অনুপমের গানে অনুপম সন্ধ্যা

দুই বাংলার মধ্যে কোনো তফাৎ খুঁজে পান না পশ্চিমবঙ্গের গায়ক অনুপম রায়। আর বাংলাদেশের মানুষও তার সংগীতকে গ্রহণ করেছে আন্তরিকভাবেই। আর তাই বার বার ফিরে আসেন বাংলাদেশে। ২৩ নভেম্বর আরো একবার বাংলাদেশের সংগীতানুরাগীদের তৃপ্ত করলেন সুরের স্বাদে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 07:08 AM
Updated : 24 Nov 2015, 07:14 AM

সোমবার ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক সম্মেলন কেন্দ্রে অন্তর শোবিজ আয়োজিত ‘দুই বাংলার গান’শীর্ষক আয়োজনে অনুপমকে মঞ্চ ভাগ করে নিতে হয়েছে বাংলাদেশের ন্যানসি ও পারভেজের সঙ্গে।

উৎসব শুরু হওয়ার কথা সন্ধ্যা সাতটায়, কিন্তু তা শুরু হলো রাত সোয়া আটটায়।

আয়োজনের শুরুতেই মঞ্চে এলেন পারভেজ। শুরুতেই জানালেন, তিনি গাইবেন তার ভালো লাগার সব গান।‘যাবি যদি যা চলে’ গানটি দিয়ে শুরু করলেন।  প্রথম মিক্সড অ্যালবামে গাওয়া ‘জীবন হারিয়ে যায়’ গানটি  গাইতে গাইতে সংগীতায়োজক হৃদয় খানের কথা বলতে ভুললেন না।

গান থামিয়ে হঠাৎ দর্শকের উদ্দেশ্যে পারভেজের প্রশ্ন, ‘আপনারা প্রেম করেছেন কজনে?’ এরপর গাইতে শুরু করলেন ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা’। গাইতে গাইতেই পারভেজ বললেন, তার প্রিয় গায়ক নচিকেতা। তার স্মরণেই গাইলেন, ‘যখন আমার গানের পাখি’, 'একদিন স্বপ্নের দিন’। নিজের একক অ্যালবাম ‘পথ’-এর টাইটেল ট্র্যাক গেয়ে শেষ করলেন তার পরিবেশনা।

ক্ষণিকের বিরতির পর মঞ্চে এলেন শিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ন্যানসি শুরুতেই গাইলেন তাকে আলোচনায় নিয়ে আসা ‘পৃথিবীর যত সুখ যত ভালোবাসা’ গানটি। এরপর একে একে গাইলেন, ‘বলে তো দিয়েছি হৃদয়ের কথা’, ‘দ্বিধা’, ‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই’।

হেমন্তের সন্ধ্যা গড়িয়ে তখন রাত। সম্মেলন কেন্দ্রে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মুরাদ-তানিয়ারা স্বাগত জানাতেই মঞ্চের ওপাড় থেকে ভেসে এলো, “আমরা এসেছি অনেক ভালোবাসা নিয়ে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে, আপনাদের জন্যই নিজেদের উজার করে দিতে, ঢাকা আপনারা প্রস্তুত তো?”

‘আমি আজকাল ভালো আছি’ গানটি দিয়ে পরিবেশনা শুরু করলেন অনুপম। হেমন্তের রাত তখন বিচ্ছেদের সুরেই তন্ময়, অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এল দর্শক সারিতে। ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ অ্যালবামের গানটি পরিবেশনার পর অনুপম বললেন, “রাস্তা চলতে চলতে আমরা আবারও আপনাদের কাছে ফিরে এসেছি। আপনাদের ডাকে আমরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।”

অনুপমের পরের পরিবেশনা ‘অটোগ্রাফ’ সিনেমার ‘বেঁচে থাকার গান’। গানটি গাইবার আগে অনুপম বললেন,“আমরা প্রতিনিয়ত লড়াই করছি, সে লড়াই বেঁচে থাকার- সে লড়াই শিল্পের।” পরের গানটি ‘চলো পাল্টাই’ছবির ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’।

অনুপমের পরিবেশনার ফাঁকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ মঞ্চে  এসে বিশেষ সম্মাননা জানালেন অনুপমকে।  অনুপমের গানের পোস্ট মর্ডানিজম, মেটা মর্ডানিজমের কথা উল্লেখ করে বেনজির বলেন, “আমাদের যখন খুব ধকল গেছে, অনুপমের গান আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।”

সম্প্রতি হিন্দি সিনেমা ‘পিকু’র সংগীত পরিচালনা করে প্রশংসিত হয়েছেন অনুপম। ‘জার্নি’ গানটি পরিবেশনার আগে তিনি বললেন, “আমরা যেহেতু বাংলাতেই গান করি, তাই খুব কায়দা করে হিন্দি গানেও বাংলা শব্দ-বাংলা বাক্য ঢুকিয়ে দিয়েছি।”

অনুপম তখন থামলেন ক্ষণিকের জন্য। দর্শকের উদ্দেশ্যে বললেন , “কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।”

তরুণীদের দল থেকে কেউ বলে উঠলেন, “দাদা কি বিয়ে করেছেন?” লাজুক অনুপম বললেন,“মানুষ তো বিয়ে করেই থাকে….”

অনুপমের পরের পরিবেশনা ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ অ্যালবামের ‘অদ্ভুত মুগ্ধতা’। তারপর গাইলেন ‘চতুস্কোণ’ সিনেমার‘বসন্ত এসে গেছে’, ‘হেমলক সোসাইটি’র ‘এখন অনেক রাত’, ‘যমের রাজা দিল বর’ সিনেমার ‘এই শোনো’গানগুলো।

তারপর আবার শোনালেন ‘চতুস্কোণ’-এর ‘বোবা টানেল’, ‘পিকু’র ‘বেজুবা'।

‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমার গান ‘একবার বল নেই তোর কেউ নেই’ গানটি শুরু করতেই দর্শকরা একযোগে গেয়ে উঠলেন অনুপমের সঙ্গে। ‘অটোগ্রাফ’  সিনেমার ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটি পরিবেশনার মাধ্যমেই পর্দা নেমে গেল দুই বাংলার গানের উৎসবের।

ছবি—রেজাউল করিম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম