ঢাকাই সিনেমার সুদর্শন 'গ্যাংস্টার'

মডেল থেকে নায়ক হয়ে ওঠা এবিএম সুমন তার রাফ অ্যান্ড টাফ লুকের জন্য এরই মধ্যে নির্মাতাদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। পরপর তিনটি সিনেমায় গ্যাংস্টারের চরিত্রে অভিনয় করা এই নবাগত বলছেন গতানুগতিক প্রেমিক পুরুষের অভিনয় তার দ্বারা হবে না। ঢাকাই সিনেমায় নায়কদের পালা বদলের চিহ্ণবাহী এই নতুন মুখের আড্ডায় বসেছিলেন গ্লিটজের সঙ্গে।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 07:16 AM
Updated : 7 Feb 2016, 07:19 AM

গ্লিটজ: ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আপনাকে কেবল গ্যাংস্টার চরিত্রেই দেখা যাচ্ছে, কারণটা বলবেন কি?

এবিএম সুমন: শুরু থেকেই আমার কাছে যেসব সিনেমায় কাজের প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর প্রতিটিতেই কেন্দ্রীয় চরিত্রের মধ্যে রাফ এন্ড টাফ ব্যাপারটা ছিলো। পরিচালকদের মনে হয়েছে আমি তাদের গল্পের গ্যাংস্টার চরিত্রের জন্য উপযোগী। আসলে ‘অচেনা হৃদয়’,‘রুদ্র দ্য গ্যাংস্টার’ ও ‘আদি’ এই সিনেমাগুলোতে গ্যাংস্টার চরিত্রের পুনরাবৃত্তির বিষয়টা একেবারেই কাকতালীয়।

গ্লিটজ: ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘ভ্রমর’ সিনেমাতেও কি গ্যাংস্টার চরিত্রে দেখা যাবে?

এবিএম সুমন: এবার আর গ্যাংস্টার নয়, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় আমি একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে কাজ করছি। যেখানে আমাকে আশফাক নামে সোয়াট দলের প্রধান হিসেবে পর্দায় দেখা যাবে। তবে ‘ভ্রমর’ সিনেমার মাধ্যমে দর্শক প্রথমবারের মতো আমাকে গ্রামীন চরিত্রে দেখতে পারবে।

গ্লিটজ: রোমান্টিক কিংবা কমেডি ধাঁচের চরিত্রে অভিনয়ে কি অনীহা কাজ করে?

এবিএম সুমন: পরিচালকরা অভিনয়ের ক্ষেত্রে কখনোই আমার কাছ থেকে প্রেমিক ব্যাপারটা চায়নি। সিনেমায় চরিত্রগুলো এতোই গুরুগম্ভীর থাকে যেখানে রোমান্টিক অভিনয় করার কোনো সুযোগ থাকে না। আমাকে দিয়ে গতানুগতিক প্রেমের দৃশ্য হয়তো হবেও না। কমেডি চরিত্রের জন্য পরিচালকরা যদি আমার উপর বিশ্বাস রাখে এবং সিনেমাটি যদি দর্শকদের জন্য কোনো র্বাতা দিতে সক্ষম হয় তাহলে অবশ্যই আমি কমেডি সিনেমায় অভিনয়ের ঝুঁকি নেবো।

গ্লিটজ: ভিন্ন ধারার সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলে কি লুফে নেবেন?

এবিএম সুমন: আমাকে কখনো  অফ ট্র্যাক সিনেমায় কোনো চরিত্রে কাস্ট করা হবে কি না সেটাই তো বড় কথা। ভিন্ন ধারার সিনেমায় অভিনয়টা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এমন সিনেমায় কাজ করতে গেলে একজন অভিনেতার অনেক বছরের অভিনয়ের সাধনা প্রয়োজন। এজন্য মঞ্চের অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট প্রয়োজন। আর অফ ট্র্যাক সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য আমি এখন মোটেও প্রস্তুত নই।

গ্লিটজ: ‘অচেনা হৃদয়’ সিনেমার প্রচারের সময় আপনার ও প্রসূনের একটি চুম্বনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। এটা কি প্রচারের অংশ ছিলো নাকি পর্দায় নায়িকার সঙ্গে রসায়ন পর্দায় বাইরেও ছাপ ফেলেছিল?

