গানে না অভিনয়ে পরিচয়!

গাইতে গাইতে গায়েন নন তারা, প্রচারের আলোয় আসেন সুকণ্ঠের জোরেই। কিন্তু একসময় তাদের পথে বেঁকে যায় অভিনয়ের দিকে। আজ তাদের কেউ কেউ অভিনয়শিল্পী হিসেবেই পরিচিতি পাচ্ছেন, কেউ আবার দুই সত্ত্বাকেই  ধরে রেখেছেন।

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2016, 11:18 AM
Updated : 4 Feb 2016, 11:18 AM

তাহসান রহমান খান

গানের মানুষ তাহসানের অভিনয় জীবন শুরু ২০০৩ সালে। ২০০০ সালে আত্মপ্রকাশ করে অল্টারনেটিভ রক ঘরানার ব্যান্ড ব্ল্যাক। তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ব্যান্ডটির সব সদস্যকে নিয়ে ২০০৩ সালে আফসানা মিমি নির্মাণ করেন টেলিফিল্ম ‘অফবিট’। এরপর থেকে দুই মাধ্যমেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন তাহসান। এছাড়া বিজ্ঞাপনচিত্র, উপস্থাপনায়ও উপস্থিতি রয়েছে। ব্ল্যাক ভেঙে যাওয়ার পর একক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সিনেমার সংগীত পরিচালনা, প্লেব্যাক চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে অভিনেতা হিসেবে ক্রমেই উপরের দিকে উঠেছে তার জনপ্রিয়তার রেখা। অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক- ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’, ‘মনফড়িংয়ের গল্প’, ‘মনসুবা জংশন’, ‘নীলপরী নীলাঞ্জনা’।

পার্থ বড়ুয়া

১৯৯৮ সালের দিকে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘শহর তলীর আলো’ নাটকে অভিনয়ের আগ পর্যন্ত পার্থর অভিনয় প্রতিভা বিষয়ে কেউ জানতো না। এমনকি এমনটাও জানা যায়নি ছাত্রজীবনে নাট্যদল কালপুরুষের কর্মী ছিলেন তিনি। যদিও গায়ক হতে চাননি, কিন্তু সোলসে নকীব খান, তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চুদের স্থলাভিষিক্ত হতে হয় তাকে। সম্প্রতি যন্ত্রহীন সংগীত ধারা আ-কাপেলা নিয়ে নিরীক্ষা শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে অভিনেতা হিসেবে দিন দিন বেড়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। তার উল্লেখযোগ্য নাটক ‘শহরতলির আলো’, ‘নিয়ত নিয়তি নিতান্তই’, ‘জলকণা’, ‘কিক অফ’, ‘এফএনএফ’, ‘ফিফটি ফিফটি’, ‘আয়নামহল’ ইত্যাদি। অমিতাভ রেজার সিনেমা 'আয়নাবাজি'র মাধ্যমে চলচ্চিত্রেও অভিষেক হতে চলেছে।

আগুন

ঢাকাই সিনেমায় প্লেব্যাকে সতেজ হাওয়ার এক ঝাপটার মতোই আগমন ঘটেছিল তার। সালমান শাহের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অভিনয়ের শুরুটা বাবা খান আতাউর রহমানের হাত ধরে। ১৯৯৭ সালে নির্মিত ‘এখন অনেক রাত’ ছবিতে একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এখন নিয়মিত অভিনয় করছেন। ‘ঘেটুপুত্র কমলা’, ‘একাত্তরের মা জননী’র পর এখন শাহ আবদুল করিমের জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘রঙের দুনিয়া’য় অভিনয় করছেন। ‘রঙের মানুষ’, ‘বাজি নিম ফুল’, ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’- নাটগুলোতে তার অভিনয় প্রসংশিত।

