ইতালিতে পুরস্কৃত হল ‘অজ্ঞাতনামা’

নির্মাতা তৌকির আহমেদের নতুন সিনেমা ‘অজ্ঞাতনামা’ এবার ইতালির গাল্ফ অফ নেপলস ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভলে অর্জন করেছে জুরি মেনশন অ্যাওয়ার্ড। সিনেমাটি এর আগে প্রদর্শিত হয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের আসরে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2016, 12:52 PM
Updated : 29 May 2016, 03:40 PM

‘অজ্ঞাতনামা’ নিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফ্রান্স এবং ইতালিতে ব্যস্ত সময় কাটছিল তৌকির-এর। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন ‘জয়যাত্রা’ খ্যাত এই নির্মাতা। গ্লিটজ-এর সঙ্গে তিনি ভাগাভাগি করে নিলেন তার অভিজ্ঞতা।

তিনি জানান, “ইতালির গাল্ফ অফ নেপলস ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে ২১ মে দেখানো হয় ‘অজ্ঞাতনামা’। ওইদিন বিকেলেই অ্যাওয়ার্ডটি প্রদান করা হয়।”

সিনেমাটির এমন সম্মাননা অর্জনে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তৌকির বলেন, “কান থেকে সরাসরি ইতালি গিয়েছিলাম চলচ্চিত্র উৎসবটিতে অংশগ্রহণের জন্য। সেখানে বড় বড় দেশের সিনেমাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পুরষ্কার লাভ করতে পারাটা আমার জন্য অবশ্যই অনেক আনন্দের ব্যাপার।”

ছবি: তৌকির আহমেদ-এর ফেইসবুক পেইজ থেকে নেওয়া

তিনি আরও বলেন, “দেশে স্বল্প বাজেট, স্বল্প সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাদের ছবি বানাতে হয়। তাই, আন্তর্জাতিক পরিসরে যখন এরকম এক প্রাপ্তি আসে- সেটা নিঃসন্দেহেই আনন্দদায়ক। এই অভিজ্ঞতা আমার সামনের সিনেমাগুলো নির্মাণে অনুপ্রেরণা যোগাবে।”

বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের অভিবাসী হয়ে শ্রমিক জীবনযাপনের গল্প এবং মানবপাচারের মতো বিষয় তুলে ধরে ‘অজ্ঞাতনামা’। এরকম ছবি তৈরির নেপথ্যের কারণ কী ছিল?

এই প্রশ্নের উত্তরে অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরে তৌকির বলেন, “আমাদের দেশের অনেক মানুষই মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে অভিবাসী হয়ে যায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়। সেখানে যেতে তাদের খরচও হয় অনেক বেশি। সত্যি বলতে, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই শ্রমিক অভিবাসনের খরচ সবচেয়ে বেশি। অথচ বাইরে গিয়ে তাদের বাধ্য হতে হয় মানবেতর জীবন যাপনে।”

তিনি আরও বলেন, “ওইসব দেশে এই শ্রমিকদের কোনো মানবাধিকার নেই। অস্বাস্থকর পরিবেশে তাদের থাকতে হয়, প্রচণ্ড গরমে রাত দিন কাজ করতে হয়। কোনো নিরাপত্তাও নেই তাদের জীবনের। এমনকী ওখানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। এই বিষয়গুলোকে তুলে ধরতে চেয়েছি আমার সিনেমায়। যাতে করে এই সমস্যাগুলো নিয়ে সবাই ভাবে।”

বাংলা ভাষার সিনেমা হলেও ইতালিতে ‘অজ্ঞাতনামা’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের কমতি ছিল না বলেই দাবি করলেন তৌকির।

“ওখানে বাংলাদেশি সিনেমা তো খুব বেশি আসে না। তারপরও আমার ছবিটি অনেকেই দেখেছে এবং জুরি বোর্ড সিনেমাটিকে পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করেছে। এখন থেকে আশা করছি বাংলাদেশি সিনেমা গেলে সবাই উৎসাহ নিয়ে দেখবে।”

ছবি: তৌকির আহমেদ-এর ফেইসবুক পেইজ থেকে নেওয়া

আন্তর্জাতিক পরিসরে দেখানো হলেও শিগগিরই দেশে ‘অজ্ঞাতনামা’ মুক্তির কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই তৌকির আহমেদ-এর। তবে এবছরের মধ্যেই বাংলাদেশেও সিনেমাটি মুক্তি পাবে বলেই আভাস দিলেন তিনি।

‘দারুচিনি দ্বীপ’ দিয়ে পরিচালনার হাতেখড়ি হয় নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা তৌকির আহমেদ-এর। এরপর তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘জয়যাত্রা’ ও ‘রূপকথার গল্প’-এর মতো সিনেমা।

এবার দীর্ঘ আটবছর পর পরিচারকের আসনে তিনি ফিরলেন ‘অজ্ঞাতনামা’ দিয়ে।

সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করীম ও নিপুণ। এছাড়াও আছেন ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, আবুল হায়াতসহ আরও অনেকে। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মস।