​‘​একটি সূতার জবানবন্দী’: পোশাক শিল্পের অন্ধকার জগত

তিন বছর পেরিয়ে গেল, রানা প্লাজা ধ্বসের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে দেশ। হাজারেরও বেশি পোশাক শ্রমিকের জীবন সেদিন বিলীন হয়েছিল ধুলোয় লুটিয়ে পড়া কংক্রিটের শক্ত আস্তরের নিচে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2016, 09:29 AM
Updated : 24 April 2016, 09:30 AM

শুধু রানা প্লাজার ঘটনা নয়, সাভারে স্পেকট্রাম গার্মেন্টস কিংবা তাজরীন ফ্যাক্টরি দুর্ঘটনার কথাও মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের ‘অমূল্য’ পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ‘মূল্যহীন’ জীবনের কথা। গার্মেন্টসকর্মীদের সুতার বুননেই পোশাক শিল্পে আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষে; তাদের এই ভয়াল নিয়তি কি নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা? এমন প্রশ্নই বারবার আঘাত করে গেলো নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের প্রামাণ্যচিত্র ‘একটি সূতার জবানবন্দী’তে।

শুক্রবার ছায়ানটের মিলনায়তনে ছোট্ট পরিসরে বাংলাদেশে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় সাইমন নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রটির। ‘শুনতে কি পাও’ দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করা এই পরিচালকের প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব। প্রদর্শনীটির সঞ্চালনায় ছিলেন ‘একটি সূতার জবানবন্দী’ প্রামাণ্যচিত্রটির প্রযোজক এবং সাইমনের স্ত্রী সারা আফরিন।

স্পেকট্রাম, তাজরীন কিংবা রানা প্লাজা দুর্ঘটনা--- গার্মেন্টস কর্মীদের দুর্বিসহ পরিণতি কতটুকু ফ্রেমে ধারণ করা সম্ভব, সেটা নিয়ে নিশ্চিত নন সারা আফরিন। তার ভাষ্যে, “এটা কোনো সিনেমা নয়, এটি শুধু একটি প্রামাণ্যচিত্র। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমরা যেটা যথার্থ মনে করেছি, সেটিই আমরা ফ্রেমে ধারণ করে এখানে প্রদর্শন করছি।”

পোশাক শ্রমিকদের কষ্ট নিজের ক্যামেরাবন্দী করে সেটাকে কখনই সিনেমা দাবী করতে চান না নির্মাতা সাইমন।

“আমি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে কি করতে পারি? রেকর্ডিংগুলো ফেলে দিতে পারি, ভুলে যেতে পারি যে আমি সেগুলো কখনও ধারণ করেছিলাম, অথবা এটা যেভাবে আছে সেভাবেই রাখতে পারি।” প্রামাণ্যচিত্রটি নিয়ে নিজের অনুভূতি এভাবেই ব্যক্ত করলেন নির্মাতা।

প্রামাণ্যচিত্রের গল্প এগিয়েছে গার্মেন্টস দুর্ঘটনাগুলো নিয়ে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন জগতের পাঁচজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীকে কেন্দ্র করে। একজন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা, একজন গার্মেন্টস মালিক, এক সমকালীন শিল্পী, একজন শিক্ষক এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা এক শ্রমিক-- এই পাঁচজন মানুষের জীবনে যে দাগ কেটে গেছে দুর্ঘটনাগুলো, সেটাই ধরা পড়েছে ৫৫ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রে।

২০১৩’তে চিত্রনাট্য বিভাগে এশিয়ান পিচ পুরস্কার জিতে নেওয়া এই সিনেমাটি নির্মাণে দুবছরেরও বেশি সময় নিয়েছেন সাইমন। বললেন নির্মাণকাজের সমস্যাগুলোর কথাও-- “সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো, এই বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কেউ কথা বলতেই চায় না। আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে চরিত্রগুলো নির্বাচন করে তাদের একই ক্যানভাসে নিয়ে আসা।”

২০২১ সালে পোশাক শিল্প থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় নিজেদের শ্রমের দাম কতটুকু পাচ্ছে গার্মেন্টস কর্মীরা আর তাদের মাথার উপর নিরাপত্তার ছায়াই বা রয়েছে কতটুকুই -- শ্রম কেনাবেচার এই ‘রাজনীতি’কেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ‘একটি সূতার জবানবন্দী’।