'ক্রুদ্ধ, বিক্ষুব্ধ, যন্ত্রণাদগ্ধ' যে নির্মাতা

গুণী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের ৯০তম জন্ম ও ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ। তার জীবন দর্শনকে সিনেমার ভাষায় নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার এই আয়োজনের উদ্বোধন করা হয় ১২ ফেব্রুয়ারি।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2016, 09:44 AM
Updated : 13 Feb 2016, 09:44 AM

প্রদীপ জ্বেলে উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ঋত্বিক ঘটকের কন্যা সংহিতা ঘটক, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফজলুল লতিফ চৌধুরি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন চলচ্চিত্রকার এবং চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মোরশেদুল ইসলাম।

ঋত্বিক ঘটক নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথমবারের মতো এ ধরনের কোনো রেট্রোস্পেক্টিভ আয়োজন করা হলো।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি সঞ্জয় নিয়োজিত আছেন একজন ঋত্বিক গবেষক হিসেবেও। তার ভাষ্যে, "ঋত্বিক শুধু পরিচালক নন, তিনি একজন সিনেমার শিক্ষকও ছিলেন। সিনেমা নিয়ে এই উপমহাদেশে গবেষণা এত উন্নত হতো না যদি উনি না থাকতেন। আন্দ্রেই তারকভ্‌স্কি কিংবা সের্গেই আইজেনস্টাইনের সাথে বাংলার ঋত্বিকেরই তুলনা চলে"।

এদিকে রেট্রোস্পেক্টিভে সিনেমা প্রদর্শনী ছাড়াও অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় একটি কর্মশালা পরিচালনা করবেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিতব্য এই কর্মশালার শিরোনাম ‘পাঠপ্রকল্প: ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র’। এরকমই এক কর্মশালার কথা মনে করে ফিরে গেলেন তিনি ১৯৯৮ সালে। ঋত্বিককে নিয়ে সেবারের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান এবং চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ।

সত্যজিত রায়ের 'ঋত্বিক সেরা বাঙ্গাল' উদ্ধৃতিটি উচ্চারণ করে ঋত্বিককে সঞ্জয় আখ্যা দেন 'দুই বাংলার একটি সেতুবন্ধন' রূপে।

নিজের বাবাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ভিজে আসে ঋত্বিক তনয়া সংহিতা ঘটকের। কাছ থেকে দেখেছেন বাবার সংগ্রাম।

মাত্র আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করলেও ঋত্বিকের অসমাপ্ত কাজ রয়েছে ত্রিশটিরও অধিক। অসমাপ্ত কাজগুলো প্রকাশের চেষ্টা চলছে বলে জানালেন সংহিতা।

'তিতাস একটি নদীর নাম' ছবিটি নির্মাণ কালে ঋত্বিককে জানার সুযোগ হয় মন্ত্রী এবং অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের। নিজের ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকেই বর্ণনা দিলেন এই কিংবদন্তী পরিচালকের।

"ক্রুদ্ধ, বিক্ষুব্ধ, যন্ত্রণাদগ্ধ; সব কিছু যেন তিনি ভেঙ্গে ফেলতে চান। এই যে তাড়না, তার সংগ্রাম- এই বার্তাগুলোই তিনি দিতে চেয়েছেন তার সিনেমার মাধ্যমে।"

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পরই প্রদর্শিত হয় ঋত্বিক নির্মিত 'মেঘে ঢাকা তারা' সিনেমাটি।

নির্মাণের ক্রম অনুসারে ১৩ থেকে ১৭ ই ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন বিকাল ৪ টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় প্রদর্শিত হবে ঋত্বিক ঘটকের আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এছাড়াও থাকবে ঋত্বিককে নিয়ে নির্মিত দুটি প্রামাণ্যচিত্র ও একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। প্রধান মিলনায়তনের আসন পূর্ণ হবার সাপেক্ষে এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত।