সম্প্রতি 'গ্যাংস্টার রিটার্নস' নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন অপূর্ব আর পিয়া ।
গ্লিট্জ: শুরুতেই দুজনার চরিত্র নিয়ে জানতে চাই।
অপূর্ব: গ্যাংস্টারের প্রকৃত নাম শাওন। এক দুর্ঘটনার পর হঠাৎ বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। সমাজের নানা চাপে শাওন জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতে, হয়ে ওঠে গ্যাংস্টার। প্রচণ্ড একরোখা চরিত্র, লক্ষ্যে অবিচল, উদ্দেশ্য হাসিল করে তবেই ক্ষান্ত হয়। তবে এক পর্যায়ে এই চরিত্রে আসে বড় এক পরিবর্তন। তখনই ঘুরবে সিনেমার গল্প। চরিত্রটির অনেকগুলো দিক আছে। বাকি গল্প না হয়, বড় পর্দার জন্য তোলা রইল।
পিয়া: আমি করছি শিনা চরিত্রটি। শাওনের মতো শিনারও একটি কষ্টের অতীত থাকে। সে যে সমাজে বাস করে তাতে সমাজের এক গল্প লুকিয়ে আছে। শিনাও একদিন শাওনের সঙ্গে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সে জানে, শাওনের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই্। তবুও সে শাওনের জীবনের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়ে ওতপ্রোতভাবে।
গ্লিটজ: বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আপনারা বলেছেন, চরিত্র আর গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুবই খুঁতখুঁতে, খুব সতর্ক থাকেন। এ সিনেমার গল্পে কি এমন ভিন্নতা ছিল যে রাজি হয়ে গেলেন?
পিয়া: আমি আগে বলি। আশিকুর রহমানকে কিন্তু আমি চিনতাম না। আশিক ভাই যখন গল্প নিয়ে আসলেন, আমি গল্পটি পড়ে ফেললাম। আমার ভালো লাগলো। মনে হলো, সিনেমার বানানোর জন্যই গল্পটি লেখা হয়নি, এই গল্পটি বলার জন্যই সিনেমা বানানো উচিত। আমার চরিত্রটি ভালো লেগেছে। আর জানলাম অপূর্ব ভাই সিনেমাতে প্রধান চরিত্রে কাজ করবেন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, সিনেমাতে অভিনয় করতে তিনি এমনিতেই রাজি হননি।
অপূর্ব: গল্পের মৌলিকত্বই টেনেছে আমাকে। আমি হলফ করে বলতে পারি, এ গল্পটি কোনোভাবেই কোনো ভিনদেশী সিনেমার নকল নয়। আমি প্রচুর সিনেমা দেখি। কোথাও নকল হলে কিন্তু আমি ঠিক ধরে ফেলতাম। আমার সততার ধরন একটু ভিন্ন। আমি যা বলি, সরাসরি বলে ফেলি। আশিক যদি নকল গল্প লিখত, তবে আমি তাকে ধরিয়ে দিতাম শুরুতে। এই গল্পে অনেক উত্থান-পতন আছে, রয়েছে টুইস্টের পর টুইস্ট। দর্শক প্রতিটি সিকোয়েন্সে অপেক্ষা করবে, পরবর্তী সিকোয়েন্সে কি হবে। টানটান উত্তেজনায় ঠাসা এই গল্পের অফার কি করে ফেরাই বলুন তো !
গ্লিটজ : অপূর্ব, আপনি এত জোর গলায় বলছেন কি করে যে সিনেমাটি নকল নয়। আজকাল তো সিনেমা মুক্তির পর দেখা যায়, গল্প নকল না হলেও সিকোয়েন্সগুলো কোনো না কোনো বিদেশী সিনেমা থেকে কেটে এনে জোড়া দেয়া হয়েছে...