এবিএম সুমন: চুম্বনের বিষয়টা ছিলো সর্ম্পূনই ভালো বন্ধুত্বের জায়গা থেকে। এখানে সিনেমার প্রচার কিংবা নায়িকার সঙ্গে পর্দার রসায়ন পর্দার বাইরে আসার কোনো বিষয় ছিলো না। আমি ও প্রসূন সিনেমায় জুটিবদ্ধ হয়ে কাজ করার অনেক আগে থেকেই ভালো বন্ধু।

গ্লিটজ: এ প্রজন্মের নায়ক হিসেবে সিনেমায় নায়িকার সঙ্গে চুম্বন দৃশ্যে অভিনয়ের বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

এবিএম সুমন: আমরা যদি টেলিভিশনে চুম্বন দৃশ্যে দেখে বিনা সংকোচে তা গ্রহন করতে পারি এবং সেগুলো প্রচারের ক্ষেত্রেও যদি তেমন কোনো অসুবিধা না থাকে, তাহলে আমাদের সিনেমায় গল্পের প্রয়োজনে শৈল্পিকভাবে যদি একটা চুম্বনের দৃশ্য দেখানো হয় তাতে আমি তো কোনো দোষ খুঁজে পাই না। বিনামূল্যে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দর্শকদের চুম্বনের দৃশ্য দেখানোর ক্ষেত্রে সরকারের যদি কোনো সেন্সরশিপ না থাকে তাহলে আমাদের সিনেমাতে কেন এমন দৃশ্যে সেন্সর থাকবে।

গ্লিটজ: ‘রুদ্র দ্য গ্যাংস্টার’ সিনেমার নায়িকা আপনার সাবেক প্রেমিকা । সিনেমাটি যখন মুক্তি পাবে তখনকি আপনি তার সঙ্গে সিনেমার প্রচারে অংশ নেবেন? 

এবিএম সুমন: সিনেমাটা মূলত প্রযোজকের এটা আমার কিংবা আমার নারী সহশিল্পীর ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। একজন নায়ক হিসেবে যেমনি সিনেমাটি আমার, ঠিক তেমনি একজন নায়িকা হিসেবেও সিনেমাটি আমার সেই নারী সহশিল্পীর। আমাদের দুজনের ভেতরে যাই থাকুক কিংবা যাই ছিলো ব্যবসার ক্ষেত্রে হিসেবটা একেবারেই অন্যরকম। সিনেমার প্রচারের অংশ হিসেবে এখনও আমরা অনেক সময় ফটোশুট করছি ও সাক্ষাৎকার দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না।

গ্লিটজ: শুধুই কি সিনেমাতেই থিতু হতে চান না টেলিভিশনেও কাজ করার ইচ্ছা আছে?

এবিএম সুমন: সিনেমাতে কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরই আমি র‌্যাম্প মডেলিং ও টেলিভিশন ফিকশনে কাজ বন্ধ করে দেই। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে বড় পর্দা বড় পর্দাই। এর বিকল্প কোনো মাধ্যম আর নেই। যখই সিনেমাতে থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলাম তখন থেকেই আমার ধ্যান, জ্ঞান, স্বপ্ন, আত্নত্যাগ সবকিছুই কেবল সিনেমাকে ঘিরেই।

গ্লিটজ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই জমানায় অনেকেই তারকা হয়ে উঠছেন খুব সহজেই। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

এবিএম সুমন: আমাদের স্টারডম বিষয়টাকে পুরোদমে নষ্ট করে দিয়েছে সোশাল মিডিয়া ।শালমান শাহ কিংবা মান্নার সময়ে আমরা তাদেরকে পোস্টার কিংবা সিনেমা হল ছাড়া দেখতেই পারতাম না। সোশাল মিডিয়াতে মিলিয়ন ফলোয়ার কেবল একজন শিল্পীকেই ফলো করছেন না, তারা অন্য শিল্পীকেও ফলো করছেন। তবে আমি মিলিয়ন ফলোয়ারের স্টারডম চাই না বরং আমার অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় একটা চিহৃ রেখে যেতে চাই। যেন আমার মৃত্যুর পরও দশর্কের হৃদয় থেকে আমার নামটা কখনোই মুছে না যায়।