নুসরাত ইমরোজ তিশা

‘নতুন কুঁড়ি’র পর টুকটাক অভিনয়ের ফাঁকে আরো তিন সদ্য তরুণীকে নিয়ে গড়েছিলেন ফোর অ্যাঞ্জেলস। এর আগেই অনন্ত হীরার ‘সাতপেড়ে কাব্য’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। ব্যান্ডটির ভবিষ্যত বেশি দূর এগোয়নি। আর বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে নজর কাড়া তিশা হাল আমলের প্রতিষ্ঠিত ও নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী। দুটি সিনেমাসহ অভিনয় করেছেন শতাধিক নাটকে। ‘৪২০’, ‘গ্র্যাজুয়েট’, ‘পুতুল খেলা’, ‘মুকিম ব্রাদার্স’ উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক। ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ও ‘টেলিভিশন’- এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। খুব শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে আরেফিন শুভর বিপরীতে সিনেমা ‘অস্তিত্ব’। সিনেমায় একটি গানে প্লেব্যাকও করেছেন। চলতি বছর আরো মুক্তি পাবে শাকিব খানের বিপরীতে 'মেন্টাল'।

জিনাত সানু স্বাগতা

তিন ভাইবোন মিলে ব্যান্ড ‘মহাকাল’ গড়ে তুলেছিলেন, কিন্তু অভিনয়ের ব্যাস্ততায় তার গান গাওয়ায় ভাটা পড়েছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিজয়ী এই শিল্পীই এখন ‘ধন্যি মেয়ে’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। মান্নার বিপরীতে সিনেমায় অভিষেক হয় তার। সিনেমার নাম ‘শত্রু শত্রু খেলা’। এরপর অভিনয় করেছেন ‘অশান্ত মন’, ‘কোটি টাকার ফকির’, ‘সূচনা রেখা’ সিনেমায়। ‘সাতকাহন’, ‘রেডিও চকোলেট’, ‘কলেজ রোড’, ‘নোঙর’, ‘সুখপাখির আগুন ডানা’- প্রচারিত জনপ্রিয় নাটক। উপস্থাপনাও করেন নিয়মিত।

রাহুল আনন্দ

জলের গানের রাহুলই মঞ্চের রাহুল। নাট্যশিল্পী হিসেবে প্রাচ্যনাটের হয়ে নিয়মিত মঞ্চে তার পদচারণা। সংগীতচর্চার পাশাপাশি নাট্যচর্চা করেন সমানতালে। মঞ্চে অভিনয়, সংগীত পরিচালনা ও পরিবেশনা - একইসঙ্গে করেন তিনি, দিয়েছেন নির্দেশনা। ছোট পর্দায়ও মাঝে মাঝেই তাকে দেখা যায়। অভিনয় করেছেন টোকন ঠাকুরের ‘ব্ল্যাকআউট’ ও আফসানা মিমির ‘রান’ সিনেমায়।

 

জন কবীর

ব্ল্যাক ব্যান্ডের এই সদস্যেরও অভিনয়ে অভিষেক হয় আফসানা মিমির ‘অফবিট’-এর মাধ্যমে। এপর ‘কাছের মানুষ’, ‘একা অথবা কয়েকজন’-এ অভিনয় করলেন, তবু নিয়মিত হতে সময় নিয়েছেন তিনি। ইদানিং বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রায়ই দেখা মিলছে টিভিতে। অভিনয় করেছেন, ‘অ্যাংগার স্টোরি’, ‘অ্যাডিকশন’, ‘সোলমেট’, ‘আমি আকাশ পাঠাব’, ‘অতঃপর’, ‘ক্রাই বেবি ক্রাই’ নাটকগুলোতে। এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নতুন ব্যান্ড।

ফাতেমা তুজ জোহরা  

সব মিলিয়ে ১১টি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এর প্রথমটি ছিল ১৯৮৪ সালে, খ.ম. হারুনের পরিচালনায় ‘লাগুক দোলা’। তার বিপরীতে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খান। কাজী নজরুল ইসলামের গল্প নিয়ে ‘শিউলি মালা’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের রাত্রি’ নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। সম্প্রতি ‘মাতাল হাওয়া’ নামে আরো একটি নাটকে অভিনয় করলেন। ‘ভালোবাস সাদাকালো’ নামে একটি সিনেমায় কাজ করেছেন।