অপূর্ব: দেখুন, রোমিও-জুলিয়েটের কাহিনি কিন্তু অনেকভাবেই চলচ্চিত্রে এসেছে। কখনো প্রেমে সমাপ্তি, কখনো আবার করুণ কাহিনিতে সমাপ্তি। এখন কথা হচ্ছে, কোন পরিচালক কিভাবে উপস্থাপন করবেন। আমি প্রচুর সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আশিক নকল কিছু করেনি। দর্শক পর্দায় দেখবে, ভিন্ন রকম এক গল্প। এ গল্প বলার ধরনই যে একেবারে আলাদা।
গ্লিটজ: আসা যাক, সিনেমার গল্পে। সিনেমার শুটিংয়ে পরিচালক আশিককে আপনারা কেমন দেখলেন? দুজনেই তো প্রথমবারের মতো কাজ করলেন আশিকের সঙ্গে।
পিয়া : আমাদের শুটিংয়ে ভীষণ মজা করেছি আমরা। সবচেয়ে বড় কথা কি, আমাদের ইউনিটে অনেক সিনিয়র জুনিয়র আছেন। কিন্তু কারো মধ্যে সবজান্তা ভাবটা একেবারেই ছিল না। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করেছে। পরিচালক থেকে প্রোডাকশন বয় - সবার কথাই আমরা সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। আমি কোনো সিকোয়েন্স বুঝতে না পারলে প্রত্যেকে আমাকে যে সহযোগিতা করেছে, তা অভুতপূর্ব। সত্যি অন্যরকম এক ইউনিটের সঙ্গে কাজ করেছি আমি।
অপূর্ব: আমি আশিকের চেয়ে সিনিয়র, তাই বলে কিন্তু তাকে মোটেই চাপে রাখিনি। আমরা দুজন দুজনকে বশে এনে ফেলেছিলাম। দুজনেই অভিনয়ের অভিজ্ঞতা, নির্মাণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। দুজনেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম, সেরা কাজটি যেন বের করতে পারি। কে সুপারস্টার, কে বড় অভিনেতা এসব বিষয় কিন্তু কাজ করেনি।
আমি একটু ইউনিটের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমাদের কোনো সিকোয়েন্স হয়তো পরিচালক, ক্যামেরা পার্সন সবাই ওকে করেছি, হঠাৎ প্রোডাকশনের এক ছেলে বলে বসলো, আচ্ছা অপূর্ব ভাই ওই শটটা আরেকটু ওভাবে দিলে হয় কী? আমরা কিন্তু তার সেই কথাকে গুরুত্ব দিয়েছি। তার কথামতো আবার শট দিয়েছি। তারপর আশিক ভালো শটটা সম্পাদনায় গিয়ে নির্বাচন করে নেবে।
গ্লিটজ: অপূর্ব বলছিলেন, সিনেমায় প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে। এই অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর ঝুঁকি নিয়েছেন আপনি। সেসব অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করেন..
অপূর্ব : সিনেমাতে প্রচুর তাড়া করার সিকোয়েন্স আছে, মারামারির দৃশ্য তো আছেই। শুটিং করতে করতে এক সময় আমার মাসল পুল করেছিল, পা কেটে রক্ত বের হয়েছিল। কিন্তু আমি থামিনি। কোনো ডামি ব্যবহার করিনি কিন্তু। সে অবস্থাতেই আমি শট দিয়েছি। শট ওকে না হলে আবারও শট দিয়েছি। আমার ইনজুরি নিয়ে আশিক কিন্তু খুব চিন্তায় ছিল।
পিয়া : আমরা যে টানা ১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি, সে গল্পটি বলেন। আমরা মাত্র দুই-তিন ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছি। ভালো কিছু করতে গিয়ে আমাদের সত্যিই খুব কষ্ট করতে হয়েছে।
গ্লিট্জ : পিয়ার কাছে প্রশ্ন। সিনেমার ‘তুমি আজ হাত ধরো’ গানটির মতো রোমান্টিক দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করতে গিয়ে বিড়ম্বনা হয়নি তো, আপনানা দুজনই তো বিবাহিত...
পিয়া : জানতাম,এই প্রশ্নটা করবেন! হ্যাঁ, অপূর্ব ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে শুরুতে একটু আড়ষ্ট ছিলাম। তবে আস্তে আস্তে সেই আড়ষ্টতা কেটে গিয়েছিল।
অপূর্ব : আমারও শুরুতেই কেমন লাগছিল। আমি ছোটবেলা থেকে নাচ-গান থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু সেই আমাকেই কি না রোমান্টিক গানের সঙ্গে নাচতে হবে, কী ব্যাপার বলুন তো ! নাটকে কিন্তু এমন ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করেছি, কিন্তু তখন কিছু মনে হয়নি। সিনেমা বলেই কি না আমার আরো বেশি আড়ষ্ট লাগছিল। তবে আমার আড়ষ্টতা কিন্তু বেশিক্ষণ থাকেনি। অপেক্ষা করতে হয়েছে, পিয়া ম্যাডামের আড়ষ্টতা কখন ভাঙে।
আসলে গানটি কিন্তু সেভাবে কিছুই হয়নি। তেমন কোনো ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছিল না। আমরা দুজনেই চেষ্টা করেছি, পর্দায় দুজনার রসায়নকে তুলে ধরতে।
গ্লিটজ: নাটকে অভিনয়ের কোনো স্টক মেমোরি কি সিনেমায় কাজ করেছে?
অপূর্ব: আমি খুব ইনস্ট্যান্ট রিঅ্যাক্ট করতে পারি। সিকোয়েন্স পড়ার পর আমার মধ্যে একটা ফিলিংস কাজ করে। তখন আমি সেই চরিত্রে ঢুকে পড়ি। যখন যে চরিত্রে থাকি, সে চরিত্রটি হয়ে উঠি আমি।
পিয়া: সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের চেষ্টা। আমরা যে মাধ্যমেই কাজ করি না কেন, আমরা কিন্তু শতভাগ চেষ্টার ত্রুটি রাখি না। তবে আমারও কোনো স্টক মেমোরি কাজ করেনি। আশিক ভাই যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি সেভাবেই কাজ করেছি।
গ্লিটজ : অপূর্বের কাছে প্রশ্ন, এর আগে ছোট পর্দা থেকে নীরব, ইমনরা চলচ্চিত্রে গিয়ে কিন্তু থিতু হতে পারেননি। ইমন সম্প্রতি ছোটপর্দায় ফিরেছেন। আপনি যদি সফল না হন প্রথম চলচ্চিত্রে, তবে কি চলচ্চিত্র ছেড়ে দেবেন?
অপূর্ব : দেখুন, প্রতিটি অভিনয়শিল্পীর কিন্তু স্বপ্ন থাকে সে চলচ্চিত্রে অভিনয় করবে। আমারও তাই। আমি ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি। ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ যদি সফল না হয়, তবে পরের ভালো গল্পটির জন্য আমি অপেক্ষা করবো। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি আছি। প্রথমে সফলতার মুখ না দেখলেই যে হতাশ হয়ে পড়বো, আমি কিন্তু তেমন কেউ নই।
গ্লিটজ : ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ এর সফলতা নিয়ে কি ভাবছেন আপনারা ?
অপূর্ব : কোনো চলচ্চিত্রের সফলতা, ব্যর্থতা কিন্তু একান্তই দর্শকের ওপর নির্ভর করে। তারা চাইলেই যে কোনো চলচ্চিত্রের গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবিটির কথাই ভাবুন না। প্রথম চারদিন তো হলে দর্শকই যায়নি। কিন্তু চারদিন যেতেই সে ছবির চাহিদা কেবল বাড়তেই লাগল। ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর ভাগ্যও না হয়, দর্শকের হাতেই ছেড়ে দিলাম। আমরা বিশ্বাস করি, সবার উপরে দর্শক।