন করে নিতেই হয়। আমার মনের ভিতরে তার অনেক কিছুই ধারন করতে হয়। কারন জীবনে চলতে গেলে বাবার আদর্শ, বাবাকে যেভাবে মানুষ দেখে-- সেই জায়গাটাকে আমার হৃদয়ে ধারন করে চলতে হয়। মাহমুদ উন নবীর মেয়েকে আসলে যেভাবে মানুষ চিন্তা করে, আমাকে ঠিক সেইভাবেই চলতে হবে।

গ্লিটজ: আপনার জীবনে এমন কোন সংকটময় মূর্হুত কি রয়েছে যেই মূহুর্তে আপনার বাবার উপদশে আপনাকে পথ দেখিয়েছে?

ফাহমিদা: আমার ব্যক্তিজীবনে আমি যখন খুবই অসহায় হযে পড়ি ঠিক তখনই আমি আমার বাবাকে স্বপ্নে দেখি। শুধু তাই নয়, আমার বাবা যেন, সেই স্বপ্নের মাধ্যমেই আমাকে কিছু দিয়ে যায়। তখন আমি পাহাড় পরিমান সম্যস্যার খুব সহজেই সমাধান পেয়ে যাই।

গ্লিটজ: আপনার বাবা যেসব কালজয়ী গান গান গেয়ে গেছেন, সেরকম গান আজ আর হয়না কেন বলে মনে করেন?

ফাহমিদা: আমার বাবা যেসব গানগুলো করেছেন তখন যেই সব সুরকার, গীতিকার সহ আরোও যারা ছিলেন তারা সবাই একটি টিম ওয়ার্ক করতেন। সেই দিক থেকে আমার মনে হয় যদি এখনও টিম ওয়ার্ক হয় তাহলে এখনও অনেক কালজয়ী গান সৃষ্টি হবে। আজকে যে গানগুলো নতুন কালকে সেই গানগুলো পুরনো হবেই।

কিন্তু সোনালী গান সবসময়ই সোনালী গান। এটা পৃথিবীর যেকোন জায়গার জন্যই প্রযোজ্য। তাই আমরা কিছুই বলতে পারবো না যে কেবলমাত্র আমাদের দেশেই কালজয়ী গান রয়েছে বাকী কোথাও নেই মোটেও এমনটি নয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও সেই পুরেনা দিনের গানগুলোই সকলের কাছে ভালো লাগছে। কারন ভালোলাগার জায়গাগুলো এমনই। আরো দশ বছর পরে নতুন যারা প্রজন্ম আসবে তারা হয়ত আমাদের গানগুলোকেই বলবে কালজয়ী গান!

গ্লিটজ: শ্রোতারা আপনাকে একজন কিংবদন্তির কন্যা নাকি শিল্পী ফাহমিদা নবী কোন পরিচয়ে দেখে বলে মনে করেন?

ফাহমিদা: আমি আমার নিজের একটা জায়গা তৈরি করেছি এবং আমি আমার বাবাকে এখন সেই জায়গায় ধারন করি। আর কিংবদন্তি শিল্পী মাহমুদ উন নবীর মেয়ে হিসেবেই আমি থাকতে চাই। আসলে আমার থাকার জায়গাই তাই।

গ্লিটজ: বাবার স্মৃতিকে এই প্রজন্ম ধরে রাখতে পেরেছে বলে কি মনে করেন?

ফাহমিদা: আমি যদি চেষ্টা না করতাম তাহলে আজ মাহমুদ উন নবী হারিয়ে যেতেন- এটা ঠিক। কারন আমার বাবাকে বাচিঁয়ে রাখতে আমাদের ভাইবোনদের কষ্ট করতে হয়। আমাদের আরোও কষ্ট করতে হবে। কারন আমরা যতদিন ভালো কাজ করবো, ভালো গান গাইবো, শ্রোতাদের ভালোবাসা পাবো ততদিনই আমার বাবা সকলের কাছে আরো বেশি ছড়িয়ে যাবেন। এছাড়াও আমরা আমাদের বাবার গানগুলোকে সংরক্ষনেরও চেষ্টা করছি।

গ্লিটজ: নতুন প্রজন্ম কি মাহমুদ উন নবীর গানগুলো মূল্যায়ন করতে পারছে?

ফাহমিদা: সত্যি বলতে নতুন প্রজন্ম এখনও ঠিক মতো আমার বাবার গানগুলোকে গাইতে পারে না। তবে আমি তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলতে চাই, আমার বাবার গাওয়া গুলোকে খুব ভালোভাবে তুলতে হবে। তার গানগুলোকে অনুভব করে গাইতে হবে। আমার বাবার গানের যে স্টাইল, সেটা হলো অনুভব। এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বর্পূন।

তবে নতুন প্রজন্ম খুবই ভালো গান গায়। তাই অনুভবের জায়গাটা যদি ঠিক হয় তখন তারা বাবার গানগুলোতে তুললে বুঝতে পারবে যে বাবার গানগুলো কত সুন্দর গান।

গ্লিটজ: বাবার প্রতি ভালোবাসার কারনেই কি বাবা দিবসের আগের দিন নিজের নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন?

ফাহমিদা: আসলে বিষয়টি মোটেও সেইরকম নয়। আমার গানের নতুন অ্যালবাম ‘সাদাকালো’য়ের কাজ অনেক দিন ধরেই চলছিলো। এটা ঠিক কেমন যেনো কোথায় একটা মিলে গেলো। তবে এটা ঠিক যে আমার সাদাকালো জীবনে আমার বাবা ও আমার যে সম্পর্কের জায়গা রয়েছে ও বাবার যে আর্শীবাদ তা আমার এই ‘সাদাকালো’ অ্যালবামে পড়বে।