দিতির ক্যান্সার ডায়েরি

ক্যান্সারের সঙ্গে দিতির লড়াইয়ের শুরুটা বেশিদিন আগে হয়নি। শুরুতে মনে হয়েছিল, এ লড়াইয়ে জিৎ হবে তারই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে চেষ্টাই করে গেছেন, অপরিসীম স্পৃহা নিয়ে। 

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2016, 02:37 PM
Updated : 20 March 2016, 03:54 PM

দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতা বোধ করছিলেন মধ্য বয়সী অভিনেত্রী দিতি। দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তার মস্তিষ্কে টিউমার জন্ম নিয়েছে। ২৫ জুলাই ভর্তির পর সেখানেই সফলভাবে অস্ত্রোপচার হয় তার।

সে সময় মায়ের বরাতে মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ফেইসবুকে লেখেন, “এখানে আমি ভালো আছি। দিনে হাজারটা ইনজেকশন দেয়, খালি এটাই বিরক্ত লাগে। ডাক্তার বলেছে আমার ব্রেইনে ছোট একটা টিউমার হয়েছে, এমন টেনশনের কিছু নাই। সব কিছু হয়ে গেছে। খালি ওইটা মাথা থেকে ফেলতে পারলেই হয়। পরশু দিন অপারেশনের তারিখ। আমি তোমাদের সাথে খুব শীঘ্রই মজা করতে চলে আসবো ইনশাল্লাহ। ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরো, দোয়া করো, আমার উপর তোমাদের এত দোয়া কিছু হবে না ইনশাল্লাহ।”

২৯ জুলাইয়ের সেই অস্ত্রোপচারের ফলে টিউমার অপসারণ সম্ভব হলেও অভিনেত্রীর যন্ত্রণার অবসান হয়নি। ফলে মাদ্রাজে দুই মাস কাটিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। এক মাস পর আবারও স্থানীয় হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হয়।

ঢাকায় ফেরার প্রায় দেড় মাস পর আবারও মাদ্রাজের হাসপাতালে ফিরতে হয় তাকে। ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসার জন্য সেখানে পৌঁছান তিনি।

লামিয়া জানান, পরে আরো দুটি অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন ছিল। মাদ্রাজে পা রাখার কয়েক দিন পর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করা হলে দিতির অবস্থার অবনতি হয়। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে।

১৪ ডিসেম্বর লামিয়ার ফেইসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, দিতির লাইফ সাপোর্ট খোলা হয়েছে। পরের ৪৮ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অবস্থার উন্নতি হলে ফেরানো হবে ওয়ার্ডে।

কিন্তু এরপর আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেননি অভিনেত্রী।

৪ জানুয়ারি লামিয়া ফেইসবুকে লেখেন, “তেজষ্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে পারকিনসন্স রোগ বাসা বেঁধেছে দিতির শরীরে।” এছাড়া প্রচণ্ড যন্ত্রণা তার নিত্যসঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে।

এর কিছুদিন পর পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহিম গুলজারের সঙ্গে গ্লিটজের কথা হয়। তিনি লামিয়ার ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টের তথ্য সমর্থন করে বলেন, “দিতির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।” কেমোথেরাপির প্রতিক্রিয়ায় প্রচণ্ড যন্ত্রণাবোধ করছেন তিনি।

গুলজার আরো বলেন, “এই রোগ কখনো সারবে না। এর মধ্যেই তাকে যতোটা ভালো রাখা যায়।”

লামিয়ার পোস্ট করা ছবিসহ আরো একটি ফেইসবুক পোস্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবার। ছবির সঙ্গে লামিয়া লেখেন, “তার যখন চুল পড়া শুরু হলো, তিনি একটি থলেতে নিজের চুল জমানো শুরু করলেন। এটা নিয়ে তিনি মন খারাপ করেননি।”

লামিয়া আরো লিখছেন, “তিনি একজন অভিনেত্রী। দিন শেষে তার চেহারাই তার কাছে সব কিছু। কিন্তু তিনি কোনো পাত্তাই দেননি। এতো কেবল চুল। আসবে আর যাবে। তিনি বললেন, এগুলো জমিয়ে দুটো পরচুলা বানাবেন। একটা তার এক বন্ধুর জন্য যার টাক পড়ে যাচ্ছে এবং আরেকটা তার জন্য।”

"আমি বুঝতে পারিনি। তাকে কষ্ট পেতে দেখে আমার রাগ হয়েছে। তাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি বিষয়টা পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না, তখন আমার আরো রাগ হয়েছে। কিন্তু তিনি সারা জীবন এমনই ছিলেন। অপরাজেয়। এই স্পৃহা কোনোদিন মরবে না।”

৮ জানুয়ারি পরিচালক গুলজার জানান, “তারা ফিরে আসতে চাইছে, এখনো তারিখ ঠিক করা যায়নি। আশা করা যায়, তারা সব সব রকমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ১৫ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসবেন।”

তবে এর একদিন পরই দুই সন্তানের সঙ্গে দেশে ফিরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন অভিনেত্রী। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত হাসপাতালের চৌহদ্দিতেই থাকলেন।

৩১ মার্চ তার বয়স হতো ৫১ বছর। ক্যান্সার তাকে দূরে সরিয়ে নিলেও, অসংখ্য ভক্তের ভালোবাসায় চিরকালের জন্য বাঁধা পড়েছেন তিনি।

ছবি: লামিয়া চৌধুরীর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে।