টালিগঞ্জ তারকাদের গোপন দুঃখ

টালিগঞ্জের নামজাদা তারকা তারা। সাড়া জাগানো বহু চরিত্র আর নামী পরিচালকের অধীনে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ইতোমধ্যেই। ঝুলিতে একাধিক পুরস্কারও পুরেছেন কেউ কেউ। তবু অনুশোচনায় ভোগেন, গোপন দুঃখে কাতর হন। কিন্তু কেন?

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 06:25 AM
Updated : 24 Nov 2015, 06:50 AM

আবির চট্টোপাধ্যায়

রাজ চক্রবর্তীর ধারাবাহিক ‘প্রলয় আসছে’ তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আবিরকে দেখে প্রসংশায় পঞ্চমুখ সবাই। প্রলয় নামটির সঙ্গে আবিরও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন বেশ ভালোভাবেই। সে সময় ‘প্রলয়’ নামে পূণ্যদৈর্ঘ্য সিনেমায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বরুণ বিশ্বাস চরিত্রটি করার প্রস্তাব করেন প্রথমে আবিরকেই দিয়েছিলেন রাজ। আবির সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, কারণ সবে বাবা হয়েছেন তিনি। সদ্য ভূমিষ্ট সন্তান এবং তার মাকে ফেলে মাসাধিককাল আউটডোর শুটিং করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে সিনেমাটি দেখে এখনও আফসোস করেন আবির।

“আমি যখন সিনেমাটি দেখলাম, আমার খুব খারাপ লেগেছিল যে আমি এমন কাজের অংশ হতে পারলাম না।”

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়

প্রসেনজিৎ তখন দক্ষিণী সিনেমায় ব্যস্ত, একদিন প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ফোন এলো তার কাছে। ‘দহন’ সিনেমার জন্য মাসের ১৩ তারিখ থেকে ডেইট চাইলেন, প্রসেনজিতের পক্ষে সম্ভব ছিল না সেটা। দক্ষিণে তিন-চার মাসের জন্য তাদের আগাম ডেইট দেওয়া থাকে। তাই শুটিং পেছানোর কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন।

“ধারণা করি, সেটা সম্ভব ছিল না। এমনকি আমি জানতামও না, কোন চরিত্রটি ভেবেছিলেন আমার জন্য। এখনো, যখনই ‘দহন’দেখি, এমন খ্যাতিমান পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে না পারায় খুব দুঃখ হয়।”

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

‘উত্তরা’ সিনেমায় বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত নিতে চেয়েছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। হরনাথ চক্রবর্তী, সুজিত গুহ প্রমুখ পরিচালকের বাণিজ্যিক সিনেমার কাজে তখন দারুণ ব্যস্ত ঋতু। এমনকি বাংলদেশি সিনেমায়ও কাজ করছেন চুটিয়ে। তাই কোনোভাবেই সময় বের করা গেলো না।

“যখন সিনেমাটা দেখলাম, এমন লাইফটাইম চরিত্র করতে না পারার দুঃখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমার আরো দুঃখ হয় ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দোসর’ এবং ‘চোখের বালি’ করতে পারিনি সেজন্য। একই অনুভূতি গৌতম হালদারের ‘ভালো থেকো’র জন্য। সে সময় আমি তরুণ মজুমদারের সিনেমায় কাজ করছি এবং এর জন্য এখনো অনুশোচনায় ভুগি।”

শ্রাবন্তী

খবরটা আর চাপা থাকেনি, দিনের আলো ফুটতেই সবাই জেনে গেলো ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ সিনেমায় সোহম চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। কারণ একদিকে রাবি কিনাগি অন্যদিকে রাজ চক্রবর্তী; পাল্লাটা ঝুঁকেছিল রবী কিনাগির দিকেই। পরে সে চরিত্রটি চলে যায় মিমির কাছে।

“সিনেমাটা দেখার পর অশ্রুভরা চোখে তাকালাম রাজদার দিকে, ভবিষ্যতে আমাকে নেবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করলেন। এরপর ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর বিপরীতে আমাকে প্রস্তাব করা হলো। কিন্তু আবারও, আমি তখন রবি কিনাগি, জিৎ-এর সঙ্গে ‘দিওয়ানা’র শুটিং করছি। যদিও ওই চরিত্র এবং চিত্রনাট্য দুটোই আমার খুব ভালো লেগেছিল, কিন্তু প্রস্তাবটা ফেরাতেই হয়েছে।”

রুদ্রনীল ঘোষ

‘আনওয়ার কা আজাব কিসসা’য় আনওয়ার চরিত্রের জন্য বুদ্ধদেব দাসগুপ্তর কাছ থেকে অগ্রীমও পেয়েছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। পরে জানা গেলো ‘কাহানি’র সাফল্যে ভাসমান নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির কাছে চলে গেছে চরিত্রটা।

“আমাকে বলা হলো, আমি ‘ওভার-এক্সপোজড’। ভাবলাম, আমি যদি ওভার-এক্সপোজডই হই তাহলে আমাকে কাস্ট করলো কেন কিংবা নাওয়াজের ‘কাহানি’ সাফল্যের পরই কি আমি ওভার-এক্সপোজড হলাম? সিনেমায় একটা সিন ছিল, মাতাল আনওয়ার তার কুকুরের সঙ্গে জীবন সম্পর্কে কথা বলছে। যে কোনো শিল্পীর জন্যই এটা একটা বিশেষ মুহূর্ত। আমার মনে হয় না চরিত্রটার সঙ্গে নাওয়াজের চেয়ে আমি কম-বেশি অবিচার করতাম। আমার খুবই অফসোস হয়, এমন একটা চরিত্র আমার হাত ছেড়ে বেরিয়ে গেলো যেটা আমি খুব করে করতে চাইছিলাম।”

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়

ঋতুপর্ণার মতোই রচনা বন্দে্যাপাধ্যায়ও 'উত্তরা'য় কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। একই পরিচালকের ট্রিলজি করার সুযোগ অভিনেত্রীর জন্য, কিন্তু অন্য কাজে অঙ্গীকার করে ফেলেছেন ততদিনে। ফলে রচনার আর করা হয়নি ‘উত্তরা’।

“‘আমি ইয়াসিন আর আমার মধুবালা’ এবং ‘স্বপ্নের দিন’ সিনেমায় তার সঙ্গে কাজ করা, একজন অভিনেতা হিসেবে আমার জন্য বিশাল অভিজ্ঞতার, সেজন্য আমি ‘উত্তরা’রও অংশ হতে চেয়েছিলাম। এর জন্য শিডিউল ঠিক করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কাজ করলোনা কোনো কিছু।”