'সবাই শুধু বাঁকা চোখে দেখতো'

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আজও বিনোদন মাধ্যমে কাজ করার বিষয়টি একটু তীর্যক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। তেমনই এক পরিবারের মেয়ে আইরিন আফরোজ। স্বপ্নের পথে হাঁটতে যার অনেক বাধা ডিঙাতে হয়েছে, সইতে হয়েছে তিরস্কার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 09:13 AM
Updated : 26 Nov 2015, 11:02 AM

মেয়ে মডেল হবে তা মানতে পারেননি বাবা। ভাগ্যিস মা ছিলেন পাশে। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই এগিয়েছেন আইরিন।

শুটিং শেষে ঘরে ফিরতে রাত হতো প্রায়ই। শুটিং ইউনিটের গাড়ি থেকে নামতেই পড়শিরা বাঁকা চোখে তাকাতো। অনেকে কটু মন্তব্য করতেও ছাড়েনি।

“একটি মেয়েকে এত রাতে অচেনা লোকের গাড়ি থেকে নামতে দেখে লোকের চোখ যেন ছানাবড়া হয়ে যেতো! সবার গবেষণার বিষয় ছিল- একটি মেয়ে সকালে বের হয়। সে এত রাত অবধি কি করে। ওয়েস্টার্ন গেটআপে আমায় দেখলে তো ওরা খারাপ কথা বলতো। প্রথমে খুব বিব্রতকর ছিল পরিস্থিতি। পরে ভাবলাম, এদের পাত্তা না দেওয়াই শ্রেয়। এদের কথা ভাবলে তো আর ক্যারিয়ার দাঁড়াবে না। একদিন এদের পাত্তা না দিতে শুরু করলাম। তারপর সব ঠিকঠাক।”

 ছবি: তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

শুরুর সেই পরিস্থিতি কিন্তু বেমালুম বদলে গেছে। আইরিনের ছবি যখন এক মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ডে, পোস্টারে শোভা পেতে লাগল, তখন বদলে গেল পড়শিদের মনোভাব। আইরিনের সাফল্য দেখে বাবাও মেনে নিলেন এক সময়।

ফটোশুট আর টিভিসি করেই দিন কাটছিল। ডাক এলো সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদের কাছ থেকে।  তার‘ভোট ফর ঠোঁট’ শিরোনামের গানের মিউজিক ভিডিওতে পারফর্ম করতে হবে। আইরিন সব শুনে রাজি হলেন। সেই গানটি তার দিকে অনেকেরই নজর ফিরিয়েছে।

নাটকে কাজ করার ইচ্ছা তখনও মাথা চাড়া দেয়নি। কিন্তু হিমেল আশরাফের ‘গপপো’ নাটকটির গল্প ভালো লাগায় অভিনয়ে নামটা লিখিয়ে ফেললেন। 

“অভিনয়ের প্রতি আমার এত ভালোলাগা ছিল না। কিন্তু আমি নাটকটিতে অভিনয় করতে গিয়ে মোটেই অবহেলা করিনি। আমি ক্যামেরা, লাইট ব্যাপারগুলো বুঝতাম। তাই খুব সমস্যা হয়নি। আমার অভিনয় দেখে পরিচালক তো বলেছিলেন, আমি প্রথমবারের মতো অভিনয় করছি, তা নাকি তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।”

ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার পেছনে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অবদান স্বীকার করলেন অকপটে। ফারুকীর পরিচালনায় ‘মাই ক্যাশ’ বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। সেই সময় 'ব্যাচেলর' নাকি বলেছিলেন, “তোমার তো এক্সপ্রেশন অনেক ভালো। তুমি অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে ওঠো।”

সেই বিজ্ঞাপনের পর অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে লাগলেন। ইমরাউল রাফাতের ধারাবাহিক নাটক ‘কলিংবেল’-এ অভিনয় করছেন এখন।

 ছবি: তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রেদওয়ান রণির ‘ঝালমুড়ি’ ধারাবাহিকের কথা উঠতেই মন খারাপ হয়ে গেল আইরিনের। প্রিয় সহ-অভিনেতা সায়েম সাদাতের অকাল মৃত্যুতে ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি।

“নাটকে আমার বিপরীতেই অভিনয় করছিল সায়েম। আমাদের সবার অনুরোধ ছিল, সায়েমের চরিত্রে অন্য কেউ অভিনয় করবে না। পরিচালক সেই অনুরোধ রেখেছেন। সেই চরিত্রের শূন্যতা খুব অনুভব করি।”

আইরিন এখন আরো অভিনয় করছেন ‘লেকড্রাইভ লেন’ ধারাবাহিকে।

বললেন, “অভিনয় শেখার আসলে কখনো শেষ হয় না। প্রতিটি নাটক বা পর্ব করার পর মনে হয়, ইশ আর একটু যদি মনিটর দেখতাম, তাহলে হয়তো অন্যরকমভাবে করতে পারতাম। বোধহয় সেটাই ভালো হতো। আমাকে আরো অনেক শিখতে হবে। এখন নিজেকে ঝালাই করছি। আমি তো বলবো, এখনো অভিনয়ের অনেক কিছু পারি না আমি।”

সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করলেও গৎবাধা বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিনয় করতে চাইছেন না তিনি।

“আমি বলছি না যে, বাণিজ্যিক ছবিতে আমি কাজ করবো না। যদি সেটা বাস্তবসম্মত বাণিজ্যিক ছবি হয়, আমি অবশ্যই করবো। তবে সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য আমাকে আরো শিখতে হবে। পাকাপোক্ত হতে হবে। তবে কি, ফারুকী ভাই (নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) যদি কোনো সিনেমার অফার নিয়ে আসেন এখন, আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাব।”

“আজ থেকে দশ বছর পর আমি এমন একটা অবস্থানে যেতে চাই যেখানে এখন জয়া আহসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, তারিন জাহানের মতো অভিনেত্রীরা রয়েছেন। দর্শক তখন অভিনেত্রী বলতে আইরিনকে চিনবে। আমি আমার অভিনয়ে দর্শকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিতে চাই।”