‘হিন্দির নকলই ঢাকাই সিনেমার অধঃপতনের কারণ’

বাংলাদেশের প্রথম সুপারহিরো সিনেমা ‘বিজলী’তে অভিনয় করছেন টালিগঞ্জের শিল্পী শতাব্দী রায়। সম্প্রতি সিনেমাটির মহরত উপলক্ষ্যে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। সেখানেই বললেন, অতীতে হিন্দি সিনেমার নকলই ঢাকাই চলচ্চিত্রের অধঃপতনের অন্যতম কারণ। সেই সঙ্গে আরও জানালেন যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে নিজের মতামত।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2016, 11:52 AM
Updated : 27 April 2016, 11:53 AM

অনুষ্ঠানের একটা পর্যায়ে গ্লিটজ-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় শতাব্দী তুলে আনেন ঢাকাই সিনেমার প্রতি নিজের অভিযোগ।

“বাংলাদেশে বসেই বাংলাদেশকে নিয়ে একটা খারাপ কথা বলছি। সেটা হচ্ছে আমি যে সময়কার সিনেমায় কাজ করতাম, তখন ঢাকাই সিনেমা মানেই ছিল হিন্দি সিনেমার অনুমোদনহীন রিমেইক। এখন হয় কীনা, আমি জানি না। তবে সেই খারাপ রিমেইকগুলোকে যদি ভারতবর্ষে গিয়ে আবারো রিমেইক করা হয়, তাহলে কিন্তু বাংলা সিনেমার অধঃপতন ছাড়া আর কিছুই হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা নিজেদের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে গেছি। নিজেদের জায়গা থেকে সরে গেছি। আমি তখন দেখতাম, হিন্দি সিনেমার গানগুলোকে এখানে (বাংলাদেশে) শুধু শব্দ পাল্টে, সুরও একইরকম রেখে সিনেমায় ব্যাবহার করা হতো। আমার সিনেমার ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটেছে।”

শতাব্দী জানান, ওই সময়ে বাংলাদেশের অনেক সিনেমার রিমেইক কলকাতায় হতো। কিন্তু হিন্দি সিনেমার অনুমোদনহীন নকল হওয়ায়, সেসব সিনেমা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো তাদের।

“তখন আপনাদের অনেক সিনেমার রিমেইক ওখানে (কলকাতা) আমার করা হয়েছে, যেগুলোর নির্মাতা ছিলেন স্বপন সাহা। আমি সিনেমার গান করেছি। সেসব গান আপনাদের সেন্সরবোর্ড ছেড়ে দিলেও কলকাতায় তা অনুমোদন পায়নি। কারণ তা ছিলো, অনুমতি ছাড়া হিন্দি সিনেমার গানের রিমেইক।”

৪৭ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী আরও বলেন, “অনুমতি নিয়ে একটি সিনেমার রিমেইক করার বিষয়টি একেবারেই আলাদা। কিন্তু আমি পোস্ট কার্ড দেখে পোশাক ডিজাইন করে সিনেমা র্নিমাণ করলাম-- তার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। তাও আবার একটা হিন্দি সিনেমাকে নকল করলাম, নিজেদের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে। আমার মনে হয়, ঢাকাই সিনেমার খারাপ অধঃপতনের কারণগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম।” 

এই সমস্যা এড়াতে তিনি পরামর্শ দেন ঢাকাই সিনেমার স্বকীয়তা ধরে রাখার। তিনি বলেন, “সেজন্য আমার অনুরোধ, যে সিনেমা নিজস্বতা নিয়ে হয় সেই সিনেমাই নির্মাণ হোক। বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমার রিমেইক করার কোন কারণ নেই। এবং সেকারণেই যে আমরা দর্শক হারিয়েছি-- তাতে কোন সন্দেহ নেই।”

শতাব্দী রায়ের ঝুলিতে রয়েছে বাংলা ও ওড়িয়া ভাষার ৩০০ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। যৌথ প্রযোজনার অনেক সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যৌথ প্রযোজনার ইতিহাস অনেক পুরনো। কিন্তু মাঝখানে বেশ কিছুদিন দুই দেশ থেকেই যৌথ প্রযোজনায় বাংলা সিনেমা নির্মাণে ভাটা পড়েছিলো। তার নেপথ্যের কারন কি হতে পারে?

গ্লিটজের এমন প্রশ্নে শতাব্দীর স্পষ্ট উত্তর, “আমি যখন যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় কাজ করেছি তখন সেই সিনেমাগুলো হয় বাংলাদেশে হিট হয়েছে, নয় তো কলকাতায়। আমার এমন কোনো সিনেমার নাম মনে পড়ছে না, যে সিনেমা দুই দেশেই ব্যবসাসফল হয়েছে। আমার মনে হয় সে কারণেই হয়ত মাঝের সময়টাতে যৌথ প্রযোজনা পিছিয়ে গিয়েছিলো।”

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ফিরে আসাকে স্বাগত জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে শতাব্দী বলেন, “কিন্তু এখন আবারও যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা তৈরি হচ্ছে। এটা আসলেই হওয়া দরকার। এর মাধ্যমে দুটো জায়গার শিল্পীদের বন্ধুত্ব বাড়ে, দুটো জায়গার প্রযোজকদের মধ্যেকার সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। এবং ভাবনা চিন্তার আদান প্রদানের ফলে সৃষ্টিশীল জায়গাগুলোর বৃদ্ধি ঘটে।”

অভিনেত্রী হিসেবে টালিগঞ্জ ও ঢালিউডে শতাব্দী রায়ের পরিচিতি থাকলেও তিনি একজন প্রযোজক, নির্মাতা, কবি ও রাজনৈতিক কর্মী। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে ভারতের সাধারণ র্নিবাচনে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম থেকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে টানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তা হলে ব্যক্তি জীবনে কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?

গ্লিটজের প্রশ্নে আবারো মাইক্রোফোন হাতে মিষ্টি হাসলেন শতাব্দী। বললেন, “মানুষ শতাব্দী রায়। যখন কবি, রাজনৈতিক কর্মী, অভিনেত্রী হওয়ার পরেও কেউ আমাকে বলে, ‘দিদি আপনি খুব ভালো মানুষ’ তখন আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হই। কারণ অভিনয় তো সবাই করে। কবিতা তো বহু লোক লেখেন। রাজনীতিও বহুলোক করেন। সুতরাং মানুষ হওয়াটাই আমার বড় পাওনা।”