‘আমি চাই আমার গান একশ বছর পরেও সবাই শুনুক’

তরুণ বয়সেই ব্যতিক্রমধর্মী গানের মাধ্যমে সংগীতাঙ্গনে নিজের ঠাঁই করে নিয়েছেন কারিশমা সানু সভ্যতা। ইউটিউবে তার রয়েছে নিজস্ব গানের চ্যানেল। ‘ত্রিরত্ন’, ‘ক্রিং ক্রিং’, ‘মায়ের জন্য গান’, ‘তোমাকে’ গানগুলোর মাধ্যমে এরমধ্যে শ্রোতাদের কাছে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2016, 09:23 AM
Updated : 16 May 2016, 09:25 AM

সম্প্রতি নিজের সংগীত ক্যারিয়ার ও সংগীত জগতের নানান বিষয় নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে কথা বললেন সভ্যতা।

গ্লিটজ: ইউটিউবে আপনার গানের চ্যানেল বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু বাজারে আপনার কোন অ্যালবাম নেই কেন?

সভ্যতা: ছোটবেলায় এমন একটি সময় ছিলো যখন ঈদের সময় চার-পাঁচজন পছন্দের শিল্পীর গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হতো। টাকা জমিয়ে আমরা অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম ঈদের সময়টায় সেই সব অডিও অ্যালবাম কেনার জন্য। কিন্তু এখনতো সেই সংস্কৃতি নেই।

যেহেতু আমার গান শ্রোতাদের কাছে পৌছাতে হবে তাই ইউটিউবের মতো প্লাটফর্মকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমার কিছু করার নেই। গানের অ্যালবাম হলো নিজের বাচ্চার মতো। অনেক যত্ন সহকারে কাজ করে গানের অ্যালবাম প্রকাশ করবো আর অ্যালবামে থাকা গানগুলো কেউ শুনবে না--

এটা খুবই খারাপ। সে জন্যই একটি একটি করে গান তৈরি করে ইউটিউবে প্রকাশ করছি। যারা নিয়মিত ইউটিউবের দর্শক-শ্রোতা অন্তত তাদের কাছে পৌছে যাক আমার গান।

গ্লিটজ: ইউটিউবে গান প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছে নিজের অবস্থান তৈরি করা আদৌ কী সম্ভব বলে মনে করেন?

সভ্যতা: এখনকার সময়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই গুগলে সার্চ না করে ইউটিউবে সার্চ করি। কারণ যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্যর ভিডিও টিউটোরিয়াল খুব সহজেই ইউটিউবে পাওয়া যায়। আমার দিক থেকে আমি যেহেতু অনেক দিন থেকেই অনেক ধরনের কাজ ইউটিউবে করেছি সেক্ষেত্রে আমার ভালো সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। যা আমাকে নতুন গানগুলোকে প্রকাশ করতে যথেষ্ঠ সহায়তা করছে।

গ্লিটজ: পাইরেসির কারনে আমাদের সংগীতশিল্প আসলেই কি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে?

সভ্যতা:
পাইরেসি যখন থেকে শুরু হয়েছে… কিংবা পাইরেসি যখন হয়, তখন তা অবশ্যই খারাপ। বিশেষ করে নিজের গান প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় মিউজিশিয়ানদের জন্য পাইরেসি খুবই খারাপ একটা জিনিস। তবে এটা ঠিক, পাইরেসি না থাকলে আমি খুব সহজেই বিদেশী শিল্পীদের নতুন অ্যালবামের গান ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে শুনতে পারতাম না। পাইরেসি না থাকলে পছন্দের বিদেশী শিল্পীর অ্যালবাম কেনার জন্য আমাকে মাসখানেক অপেক্ষা করতে হতো।

কিন্তু যে গানের অ্যালবামটি আমি খুব সহজেই আমার দেশীয় কোন ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মূল্য পরিশোধের ঘরে বসেই হোম ডেলিভারির মাধ্যমে কিনতে পারি সেই ধরনের অ্যালবামগুলো অন্তত কেনা উচিত। নইলে কোনো মিউজিশিয়ান মিউজিক করতে পারবে না। কারণ মিউজিক করতে হলে যথেষ্ট টাকা খরচ করতে হয়। তাই এমন ক্ষেত্রে পাইরেসি খুবই ক্ষতিকর।

গ্লিটজ: আপনি নিজে অ্যাকুইস্টিক গিটার বাজিয়ে গান গাইতে পছন্দ করেন। কিন্তু ইদানিং গানের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল মিউজিকের যে দাপট দেখা যাচ্ছে, এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

সভ্যতা: আসলে এক্ষেত্রে আমাদের শ্রোতাদেরও যেমন সম্যস্যা আছে, তেমনি আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিরও সমস্যা রয়েছে। আমার একটি গান শুধুমাত্র রেকর্ড করতেই চার-পাঁচ মাস চলে যায়। কিন্তু আমি যদি টেকনিকালি মিউজক করতাম অর্থাৎ যদি সবকিছু টেকনো থাকতো তাহলে আমার গানটি তৈরি করতে কেবল এক রাত লাগতো। আমার তখন শুধু এক শিফটের টাকা খরচ করতে হতো। সেক্ষেত্রে এটা তো অনেক সহজ তাই না। এক্ষেত্রে সহজটা ছেড়ে কেউ কি কঠিনটা ধরবে?

আমি চাই মানুষ আমার গান একশ বছর পরেও শুনুক। কিন্তু কেউ যদি চায় তার গান মাত্র দশদিন শুনলেই হবে, তাহলে তা পুরোপুরি ওই শিল্পীর উপর নির্ভর করে। কিন্তু আমি এই দলে নেই।  

গ্লিটজ: তরুণদের মধ্যে আপনার ‍গানের মিউজিক ভিডিওগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে।গানের ক্ষেত্রে মিউজিক ভিডিওর গুরুত্ব আপনার কাছে কতখানি?

সভ্যতা: গানের জন্য একটি মিউজিক ভিডিও আসলে গুরুত্বপূর্ণ না। আর আমার কাছে গানের মিউজিক ভিডিও মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। মিউজিক ভিডিও আসলে আলাদা একটা শিল্প। যদিও ভালো মিউজিক দেখতে খুবই ভালো লাগে তবে সেক্ষেত্রে গানটিও ভালো হওয়ার একটা ব্যাপার রয়েছে।

গানের দিক থেকে বিবেচনা করলে একটি মিউজিক ভিডিও কোনভাবেই গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু মিউজিক ভিডিও যুগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন যুগটাই এমন যে, মিউজিক ভিডিও তৈরি না করলে, একটা গান কোনভাবেই শ্রোতা-দশর্কের কাছে পৌছানো সম্ভব নয়। কারণ এর বিকল্প মাধ্যম এখনও তৈরি হয়নি।

আমি তো চাই, এমন একটা আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে, যার মাধ্যমে একশ গানের মিউজিক ভিডিও একবারেই তৈরি করা যাবে।

গ্লিটজ: কনসার্টে আপনার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এর কারণ কি?

সভ্যতা:
 আমাকে কেউ যদি না ডাকে তাহলে আমি কীভাবে যাবো? সত্যি কথা কিন্তু এটাই। তবে যৌন নিপিড়ীত নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শাহবাগে আয়োজিত কনর্সাটে আমাকে গান গাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। তাছাড়া সেখানে আমার গান গাওয়ার জন্য একটি জায়গাও ছিল। কারণ আমি নিজে একজন নারী। এছাড়া আর কোথায় আমাকে গান গাওয়ার জন্য ডাকবে? আমি কোথায় ফিট হই, বলুন তো?

গ্লিটজ: আপনার বোন জিনাত সানু স্বাগতা গানের পাশাপাশি অভিনয়েও ক্যারিয়ার গড়েছেন। আপনি নাটকে নিয়মিত হলেন না কেন?

সভ্যতা: আমি ছোটবেলায় নাটকে কাজ করেছি। নাটক যে আসলেই কী তখন আমি তা মোটেও বুঝতাম না। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম নাটক আসলেই কি তখন আর নাটকে নিয়মিত হওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার মনে জাগেনি। শ্যুটিংয়ের জন্য মেক আপ করে ঘন্টার পরে ঘন্টা অপেক্ষা করা আমার মোটেও ভালো লাগেনি। সবচেয়ে বড় কথা হলো অভিনয় নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই, ভালোবাসাও নেই। দর্শক হিসেবে নাটক দেখতেই কেবল ভালো লাগে। 

গ্লিটজ: এ সময়ের ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই।

সভ্যতা: অ্যালবামের জন্য গানের কাজ চলছে। অনেক বছরের জমানো কিছু গান আছে যেগুলো আমি এতদিন প্রকাশ করতে পারিনি। আমি নিজেও প্রকাশ করতে চাইনি। যদিও অনেক আগে থেকেই আমার গানগুলো আমি কপিরাইট করে রেখেছি। তবে এখন থেকে ইউটিউবে আমার কোন গান আর প্রকাশ করবো না। এছাড়াও আমাদের বাবার স্কুল ‘আনন্দাম সংগীতাঙ্গন’ একাডেমিকে ঘিরে ব্যস্ততা আছে।